পেঁয়াজের জন্য পঞ্জাবের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না বাংলাকে। রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন করল বাংলা। পেঁয়াজ উৎপাদনে এবার রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি এই প্রথম পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থাও চালু হতে চলেছে বাংলায়। অর্থাৎ, পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলা এবার প্রকৃত অর্থেই স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে পেঁয়াজ উৎপাদনে। পেঁয়াজের এমন নজর কাড়া উৎপাদনের ফলে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন জেলায় তৈরি করা হচ্ছে বড় ও ছোট মাপের পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার। এতদিন সরকারি উদ্যোগে পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা ছিল না এ রাজ্যে। ফলে বাড়তি অর্থ খরচ করে বেসরকারি মালিকানায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে হত। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জও দিতে হত ব্যবসায়ীদের। ফলে বাজারেও পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী হত। সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই রাজ্যের তরফে জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ছোট ও মাঝারি চাষিদের যাতে পেঁয়াজ রাখার সুযোগ দেওয়া যায় সংরক্ষণাগারে।
এ দিকে নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্যের ৫ জেলায় পেঁযাজ সংরক্ষণের জন্য বড় ৮টি বড় সংরক্ষাগাণাগার তৈরি করছে রাজ্য। জানা যাচ্ছে, এগুলির কাজ প্রায় শেষের পথে। ১৫ মার্চের মধ্যেই এগুলি চালু হয়ে যাবে। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ও কালনা, হুগলির বলাগড় ও আদিসপ্তগ্রাম, মুর্শিদবাদের নওয়াদা ও সাগরদিঘি, নদিয়ার হাঁসখালি এবং মালদহের গাজোলে তৈরি করা হচ্ছে এই বড় সংরক্ষণাগার। এগুলির একেকটিতে ৪০ টন পেঁয়াজ রাখা যাবে। এছাড়াও দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদবাদ, মালদহ, পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম ও বাঁকুড়াতে মোট ৯১৭টি ছোট সংরক্ষণাগার তৈরি করা হচ্ছে। এগুলির প্রতিটিতে ৯ টন করে পেঁয়াজ রাখা যাবে। সম্প্রতি উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায় জানিয়েছেন, এবার রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন ৭ লক্ষ টনেরও বেশি হতে চলেছে। গতবছর উৎপাদন হয়েছিল সাড়ে ৬ লক্ষ টন। অনুকূল আবহাওয়াই রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলেও জানিয়েছেন চাষি ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, এতদিন বেসরকারি মালিকানায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হত। আর এই সংরক্ষণের জন্য ভর্তুকিও দেওয়া হতো রাজ্যের তরফ থেকে। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়। এরই পাশাপাশি বাংলার প্রয়োজন না মিটিয়ে বাইরে পেঁয়াজ রফতানি না করার ব্যাপারেও নেওয়া হয় কড়া ব্যবস্থা। এই দুইয়ে মিলে পেঁয়াজে যোগান বাড়ে রাজ্যে। আপাতত পেঁয়াজ উৎপাদনে রাজ্যের যা স্থিতি তাতে ভিন রাজ্য থেকে পেঁয়াজ আমদানির উপর আর নির্ভর করে থাকতে হবে না বাংলাকে। অর্থাৎ, আর ভিন রাজ্যের খেয়ালখুশির উপর নির্ভর করবে না দরদাম। একইসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে পেঁয়াজের দাম লক্ষণীয় ভাবে কমবে বলেই মনে করা হচ্ছে।