ট্যাংরার হত্য়াকাণ্ডের বিবরণ পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে জানালেন প্রসূন

ট্যাংরার দে পরিবারের এক নাবালিকা ও দুই মহিলা কী ভাবে খুন হয়েছেন তা জানা গেছে দে পরিবারের ছোট ভাই প্রসূনের জবানবন্দিতে, এমনটাই জানাল কলকাতা পুলিশ। একইসঙ্গে কলকাতা পুলিশের তরফের থেকে এও জানানো হয়েছে, জবানবন্দিতে প্রসূন জানিয়েছেন, ঘটনার আগের দিন রাতে অর্থাৎ ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে তিন তলার ঘরে ঘুমের ওষুধ ও প্রেসারের ওষুধ হামান দিস্তায় একসাথে গুঁড়ো করেন প্রণয়। আত্মহত্যার লক্ষ্যে সেইসব ওষুধ পায়েস ও সন্দেশের মধ্যে ভালো করে মিশিয়ে পরিবারের সকলে মিলে খান। কিন্তু পরদিন রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ ঘুম ভেঙে যায় প্রসূনের। ওষুধ কাজ করেনি বুঝতে পেরে স্ত্রীকেও ঘুম থেকে ডেকে তোলেন।

অন্যদিকে ওই নাবালক ও তাঁর বোন নিজেদের ঘরে ঘুমিয়েছিল। তাদের ঘরে গিয়ে দেখে তাঁরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দুই ভাইবোন। তখন প্রসূন গিয়ে দাদা প্রণয় ও তাঁর স্ত্রীকেও ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। এরপর দুই ভাই ও দুই বউ বেডরুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে যান। সেখানে তাঁরা ঠিক করে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরিকল্পনায় যেহেতু কাজ হয়নি তাই এবার হাতের শিরা কেটে নিজেদের শেষ করবেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নাবালিকার পড়ার ঘর থেকে ছুরি নিয়ে আসা হয়। প্রথমেই প্রসূন তাঁর স্ত্রী রোমির হাত কাটতে যান, কিন্তু তাতে আপত্তি জানান তিনি। প্রসূনকে জানান, আগে যদি তাঁদের মৃত্যু হয়, তারপর কোনও কারণে মেয়ে বেঁচে থাকলে, তার পক্ষে বাকি জীবন কাটানো অনেক কষ্টের হবে। তাই আগে বাড়ির বাচ্চাদের খুন করার পর বড়রা নিজেদের শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন।

এরপরই সস্ত্রীক মেয়ের ঘরে যান প্রসূন। মেয়ে ঘুমিয়ে থাকলেও নিজে হাতে তার শিরা কাটতে পারবে না বলেন প্রসূন। তখন স্ত্রীকে নির্দেশ দেন মেয়ের পা চেপে ধরতে। রুমি পা চেপে ধরলে নিজের হাতে মেয়ের মুখে বালিশ চেপে ধরেন প্রসূন। মৃত্যু নিশ্চিত করে। মারা গিয়েছে বোঝার পর মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।

এরপর নিজের বেডরুমে যান প্রসূন। সেখানে যাওয়ার পর মেয়ের জন্য কাঁদতে থাকেন রোমি। সেই অবস্থায় প্রথমে রোমির হাতের শিরা কাটা হয়। কিছু সময় পর প্রসূনকে রোমি বলেন, হাত কেটে কিছু হচ্ছে না। রোমি তখন তার গলা কেটে দিতে বলেন প্রসূনকে। সেইমতো রোমির মুখে বালিশ চেপে ধরে তার গলাও কেটে দেন প্রসূন। কিছু সময় সেখানে বসে থাকে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার অপেক্ষায়।

এরপর দাদা প্রণয়ের বেডরুমে যান প্রসুন। বৌদি সুদেষ্ণাকে বলেন মেয়ে ও বউকে খুন করে এসেছেন তিনি। তখন সুদেষ্ণা গিয়ে ওই নাবালিকা ও রোমির দেহ দেখে আসেন। নিজের ঘরে ফিরে সুদেষ্ণা প্রসূনকে বলেন, রোমির মতোই একইভাবে তাঁকেও মেরে দেওয়ার জন্য। প্রসূন তখন একইভাবে সুদেষ্ণার গলা ছুরি দিয়ে কেটে তাঁকে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই অপেক্ষা করে প্রসূন।

এরপর প্রণয় দে’র ছেলেকে তার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। গায়ে হাত দিয়ে নাবালক ততক্ষণে বুঝতে পেরে যায় বোন আর বেঁচে নেই। এক্ষেত্রেও প্রসূন প্রথমে নাবালকের হাত কেটে দেয়। তারপর গলা কাটার চেষ্টা করলে সে ঘাড় সরিয়ে নেয়। তাতেও ঘাড়ে সামান্য আঘাত লাগে। তখন বাঁচতে চায় বলে কাকার কাছে আর্জি জানায় নাবালক। বলে, সে যে করে হোক বেঁচে থাকবে কিন্তু তাকে যেন না মারা হয়। তখন প্রণয় তার ছেলেকে নিয়ে তিন তলার একটি ঘরে চলে যায়।

দুই বউ ও মেয়েকে খুন করার পর তিন তলার ঘরে গিয়ে রক্তমাখা জামাকাপড় খুলে ফেলেন প্রসূন। এরপর রাতে তারপর দুই ভাই ও ভাইপো মিলে আবার ঘুমের ওষুধ খান। এই চেষ্টাও সফল না হওয়ায় রাতে গাড়ি নিয়ে আত্মহত্যার লক্ষ্যে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। বিভিন্ন রাস্তা ঘুরতে থাকে গাড়ি ধাক্কা মেরে আত্মহত্যার সঠিক জায়গা খুঁজে বার করার জন্য। অবশেষে বাইপাসের ধারে মেট্রোর পিলার চিহ্নিত করার পর সিট বেল্ট খুলে দেয় যাতে এয়ারব্যাগ না খোলে। কিন্তু গাড়ির প্রযুক্তি এমন ছিল যে সিলবেল্ট না থাকলেও গাড়ির এয়ারব্যাগ খুলে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 + 11 =