রুফ টপ রেস্তোরাঁ ভাঙায় আদালতে মালিক সংগঠন, মৌখিক স্থগিতাদেশ জারি 

সব অনুমতি থাকা সত্ত্বেও পুরসভা শহরের সব রুফ টফ রেস্তোরাঁ ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। এই মর্মে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করার আবেদন রেস্তোরাঁ মালিক সংগঠনের। আর মামলার জেরে রুফটপ রেস্তোরাঁ ভাঙায় মৌখিক স্থগিতাদেশ আদালতের।
দিঘা থেকে ফিরে বৃহস্পতিবার  ‘জতুগৃহ’ বড়বাজারের মেছুয়া বাজারে দাঁড়িয়ে হোটেলের একাধিক বেনিয়মের কথা উল্লেখ করেন। আর সেই সূত্রেই নাম নেন পার্কস্ট্রিটের ম্যাগমা বিল্ডিংয়ের। সেখানে একাধিক নিয়ম ভাঙা হচ্ছে বলে উল্লেখও করেন। এরপর মেছুয়া বাজার থেকে সটান ম্যাগমা বিল্ডিংয়ে হাজির হন মমতা। সেখানে যেতেই নজরে আসে এক সঙ্গে গাদাগাদি করে ২৪টা গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করা রয়েছে। তা দেখে মমতা বলেন,’আমার কাছে পাক্কা খবর ছিল বলে আমি দেখে গেলাম। এবার আমি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেলাম। এবার কলকাতা পুলিশ কমিশনার, মেয়র, দমকলমন্ত্রী মিটিংয়ে বসবেন। ওদের ডাকা হবে।’
এরপরই বৈঠকে বসা হয়। সব কিছু খতিয়ে দেখে তড়িঘড়ি নেওয়া হয় সিদ্ধান্ত। কেবল ম্যাগমাই নয়,শহরের বিভিন্ন ছাদের উপরে তৈরি হওয়া সব রেস্তোরাঁ বন্ধ করার নির্দেশ দেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। প্রথমেই ভাঙা হয় ম্যাগমা বিল্ডিংয়ের রেস্তোরাঁ। এরপর  শহরের একাধিক রুফটপ রেস্তোরাঁ ভেঙে ফেলতে উদ্যোগী হয় পুরসভা। গত কয়েকদিনে শহরের একাধিক রুফটপ রেস্তোরাঁ ভেঙে ফেলা হয়। এদিকে মালিকদের একাংশের অভিযোগ, সব রকমের অনুমতি নিয়ে নিয়ম মেনে রেস্তোরাঁ চালানোর পরও তা ভেঙে ফেলা হচ্ছে। তাই পাল্টা আদালতের দ্বারস্থ হন রেস্তোরাঁ মালিকরা।
এরপরই এই মামলায় মৌখিক স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। আদালত সূত্রে খবর, পার্কস্ট্রিটের রুফটপ রেস্তোরাঁ ভাঙায় আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের নির্দেশ দেওয়া হয়। শুনানিতে পুরসভাকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্ত বলেন, ‘আপনারা এভাবে ভাঙতে পারেন না।’ সঙ্গে এও বলেন, ‘আইনের যে ধারায় আপনারা হোটেল কর্তৃপক্ষকে নোটিস পাঠিয়েছেন তার বলে আপনারা ভাঙতে পারেন না।’
এ দিন মামলাকারীর আইনজীবীর আদালতে সওয়াল করতে গিয়ে এপ্রশ্নও করেন,অন্যত্র অগ্নিকাণ্ড হয়েছে বলে রাতারাতি আমাদের রেস্টুরেন্ট ভেঙে দেওয়া যায় কি না তা নিয়েও। সঙ্গে এ প্রশ্নও করেন, যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন তাই তড়িঘড়ি আমাদের রেস্টুরেন্ট ভেঙে দেওয়া যায় কি না তা নিয়েও। একইসঙ্গে এও জানান,নীতিগত সিদ্ধান্ত সরকার নিতেই পারে। তবে আমরা আইনের মাধ্যমে লড়াই চলতে পারে। একই সঙ্গে কোর্টে তাঁর প্রশ্ন,’রাতে পুলিশ নিয়ে এসে কেন ভেঙে দেওয়া হল? আমরা কি দুষ্কৃতী? আমাদের সমস্ত লাইসেন্স রয়েছে।’ আদালতে এ দিন এও সওয়াল করতে গিয়ে বলা হয়,’২০২৪ সালে আমরা পুরসভার কাছে রেস্তোরাঁর একটা অংশ নিয়মিত করার আবেদন জানিয়েছিলাম। সেটা নিয়ে পুরসভা এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।’
এদিকে আদালত সূত্রে খবর, সোমবার কলকাতা পুরসভা হাইকোর্টে তৈরি হয়ে আসেনি। কিছু নির্দেশের প্রয়োজন রয়েছে। সেই নির্দেশ পেয়েই পরের দিন আদালতে সওয়াল করবেন পুরসভার হয়ে লড়া আইনজীবী। এই মামলার পরবর্তী শুনানি বৃহস্পতিবার।
উল্লেখ্য, মেছুয়া বাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর মেয়র ফিরহাদ হাকিম নির্দেশ দিয়েছিলেন রুফটপে রেস্তোরাঁ বন্ধ করতে হবে। মেয়রের সেই নির্দেশ পেতেই পুরকর্মীরা পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে পার্কস্ট্রিটের একাধিক রেস্তোরাঁ ভেঙে ফেলতে উদ্যোগী হন। শনিবার বিকেলে সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের একটি ছ’তলা বাড়ির উপরে তৈরি রেস্তোরাঁ ভাঙতে আসে কলকাতা পৌরসভার ডেমোলিশন টিম। তবে রেস্তোরাঁর কর্মীরা বাধা দেওয়ায় ফিরতে হয় তাঁদের। কারণ,সূত্রে খবর, সেই সময়ই রেস্তোরাঁর মালিক জানিয়েছিলেন  আদালত থেকে তারা স্থগিতাদেশ অর্ডার নিয়ে এসেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 + eighteen =