শুভদ্যুতি ঘোষ
টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা বঙ্গের আকাশে। কারণ, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণাবর্ত। উত্তর প্রদেশ থেকে বিহার উত্তরবঙ্গের উপর দিয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত আরও একটি অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে। এই জোড়া ফলায় প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকছে রাজ্যে। আর তারই জেরে তোলপাড় পরে গিয়েছে বঙ্গের আবহাওয়ায়। এদিকে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, দক্ষিণবঙ্গে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিপাত চলবে আগামী দু-তিন দিন। এরই পাশাপাশি ঝড় বৃষ্টি বজ্রপাতের তুমুল সতর্কতা জারি হয়েছে উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, সকাল থেকে গরম অস্বস্তি বজায় থাকবে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সর্বত্রই। আর বেলা বাড়লে চরমে পৌঁছবে অস্বস্তি। ঝড় বৃষ্টির শুরু দুপুর থেকেই। বেলা যত বাড়বে কালবৈশাখী ঝড় আর বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সতর্কতা থাকবে একাধিক জেলায়। সোমবারের পর মঙ্গলবারেও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। এদিকে কলকাতায় সোমবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। রবিবার বিকেলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে ০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। তবে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সঙ্গে ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগে দমকা ঝোড়ো বাতাস বইবে। থাকবে বজ্রপাতের সতর্কতা। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা আগামী বুধবার পর্যন্ত।
এদিকে আবার চোখ রাঙাচ্ছে, দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্ত। এই ঘূর্ণাবর্ত থেকেই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্বের অনেক আবহাওয়াবিদ। ইউরোপ আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া-সহ বিভিন্ন বিশ্বের আবহাওয়া মডেল জানাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে মে মাসের শেষের দিকে। সামনের উইকেন্ডেই অর্থাৎ ২৪ থেকে ২৫ মে-এর মধ্যে তৈরি হতে পারে ঘূর্ণিঝড়! তবে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ নিয়ে ভিন্নমত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মডেল। অবশ্য ভারতের মৌসম ভবন এখনও ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে নারাজ। ভারতের মৌসম ভবন সূত্রে খবর, বুধবার ২২ মে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। নিম্নচাপ প্রাথমিকভাবে উত্তর-পূর্ব দিকে এগোবে । শুক্রবারের মধ্যে এই নিম্নচাপ মধ্য বঙ্গোপসাগরে অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
তবে ভারতের মৌসম ভবন এর পর আর এগোতে নারাজ। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন মডেল বলছে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। ঘূর্ণিঝড় হলে তার নাম হবে রি-মল। ওমানের দেওয়া এই নাম। আরবি ভাষায় রিমলের অর্থ বালি। নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপ হয়ে ঘূর্ণিঝড় হলে তার অভিমুখ হবে উত্তর ও উত্তর পূর্ব দিক। এর প্রভাবে গতি পেতে পারে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। অনুমান আবহাওয়াবিদদের।
বিশ্বের বিভিন্ন মডেলের মধ্যে রয়েছে আমেরিকার জিএফএস বা গ্লোবাল ফোরকাস্টিং সিস্টেম। এ ছাড়াও একই বার্তা দিচ্ছে ইউরোপ ইউনিয়নের ইসিএমডব্লিউএমএফ-ও। বিভিন্ন মডেল অবশ্য কেউ অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা উপকূলে এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত আনতে পারে বলে মন্তব্য করেছে। কেউ বা পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের বরিশালের মধ্যে এটি ল্যান্ডফল করতে পারে বলে অনুমান করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ বা ল্যান্ড ফল নির্দিষ্ট করে সহমত হতে পারেনি বিভিন্ন মডেল। আর তাতেই এই ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে রহস্য বাড়ছে। ভারতের মৌসম ভবন ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে নিশ্চয়তা এখনও না দিলেও মৎস্যজীবীদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে। সমুদ্র উত্তাল থাকার কারণে এই নির্দেশিকা। ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে ২৩ শে মে থেকে মধ্য বঙ্গোপসাগরে মৎস্যজীবীদের প্রবেশ নিষেধ।
২৪ মে থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৎস্যজীবীদের প্রবেশ নিষেধ। এ দিকে প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস দিচ্ছে ভারতের মৌসম ভবন পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যার জন্য। সামনের উইকেন্ড বা শনি, রবিবারে এই প্রবল বৃষ্টি কী আসলে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায়!! তা অবশ্য খোলসা করছে না আবহাওয়া দফতর।