সোনিয়ার মন ছুঁয়ে যাওয়া বার্তায় রায়বেরিলিতে জয়ের দুয়ারে রাহুল

ছেলে রাহুল গান্ধির হয়ে প্রচারে গিয়ে আবেগঘন হয়ে পড়তে দেখা গেল কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধিকে। এদিকে সামনেই লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফায় ভোট রয়েছে রায়বরেলিতে। সেখান থেকে নির্বাচনী লড়াইয়ে লড়ছেন ছেলে রাহুল। নির্বাচনী প্রচারের একেবারে শেষ দিনে ছেলে এবং মেয়ে, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কাকে পাশে নিয়ে সোনিয়া রায়বেরিলিবাসীকে জানান, ‘ছেলেকে আপনাদের হাতে সঁপে দিলাম, আপনারা ওর খেয়াল রাখবেন।’ রায়বেরিলি কেন্দ্রের মানুষের কাছে সোনিয়ার এই সমর্পণ যে কোনও কারও মন ছুঁয়ে যেতে বাধ্য এ বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রিয়াঙ্কার এই বার্তাই  রাহুলকে নির্বাচনী লড়াইয়ে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে শত যোজন এগিয়ে দিল।

অসুস্থতার কারণে এবার রায়বরেলি কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে লড়ছেন না সোনিয়া গান্ধি। তিনি রাজ্যসভা থেকে সাংসদ হওয়ায় এই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে রাহুল গান্ধিকে। এই আসন থেকে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢ়রাকে প্রার্থী করা হতে পারে বলেও দাবি করা হচ্ছিল। তবে গান্ধি পরিবারের সম্মতির পর এই আসনে রাহুল গান্ধিকেই  প্রার্থী করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস।এদিকে বিগত বছরগুলোতে ইউপিতে কংগ্রেসের এঅবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়ছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস শুধুমাত্র রায়বরেলি আসনেই জিতেছিল। এখন কংগ্রেসের এই দুর্গ বাঁচানোর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছেন রাহুল গান্ধি। আর তার জন্য ভাইয়ের হয়ে রায়বেরিলিতে মাটি কামড়ে প্রাচর চালাচ্ছেন বোন প্রিয়াঙ্কাও।

শুক্রবার এই রায়বরেলিতে রাহুলের প্রচারে উপস্থিত হন ৭৭ বছর বয়সী সোনিয়া গান্ধি। রায়বরেলির মাটিতে দাঁড়িয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে সোনিয়ার আবেগঘন বার্তা, ‘আমি আমার সন্তানকে আপনাদের হাতে সঁপে দিলাম। যেমন করে আপনারা আমাকে আপনাদের একজন বলে আশ্রয় দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনই রাহুলকেও আপন করে নিন। রাহুল আপনাদের নিরাশ করবে না।’

প্রসঙ্গত, ওয়ানাড়েতে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরই মনোনয়ন পেশের শেষ দিনে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে রায়বেরিলি থেকেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন রাহুল। আমেথিতে গান্ধি পরিবারেরই ঘনিষ্ঠ কিশোরীলাল শর্মা। কংগ্রেস যতই এই সিদ্ধান্তের জন্য রাহুলকে ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ বলে আখ্যা দিক না কেন, ঘোষণা মাত্রই খোঁচা দিতে রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েন নরেন্দ্র মোদি। বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়েই তাঁর খোঁচা, ‘আগেই বলেছিলাম কংগ্রেসের শাহাজাদা আর একটি আসনের সন্ধানে আছেন। ওয়েনাড়কে তাঁর আর নিরাপদ মনে হচ্ছে না। তিনি সবাইকে বলেন, ডরো মাত, ভাগো মাত। আজ আমি তাঁকে একই কথা বলছি। স্মৃতি ইরানির ভয়ে উনি আমেথি থেকে পালালেন। কংগ্রেসের ফল গতবারের থেকেও খারাপ হবে।’ এর পাল্টা জবাবের জন্য অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি মোদিকে। মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম কাণ্ডারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই পূর্ব বর্ধমানের মঞ্চ থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে তোপ দেগে জানান, ‘রাহুল রায়বেরিলিতে দাঁড়িয়েছেন, বেশ করেছেন। কোথায় কী বলতে হয়, প্রধানমন্ত্রী জানেন না। আপনি নিজেও তো দুটো আসনে লড়েছিলেন।’ তারপর অবশ্য কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশও নেমে পড়েন রাহুলের ঢাল হয়ে। বলেন, ‘রায়বরেলিতে রাহুলের প্রার্থী হওয়াটা উত্তরাধিকার নয়। এখানে তাঁর দাঁড়ানোটা দায়িত্ব এবং কর্তব্যের পরিচায়ক। বলতে পারেন, মোদিজি কেন বিন্ধ্যের দক্ষিণ থেকে ভোটে লড়ার সাহস পান না?’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান, এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

এদিকে শুক্রবার রায়বরেলির মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে সোনিয়া বলেন, ‘আমি আমার হৃদয় থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাই, কারণ গত ২০ বছর আপনারা আমায় আনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। এটা আমার জীবনের অনেক বড় পাওয়া। এই জায়গার প্রতি শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়ে আসে।’

প্রসঙ্গত, অনেক আগে থেকেই রায়বরেলি কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এখানে কংগ্রেসের আধিপত্য এমনই ছিল যে স্বাধীনতার পর থেকে কংগ্রেস মাত্র তিনবার রায়বরেলিকে হারিয়েছে। ১৯৭৭, ১৯৯৬ এবং ১৯৯৮ সালে। সোনিয়া গান্ধি ২০০৪ সাল থেকে টানা চারবার নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন এবং এখন তাঁর ছেলে রাহুল গান্ধির হাতে পরবর্তী দিনের জন্য দায়ভার সঁপেছেন।

ছেলের হয়ে প্রচারে রায়বরেলিতে গিয়ে দাঁড়াতেই সোনিয়ার ভাষণে উঠে আসে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ‘রায়বরেলির জন্য ইন্দিরাজির হৃদয়ে বরাবরই বিশেষ জায়গা ছিল। আমি তাঁদের কাছ থেকে দেখেছি। আপনাদের প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা ছিল। আমি রাহুল ও প্রিয়াঙ্কাকে সেই শিক্ষাই দিয়েছি যা ইন্দিরাজি ও রায়বরেলির মানুষ আমায় দিয়েছেন। আর তা হল সকলকে সম্মান করা, দুর্বলকে রক্ষা করা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জনগণকে রক্ষার জন্য যুদ্ধ করা। আপনাদের সংগ্রামের শিকড় ও ঐতিহ্য অনেক গভীর। সুতরাং ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।’
গত লোকসভা নির্বাচনে অমেথিতে বিজেপির স্মৃতি ইরানির কাছে হেরে গিয়েছিলেন রাহুল গান্ধি। তবে জয়ী হন কেরলের ওয়েনাড় থেকে। এবার ওয়েনাড়ের পাশাপাশি মায়ের ছেড়ে যাওয়া রায়বরেলিতে প্রার্থী রহুল গান্ধি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 − one =