সন্দেশখালিতে আরএসএসএস-এর শক্ত ঘাঁটি আছে বলে বিধানসভায় জানালেন মমতা

সন্দেশখালি ইস্যুতে যখন রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়, তখন সেই প্রসঙ্গে প্রথমবার বিধানসভায় মুখ খুলতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এর আগে এই ইস্যুতে প্রতিবাদ জানিয়ে বিধানসভায় বিক্ষোভ করতে দেখা গিয়েছিল বিরোধী দলের বিধায়কদের।এরপর বৃহস্পতিবার বিরোধী দলনেতা যখন সন্দেশখালিতে অবস্থানে বসে, তখন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী জানান,  আরএসএস-এর শক্ত ঘাঁটি এই সন্দেশখালি। একসময় ওই এলাকায় দাঙ্গা হয়েছিল বলেও দাবি করেছেন তিনি। এদিন তাঁর মুখে শোনা যায় তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের নামও। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘সন্দেশখালি আজকের নতুন নয়, ওখানে আরএসএস-এর একটা বাসা আছে। ৭-৮ বছর আগে ওখানে দাঙ্গা হয়েছিল। কতকগুলি দাঙ্গা-স্পটের মধ্যে এটাও একটা স্পট।’ মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কা, সরস্বতী পুজোয় যাতে গন্ডগোল হয়, সেই পরিকল্পনাও করা হয়েছিল। মমতা বলেন, ‘সরস্বতী পুজোয় আমরা শক্ত হাতে সব হ্যান্ডেল করেছি। না হলে অনেক প্ল্যানিং ছিল।’

এরই পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আরও বলেন, ‘আগে টার্গেট শেখ শাহজাহান। ওকে টার্গেট করে ইডি ঢুকল। তারপরেই সবাইকে বের করে দিয়ে আদিবাসী-সংখ্যালঘুদের মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে দিল। কারও কোনও ক্ষোভ বিক্ষোভ থাকতেই পারে, যদি তাকে সরকার সিদ্ধান্ত নেমে, আমাদের তো মহিলা দল আছে ওখানে। পুলিশেরও একটা মহিলা দল আছে, ঘরে ঘরে যাচ্ছে, কার কী অভিযোগ শুনছে। শুনে এসে রিপোর্ট করার পর যদি কারও সমস্যা থাকে সেটা নিয়ে নিশ্চয় আমরা কাজ করব। আগে তো আমায় জানতে হবে ব্যাপারটা কী।’ এরই পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এদিন এও উল্লেখ করেন, তিনিই উদ্যোগ নিয়ে প্রশাসন পাঠিয়েছেন সন্দেশখালিতে। ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সঙ্গে মমতার দাবি, বাইরে থেকে লোক এনে গন্ডগোল করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, বিজেপি বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে একটা জায়গাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে।

একইসঙ্গে এদিন চোপরার ঘটনা নিয়ে বিএসএফ-কেও নিশানা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএসএফ-এর কাজ কী? সীমান্ত পাহাড়া দেওয়া। চোপড়ায় ৪টি বাচ্চা মারা যায়। আজ মাননীয় রাজ্যপালের কাছে আমাদের দল গিয়েছিল। এখানে ওরা ৩৩৪টি দল পাঠিয়েছে, তাহলে চোপড়ায় যদি ৪টি শিশু মারা যায়, শিশুদের জীবনের কী কোনও দাম নেই? সেই বিএসএফ-এর আমি শাস্তি চাই, যাদের জন্য বাচ্চাগুলো মারা গিয়েছে। কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। বিএসএফ আর কী করে বেড়াচ্ছে? আমাকে একজন বিধায়ক অভিযোগ করেছেন, তার বিধানসভা এলাকায়, একটা মসজিদ আছে, ইমামকে টেনে হেঁচড়ে বের করেছে মুর্শিদাবাদে। এলাকায় এলাকায় গিয়ে গেরুয়া রঙের প্যাকেটে জিনিস বণ্টন করছে।’ আর এখানেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘কে তোমরা? তোমার কাজ সীমান্ত পাহাড়া দেওয়া, তোমার কাজ বিজেপির ক্যাম্প করা নয়। ভোটের আগে বিজেপির ক্যাম্প করছে বিএসএফ, এর জবাব কারা দেবে?’

প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েও বারংবার বিএসএফ-কে নিশানা করতে দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়তে। বিএসএফ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে আলাদা করে পরিচয়পত্র দিচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। আর তাই মানুষকে সেই পরিচয়পত্র না নেওয়ার পরামর্শ দিতেও দেখা যায় মমতাকে।

মমতা এভাবে সন্দেশখালি প্রসঙ্গে আরএসএস-এর নাম করায় সরব হন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিহাস জানেন না বলেই এসব কথা বলেছেন। সরবেড়িয়ায় অবস্থানে বসেই তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী একজন রাষ্ট্রবিরোধী। তাঁর মুখ থেকে এ কথাই বেরবে। ইতিহাস জানেন না। তাই এ সব বলছেন। এর মধ্যে দিয়ে আরএসএস-এর জনপ্রিয়তা আরও সুদৃঢ় হবে।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 1 =