দুর্গাপুরের মঞ্চে দাঁড়িয়ে আরজি কর থেকে কসবা ধর্ষণ নিয়ে সরব হতে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে । তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে বঙ্গে শিক্ষা দুর্নীতির কথা । বাঙালি নির্যাতন প্রসঙ্গে বাম–কংগ্রেস ও তৃণমূলকে এক যোগে কটাক্ষ করেন তিনি । সেই সমস্ত বক্তব্যকে হাতিয়ার করে প্রধানমন্ত্রীকে বিদ্ধ করলেন রাজ্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার ৷
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের প্রশ্ন, ‘বাংলা–সহ দেশজুড়ে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে কংগ্রেস সরব ও প্রতিবাদে মুখর হলেও প্রধানমন্ত্রী বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনায় চুপ কেন ? নরেন্দ্র মোদি তো কেবল বিজেপির প্রধানমন্ত্রী নন ৷ তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাহলে হথরাস, উন্নাও কিংবা সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ওড়িশার ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নীরব কেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।
একইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকা সিবিআই ও ইডি কেন আজ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির কোনও কিনারা করতে পারল না কেন সে ব্যাপারেও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি াজনতে চান, কেন সিবিআই এখনও পর্যন্ত যোগ্য–অযোগ্য শিক্ষকদের চিহ্নিত করতে পারল না বা কেনই বা সিবিআই–এর অপদার্থতার জন্য আরজি কর কাণ্ডের নির্যাতিতার পরিবারও আজও সুবিচার পেলেন না সে ব্যাপারেও।
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিরুদ্ধে কংগ্রেস পথে নামে বলে জানান প্রদেশ সভাপতি । আর এখানেই তাঁর অভিযোগ, বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, বিহারের জঙ্গলরাজ নিয়ে মোদিজি কোনও কথা বলেন না। বঙ্গে আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে শুভঙ্করবাবুর বক্তব্য, ‘নির্বাচন আসলেই মোদিজির বাংলার প্রতি দরদ উথলে ওঠে । কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের উপর যে অত্যাচার করা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজধর্ম পালন না–করে কংগ্রেসকে দোষারোপ করতে ব্যস্ত।’
এর পাশাপাশি শুভঙ্কর এও দাবি করেন, ’২০১৪ সালে মোদিজিকে বিশ্বাস করে দেশের মানুষ ঠকেছেন । নোটবন্দির পর ৫০ দিন সময়ও চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই অপরিকল্পিত নোটবন্দি দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্রের কোমর ভেঙে দিয়েছে । তারপর অপরিকল্পিত জিএসটি এবং অপরিকল্পিত লক ডাউনের দগদগে ঘা আজও আমাদের সমাজ ও অর্থনীতিতে ছাপ রেখেছে। এই নিয়েও তিনি নীরব।’
সেই সঙ্গে, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে দলিত আদিবাসীদের উপর প্রতিনিয়ত অত্যাচার করা হচ্ছে ৷ অথচ, সেই নিয়েও নীরব রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বলে দাবি অভিযোগ শুভঙ্করের ৷ তাঁর প্রশ্ন, “বিজেপি ও আরএসএস দেশের সংবিধানই বদলে দিতে তৎপর। শুধু তাই নয়, দলের নেতা–মন্ত্রীরা রোজ সংবিধান বদলে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন । এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর অবস্থান কী?’ প্রদেশ সভাপতির আরও প্রশ্ন, ‘বছরে ২ লক্ষ বেকারের গ্যারান্টি চাকরি, প্রত্যেক দেশবাসীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার গ্যারেন্টি আজ কোথায় গেল ?’
পাশাপাশি দুর্নীতি ইস্যুতে প্রদেশ কংগ্রেস নেতার প্রশ্ন, ‘দুর্নীতির প্রশ্নে মোদি নাকি আপোষ করবেন না ! কিন্তু এখনও পর্যন্ত তৃণমূলের যারা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তারা কেউ শাস্তি পেলেন না । বরং সিবিআই এবং ইডি এই সমস্ত দুর্নীতিকে আড়াল করতে সচেষ্ট । আসলে চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতিশ কুমার ক্রাচ সরিয়ে নিলে তখন মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূলকে দরকার হবে । সেকারণেই কী সিবিআই এবং ইডি বাংলার দুর্নীতির তদন্তে এত ঢিলেমি ? প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদি কার ও কিসের ভয়ে এখনও পর্যন্ত একটি সাংবাদিক সম্মেলন করলেন না ?’ এই প্রসঙ্গেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির স্পষ্ট বক্তব্য, ‘এই পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি, রাজ্যকে বাঁচাতে এই তৃণমূল সরকারকে অপসারণের প্রয়োজন রয়েছে ৷ ঠিক তেমনই দেশ বাঁচাতে এই বিজেপি এবং আরএসএস সরকারকে অপসারণ করতে হবে।’