আরামবাগ থেকে নির্বাচনী দামামা বাজিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি

প্রত্যাশিত ভাবে বঙ্গ সফরে এসে ২০২৪-এর নির্বাচনী দামামা বাজিয়েই দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আরামবাগের জনসভা থেকে একের পর এক ইস্যুতে তৃণমূল সরকারের বিদ্ধ করতে দেখা গেল নরেন্দ্র মোদিকে। লোকসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গ সফরে প্রাক ভোট কী কী ‘ইস্যু’ নরেন্দ্র মোদী তুলে ধরবেন সেই দিকেই তাকিয়ে ছিল বঙ্গ রাজনৈতিক মহল। শুরুটা সন্দেশখালি দিয়ে করেছিলেন। এরপরেই তিনি ‘দুর্নীতি’ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।

এই প্রসঙ্গে মোদি প্রথমেই আনলেন পশ্চিমবঙ্গকে অর্থ বরাদ্দের কথা। এই প্রসঙ্গে শাসকদল তৃণমূলকে বিদ্ধ করে তিনি জানালেন, কেন্দ্রের পাঠানো টাকায় বাংলার উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে তৃণমূল সরকার। তৃণমূলকে ‘গরিব বিরোধী’ বলেও কড়া ভাষায় আক্রমণ শানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘গরিব, কৃষক, যুব সম্প্রদায় ও মহিলাদের সশক্তিকরণে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল সরকার।’ এরই পাশাপাশি আরামবাগের সভা থেকে রাজ্যের শাসক শিবিরকে একহাত নিয়ে মোদি এদিন এও বলেন, তৃণমূল মনে করে মোদি তাদের ‘এক নম্বর দুশমন’। এরই রেশ ধরে প্রধানমন্ত্রী এদিন এও বলেন, ‘তৃণমূল চায় কেন্দ্রের যোজনাতেও যাতে লুঠ করতে পারে। কিন্তু মোদি সেটা করতে দেয় না। আর সেই কারণেই মোদিকে তৃণমূল তাদের দুশমন নম্বর ওয়ান মনে করে। এরপরই সমাবেশে উপস্থিত সবার কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জানতে চান, ‘এবার আপনারাই বলুন, তৃণমূলের এই লুঠ কি আমি চলতে দেব? যত গরিবের টাকা লুঠ হয়েছে, সব ফেরত দিতে হবে। এটা মোদির গ্যারান্টি।’

এরই রেশ ধরে আরামবাগের সভা থেকে ‘মোদির গ্যারান্টি’ ভেসে এল। এদিন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে পুর নিয়োগে দুর্নীতি প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন তিনি। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে টাকা উদ্ধার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মোদি বলেন, ‘এত নোট কখনও দেখেছেন সিনেমাতে দেখেছেন।’ এরই রেশ ধরে তিনি এও প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘ মোদির গ্যারেন্টি! লুঠনে ওয়ালোকো লটানা পড়েগা অর্থাৎ যাঁরা লুঠ করেছেন তাঁদের ফেরত দিতে হবে। মোদি ছোড়নে ওয়ালা নেহি হ্যায় অর্থাৎ মোদি কাউকে ছাড়বে না। আমি থামব না। পশ্চিম বাংলার বোন, গরিব, যুবকদের গ্যারেন্টি দিয়েছি।যে গরিবকে লুঠ করেছে তাকে ফেরত দিতেই হবে।’

এখানেই শেষ নয়, বাংলায় কেন্দ্রের কোন কোন প্রকল্প থমকে রয়েছে, তার একটি লম্বা তালিকাও শোনান প্রধানমন্ত্রী। জানান, ঝরিয়া ও রানিগঞ্জের কোলফিল্ডের প্রজেক্ট কেন্দ্রের বিজেপি সরকার প্রায় ৬ বছর আগে শুরু করেছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার সেটাকে এগোতে দিচ্ছে না। শুধু তাই নয়, মোদি এদিন এও জানালেন, ১৮ হাজার কোটি টাকার জগদীশপুর-হলদিয়া, বোকারো-ধামরা পাইপলাইন প্রজেক্টও চার বছর ধরে আটকে আছে। তারকেশ্বর থেকে বিষ্ণুপুরের রেল লাইনের কাজও আটকে আছে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘এসব প্রকল্পগুলি থমকে রয়েছে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা না পাওয়ার জন্য।’ সঙ্গে এও বলেন, ‘হাজার কোটি টাকার এমন আরও অনেক প্রজেক্ট যেগুলির জন্য কেন্দ্র টাকার অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না।’ এছাড়া কেন্দ্রের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পও যে বাংলায় বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, সেই দাবিও করলেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, ‘তৃণমূল সরকার গরিবদের ঘরও বানাতে দিচ্ছে না।’ এই প্রেক্ষিতেই পরিসংখ্যান তুলে ধরে মোদি জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গের গরিব পরিবারগুলির জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ৪৫ লাখ ঘরের অনুমোদন দিয়েছে। তার জন্য ৪২ হাজার কোটি টাকাও ছাড়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাতে রাজ্য সরকার গরিবদের ঘর বানাতে দ্রুত কাজ করছে না। বাধা দিচ্ছে।’

এর পাশাপাশি প্রতিটি ঘরে জল পৌঁছে দেওয়ার যে টার্গেট মোদি সরকার নিয়েছে, সেটাও বাংলায় শ্লথ গতিতে চলছে বলে দাবি প্রধানমন্ত্রীর। বলেন, ‘চার বছরের মধ্যে গোটা দেশে ১১ কোটিরও বেশি নতুন পরিবারকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জলের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেখানে কচ্ছপের গতিতে কাজ করছে। এদের কি ক্ষমা করা যায়?’ এদিন মোদির ভাষণে উঠে আসে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের কথাও। বলেন, ‘গরিব, তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতির বিরোধী তৃণমূল এখানকার পরিবারগুলিকে এর সুবিধা পেতে দেয় না।’

এদিন ইন্ডিয়া জোটকে খোঁচা দিতেও ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বলেন, ‘পটনা, বেঙ্গালুরুতে এঁরা বৈঠক করেছেন। এদিকে কংগ্রেস এখানের মুখ্যমন্ত্রীর থেকে জবাব চাইতে সাহস পায়নি। কংগ্রেস যা বলেছে তা শুনলে চমকে যাবেন। কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন, বাংলাতে এই সমস্ত কিছু চলতেই থাকে।’ লোকসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গে এসে ভোটের আগে সুর বেঁধে দেবেন প্রধানমন্ত্রী মনে করা হচ্ছিল এমনটাই। আর তেমনটাই হল এদিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 − 6 =