দেশের প্রতিটি নাগরিকই সমান। প্রত্যেকের সমান অধিকার রয়েছে। ৭৭ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে ভাষণে এমনই জানালেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এপ্রসঙ্গে সমাজের সমস্ত ক্ষেত্রে মহিলাদের ‘এগিয়ে আসা’র এবং ‘প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা’র আহ্বান জানালেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধানের সমানাধিকারের উল্লেখ করে এদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বলেন, ‘প্রত্যেক ভারতীয় সমান নাগরিক। এই দেশে প্রত্যেকের সমান সুযোগ, সমান অধিকার এবং সমান কর্তব্য রয়েছে। জাতি, ধর্ম, ভাষা-সহ সমস্ত পরিচয়ের ঊর্ধ্বে সকলের একটাই পরিচয়, তাঁরা ভারতীয়।’
রাষ্ট্রপতি হিসাবে দ্রৌপদী মুর্মু এদিন দ্বিতীয় ভাষণ দেন। এই ভাষণের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি সমস্ত নাগরিকের সমান অধিকার এবং মহিলাদের ক্ষমতায়নের উপরই জোর দেন। বর্তমানে মহিলারা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, দেশের উন্নয়নে বিশেষ দায়িত্ব পালন করছেন, যা আগে কল্পনা করা যেত না বলেও দাবি রাষ্ট্রপতির। তিনি বলেন, ‘আজ মহিলারা দেশের উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং দেশসেবায় তাঁদের অবদান রাখছেন, যা দেশকে গৌরবান্বিত করে তুলছে। আজ আমাদের মহিলারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেভাবে অংশগ্রহণ করেছেন, সেটা কয়েক দশক আগেও ভাবা যেত না।’
মহিলারা যেমন দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে, তেমনই আর্থিকভাবে তারা অনেকটাই স্বনির্ভর হয়েছে বলেও জানান রাষ্ট্রপতি। একইসঙ্গে তিনি ও জানান, ‘মহিলাদের আর্থিক ক্ষমতায়ন পরিবার ও সমাজে তাদের অবস্থান দৃঢ় করে তোলে।’ মহিলাদের আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে দেশের মহিলা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বলেন, ‘আমি চাই, দেশের মেয়েরা এগিয়ে আসুক।’ এপ্রসঙ্গে সরোজিনী নাইডু, আম্মু স্বামীনাথন, রমা দেবী, অরুণা আসফ-আলি এবং সুচেতা কৃপালিনীর প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি। আবার জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর প্রত্যেক পদক্ষেপে মা কস্তুরবার ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি।
চলতি মাসেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে চন্দ্রযান ৩। ১৪০ কোটি ভারতীয়র সঙ্গে এদেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র সেই সাফল্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। সোমবার নিজেই সেকথা জানালেন তিনি।
এদিন চন্দ্রযান ৩-র প্রসঙ্গ তুলে রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেন, ‘উৎকর্ষের নতুন স্তরে পৌঁছেছে ইসরো। তাঁদের চন্দ্রযান ৩ বর্তমানে চাঁদের কক্ষপথে রয়েছে। চাঁদে নামার থেকে কয়েক কদম দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই নভোযান। সারা দেশের সঙ্গে সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছি।’
এর পাশাপাশি ইসরো-র চন্দ্র অভিযানকে মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে অন্যতম বড় পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। ‘আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অনুসন্ধান ন্যাশনাল রিসার্ট ফাইন্ডেশন তৈরি করছে সরকার। আগামী পাঁচ বছরে এই সংস্থার পিছনে ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে। এই সংস্থা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্রগুলির বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞান ভিত্তিক কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু।
প্রসঙ্গত, এদিনের বক্তৃতায় আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ভারত উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশে পরিণত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়াও কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষা নীতির ভূয়সী প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি। এদিন তিনি বলেন, “২০২০-তে জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু হওয়ার পর থেকেই শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক বদল এসেছে। এর জেরে আগামী দিনে আরও বাড়বে নারী শিক্ষার হার।” এছাড়া পিছিয়ে পড়া অন্ত্যজ শ্রেণির মধ্যেও শিক্ষা ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে দেশের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধির কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু। বলেন, ‘গত এক দশকে বিপুল সংখ্যক মানুষকে দারিদ্র সীমার বাইরে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। আদিবাসী সমাজের উন্নতিতে নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছে সরকার।’ এদিন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেন রাষ্ট্রপতি। আদিবাসীদের ঐতিহ্য বজায় রেখে আধুনিকতা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
এদিনের বক্তৃতায় কৃষক সমাজকে অন্নদাতা বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু। দেশ কখনও কৃষকদের ঋণ ভুলবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। দেশের জিডিপি-র হার বৃদ্ধির পিছনে কৃষকদের বড় ভূমিকা রয়েছে বলেও জানান তিনি। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন ও সংবিধান নিয়েও জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি।