মেয়েদের ‘রাত দখল’ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ আহ্বান জানিয়েছেন, পরিবারের সামর্থ্য থাকলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রত্যাখ্যান করুন। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
২০২১ সালে রাজ্যে ফের ক্ষমতা দখলের পর লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফলের পর তৃণমূলের নেতারা স্বীকার করেন, লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুফল পেয়েছে শাসকদল। মহিলারা হাত উপুড় করে ভোট দিয়েছেন তৃণমূলকে। রাজ্যের সেই মহিলারা বুধবার রাতে পথে নামছেন। কোনও রাজনৈতিক ব্যানারে নয়। আরজি করে পিজিটি চিকিৎসককে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে রাত জাগবেন মহিলারা। স্বাভাবিকভাবে সেই মহিলাদের মধ্যে সব দলের সমর্থকরাই থাকছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে সরব হয় বিজেপি। সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ লেখেন, ‘আমার অনুরোধ, পরিবারের সামর্থ্য থাকলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রত্যাহার করুন। ছাত্রীদের কাছে অনুরোধ, অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ করুন কন্যাশ্রী নয়, কন্যাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুক রাজ্য সরকার।’
তাঁর এই মন্তব্যের জবাব দিতে দেরি করেনি শাসকদল তৃণমূল। শঙ্কর ঘোষকে কটাক্ষ করে শাসকদলের যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, ‘ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই।’ মেয়েদের এই ‘রাত দখল’ প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়েও রাজনীতির ছোঁয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখার কথা বলেন তিনি। দেবাংশু বলেন, ‘আমাদের দিদি-বোনেরা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সর্বান্তকরণে তার সাফল্য কামনা করছি। তাঁদের কাছে শুধু একটাই অনুরোধ, রাজনীতির লোকেরা যেন তাঁদের এই উদ্যোগ হাইজাক না করে নিতে পারেন, সেটার দিকে একটু খেয়াল রাখবেন।’
একইসঙ্গে মহিলাদের এই কর্মসূচি সরকারের বিরুদ্ধে নয় বলে মন্তব্য করেন দেবাংশু ভট্টাচার্য। এই কর্মসূচির জেরে তৃণমূলের প্রতি মহিলাদের সমর্থন কমবে না বলেই আত্মবিশ্বাসী তিনি। দেবাংশুর কথায়, ‘এই আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয় বলেই জানি। উদ্যোক্তাদের মুখ থেকে যতটুকু শুনেছি, এই সমাজের পুরুষতান্ত্রিক সিস্টেমের বিরুদ্ধে অর্ধেক আকাশের লড়াই। আর যদি সরকারের বিরুদ্ধে হয়েও থাকে, তাতেও আমার আপত্তি নেই। এটা উত্তরপ্রদেশ নয়। এখানে সরকারকে প্রশ্ন করার গণতান্ত্রিক অধিকার সকলের আছে।” এরপরই শাসকদলকে সমর্থনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমার নিজের চেনাজানা কিছু বন্ধু এবং আত্মীয় আজকের এই জমায়েতে যাচ্ছেন। যাঁরা ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের জোড়াফুল ছাড়া অন্য কোনও বোতাম কোনওদিন টিপতে পারেননি, ভবিষ্যতেও পারবেন না। বাংলার মহিলারা জানেন, ভারতবর্ষে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বাংলায় তাঁরা অনেকটাই বেশি নিরাপদ। একটা ঘটনা দিয়ে সামগ্রিক বিচার করা যায় না। ফলে সমর্থনে ফাটল ধরার চিন্তা আমাদের নেই। সন্দেশখালির ঘটনার পরও এরকম অনেক কিছু বলা হয়েছিল। পরবর্তীকালে নির্বাচনের ফলাফলে সবটা স্পষ্ট হয়ে গেছে।’
দেবাংশুর বক্তব্য প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র এবং রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই সরকারকে প্রশ্ন করলে কী হাল হয়, তা দেখেছেন শিলাদিত্য চৌধুরী। মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করায় ঝাড়গ্রামের শিলাদিত্যকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এটা কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। এটা একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। হাসপাতালের মধ্যে হয়তো কোনও অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় এই পরিণতি হয়েছে।’ সঙ্গে শমীক এও জানান, ‘তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা মহিলাদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। আর তৃণমূলের তো চাপ বেড়েই আছে।’