২০ মে সর্বভারতীয় ধর্মঘটের পক্ষে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে ব্রিগেডের জনসভায়। শ্রম কোড বাতিলের দাবিকে সামনে রেখে এই ধর্মঘটের আহ্বান জানিয়েছে সবক’টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন। রবিবার ব্রিগেড সমাবেশে ধর্মঘটকে সমর্থনের পক্ষে প্রস্তাব পেশ করেন সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। সমর্থন করেন সারা ভারত কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার।
এদিন এই সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্য় রাখতেগিয়ে জানান,‘ধর্মঘটকে সফল করার জন্য খেটে খাওয়া মানুষ, সাধারণ মানুষের কাছে যেতে হবে। আক্রমণ বহুমুখী, সব অংশের মেহনতি মানুষ আক্রান্ত। সব অংশের কাছেই পৌঁছাতে হবে।’ আর ধর্মঘটের প্রচারের অভিমুখ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘সবার কাছেই এই আহ্বান থাকবে যে দেশ রক্ষা কর, আমাদের রাজ্যে বদল আনো।’
শুধু সুভাষ মুখোপাধ্যায়ই নন, এদিন একই সুর শোনা গেছে কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদারের গলাতেও। তিনি এই ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়ে বলেন,‘ব্রিগেড থেকে ফিরে যাওয়ার পর আর বসে থাকা নয়। একটা মাস ধরে গ্রামে শহরে অসংখ্য পথসভা, মিটিং মিছিলের মধ্য দিয়ে ব্যারিকেড গড়ে তুলতে হবে।’ সঙ্গে এও বলেন,‘কৃষক এবং খেতমজুর আন্দোলনের কর্মীদের দায়িত্ব গ্রামকে জাগিয়ে তোলা। শ্রম কোড বাতিল না হলে বিপদ।’ সেই বিপদ স্পষ্ট করে এলাকায় এলাকায় ব্যাখ্যা করার আহ্বান জানান হালদার। তিনি বলেন,‘ধর্মঘট সফল করতে পারলে পরের লড়াইকে তা শক্তি জোগাবে।’ এর পাশাপাশি তিনি এদিন কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদারের কথায় উঠে আসে তেভাগা আন্দোলনের কথা। তিনি বলেন, ২৭ বছর আগে তেভাগার বর্ষপুরণ উপলক্ষে কৃষক সমাবেশ হয়েছিল। ওই তেভাগা আন্দোলন দাঙ্গা আটকে ছিল, আজকে যেই অবস্থা চলছে তাতে রাজ্যের কৃষক সমাজ সঙ্কটের মুখে। কৃষকেরা ফসলের দাম পাচ্ছে না। তাদের অবস্থা কঠিন। মাইক্রো ফাইন্যান্সের কবলে পড়েছেন তাঁরা। একদিকে ফসলের দাম পাচ্ছে না অন্যদিকে পেট্রোল ডিজেলের দাম বাড়ছে, এবার বলছে স্মার্ট মিটার বসানো হবে। বামপন্থী নেতারা বলেছিল রাজ্য কাঁপিয়ে দিতে হবে,তারপর লাল ঝান্ডা নিয়ে কৃষকরা লড়াই করেছিল, জমি আন্দোলন হয়েছিল। মজুরি আন্দোলন হয়েছিল। জোতদারদের থেকে নেওয়া জমি আবার জোতদারদের কাছে চলে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সোমবার ভারতে আসছেন মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি। এর ফলে অবাধে মার্কিন কৃষি পণ্য দেশে ঢুকবে। এমনি কৃষকরা দাম পাচ্ছে না। এর ফলে আরও সঙ্কট বাড়বে।’
সমাবেশে সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সম্পাদক অনাদি সাহুও শ্রম কোডের বিপদ সম্পর্ক বলেছেন সবিস্তারে। সঙ্গে এও মনে করিয়ে দেন, কোভিড পরিস্থিতির পর বিরোধীদের বাইরে রেখে চোরের মতো শ্রম কোড পাশ করিয়েছিল মোদি সরকার। এখনও তা কার্যকর করা হয়নি। কিন্তু এই কোড বাতিল না হলে শ্রমিককে দাসে রূপান্তরিত করা হবে। সেই প্রক্রিয়া চলছে। আর এরই রেশ টেনে তিনিও এদিন বার্তা দিলেন, ‘শ্রমকোডের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ধর্মঘটের যে ডাক দেওয়া হয়েছে তাকে সফল করতে হবে।’