গত দু বছরে আরজি করে স্বাস্থ্য পরিষেবার নানা স্তরে দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ কলকাতার এই হাসপাতাল। অনেকের ধারনা, স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে তা নিয়োগ কেলেঙ্কারির থেকেও অনেক পা এগিয়ে। আর এই দুর্নীতির জাল ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সরঞ্জাম,চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ,হাসপাতালের পরিকাঠামো,ক্যান্টিন, সুলভ শৌচালয়,বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাওয়া-দাওয়ার বরাত সব কিছুতেই। আর এই সব ঘটনাকে কেন্দ্র করে কমিশন প্রথায় কোটি কোটি টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে। বর্তমান অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আরজি করের প্রাক্তন নন মেডিক্যাল ডেপুটি সুপার আখতার আলির বিস্ফোরক অভিযোগে তোলপাড় রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্র। অভিযোগে জানানো হয়েছে, ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট স্কুল ল্যাব নির্মাণে খরচ ৬০ লক্ষ টাকা। সেটাই আরজি করে দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা। এর পাশাপাশি মধ্য়রাতে সাফাই কাজে বরাতপ্রাপ্ত সংস্থার দরপত্র বাতিল করা হয়েছে। হাসপাতালের সব কাজেই ৩ সংস্থাকে ১৫-২০ শতাংশ কমিশনে বরাত দেওয়ার অভিযোগও সামনে আনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্প এনইএলএস ল্যাবের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি গরমিল রয়েছে ভিআরডিএল ল্যাবের সামগ্রী কেনাতেও। এই প্রকল্পে ল্যাব টেকনিশিয়ান নিয়োগেও বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এখানেই শেষ নয়,১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার হাই ফ্লো ন্য়াজাল ক্যানুলা সাড়ে চার লক্ষ টাকা দরে কেনার অভিযোগও সামনে আনা হয়েছে।
আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন নন মেডিক্যাল ডেপুটি সুপার আখতার আলি এই প্রসঙ্গে জানান,’স্বাস্থ্য দফতর মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশন কিনেছিল ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায়। উনি পেপার টেন্ডারের মাধ্যমে ন্যাশনাল থেকে কয়েকজন ভেন্ডারকে এনে এক একটা সাড়ে চার লক্ষ টাকায় কিনেছিলেন।’ অর্থাৎ এখানেই ২০ শতাংশ কমিশন রয়েছে। তিনি আরও জানান, সব কিছুতেই সুমন হাজরা,বিপ্লব সিংহ,আফসার খানরাই টেন্ডার পেত। অন্য কোনও ভেন্ডারকে উনি পাত্তাই দিতেন না। যেহেতু প্রথমেই বলে ফেলতেন ২০ শতাংশ দিতে হবে,ভেন্ডাররা পালিয়ে যেতেন।’ এদিকে এই প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের কাছ থেকে মেলেনি কোনও সদুত্তর।
এখানে বলে রাখা শ্রেয়, গত জুনেই আরজি করে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির ঘটনা সামনে আসার পর অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বদলি নির্দেশিকা জারিও হয়। তবে তা আবার দু’দিনের মধ্যে তা স্থগিতও হয়ে যায়। আর এখানেই আখতার আলির দাবি, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের দিস্তা দিস্তা নথি স্বাস্থ্য ভবনে দাখিল করেও লাভ হয়নি।