হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে বাবুনের বাড়ির দখল নিল পুলিশ

সরকারি জমি থেকে জবরদখল উচ্ছেদের প্রসঙ্গে কদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্পষ্ট বার্তা দিতে দেখা গিয়েছিল কাউকেই রেয়াত নয়। কোথাও জবরদখল থাকলে পুলিশ গিয়ে তুলে দেবে। দরকার হলে আমার বাড়ি থেকে তা শুরু হোক। এই বার্তা ছিল প্রতীকী। পুলিশ ও প্রশাসন মুখ্যমন্ত্রীর তরফে এই বরাভয় পেয়ে বেআইনি দখল উচ্ছেদে নামে। আর এই বার্তা ঠিক কতটা কঠোর ছিল তা মালুম হল হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের এক ঘটনায়। ওই রাস্তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ক্লাবঘর ও তার পিছনে সরু দোতলা বাড়ি রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে নজরে আসে ওই বাড়ির সামনে পুলিশ চেয়ার পেতে বসে। ক্লাব ঘরের মধ্যে জিনিসপত্র সাজানো রয়েছে ঠিকই। স্থানীয় সূত্রে খবর, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে বাবুনের পৃষ্ঠপোষকতায় যে ক্লাবঘর রয়েছে সেই ক্লাবটির নাম ‘কালীঘাট স্পোর্টস লাভার্স অ্যাসোসিয়েশন’। তার পিছনে একেবারে গায়ে লাগোয়া একটা দোতলা বাড়ি রয়েছে। তবে সেটিতে বাবুন থাকেন না। তিনি থাকেন কাছেই অন্য একটি বাড়িতে। ক্লাবের পিছনের বাড়িটা বেআইনিভাবে দখল করা জমিতে তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে এবার পিছনের দোতলা বাড়িতে একটা কাগজ সেঁটে দেওয়া হয়েছে। তাতে লেখা ‘পুলিশ ক্যাম্প!’ ওই পুলিশ ক্যাম্পে বসে থাকা পুলিশ কর্মীদের এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা অবশ্য কোনও ব্যাখ্যা দিতে চাননি।

এদিকে এই ঘটনা আলোড়ন ফেলেছে তৃণমূল শিবিরে। পর্যবেক্ষকদের একাংশের কথায়, মুখ্যমন্ত্রী খোলাখুলিই বলেছিলেন, তৃণমূলের এক শ্রেণির নেতা টাকা নিয়ে লোক বসাচ্ছেন। বাবুনের বাড়িকে পুলিশ ক্যাম্প বানিয়ে দেওয়া তাঁদের জন্যও এক চরম বার্তা হিসাবে দেখা যেতে পারে। নিজের ভাইকে দিদি যখন রেয়াত করছেন না, তখন বাকিদের সাবধান হওয়ার সময় এসেছে।

এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ খোলেননি। শুধু জানিয়েছেন, স্ত্রী অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি। এখন এ নিয়ে কিছু বলবেন না তিনি। প্রসঙ্গত, বাবুনের ব্যাপারে লোকসভা ভোটের আগে থেকেই রেগে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়া লোকসভায় প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ ছিল বাবুনের। কিন্তু প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে এবারও প্রার্থী করায় প্রবল অসন্তোষ জানিয়েছিলেন বাবুন। বলেছিলেন, তিনি নির্দল প্রার্থী হিসাবে হাওড়ায় লড়বেন। বাবুন সে কথা ঘোষণা করতেই সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নিজে থেকেই বলেন, ‘আমি পরিবারতন্ত্র করি না। যে যেখানে ইচ্ছে ভোটে লড়তে পারে। আমার কিছু যায় আসে না। ওঁর সঙ্গে আমাদের পরিবারের আর কোনও কোনও যোগ নেই।’ সঙ্গে এও বলেছিলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ছোট ভাই-বোনদের মানুষ করেছি আমি। কিন্তু ওকে মানুষ করতে পারিনি। আমার পরিবারে ৩২ জন সদস্য আছেন। সবাই ওর উপর ক্ষুব্ধ, প্রত্যেকবার ভোটের সময় অশান্তি করে। বড় হলে অনেকের লোভ বেড়ে যায়। আজ থেকে আমি শুধু নয়, মা মাটি মানুষের সঙ্গে ওর সম্পর্ক চলে গেল। ভাই বলে পরিচয় দেব না। নো রিলেশন, সব সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − eight =