চিঠিতে উল্লেখিত রুদ্র থাকেন না হস্টেলে

স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর রবিবার এক চিঠি ভাইরাল। আরএ ই চিঠিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এক ধোঁয়াশা। ভাইরাল হওয়া চিঠির বিষয়বস্তু পড়ে যা বোঝা যাচ্ছে তাতে ১০ অগাস্ট ডিনকে লেখা হয় এই চিঠি। অথচ ৯ অগাস্ট রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ পড়ে যান স্বপ্নদীপ। এরপর ১০ অগাস্ট ভোরের দিকে মৃত্যু হয় তাঁর। ইতিমধ্যেই নিহতের বাবা জানিয়েছেন, এ চিঠি তাঁর ছেলের লেখা নয়। বরং এই চিঠি দেখে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছিলেন তিনি। চিঠিতে ‘রুদ্রদা’ নামে এক সিনিয়রের কথাও লেখা আছে। যিনি হুমকি দেন বলে অভিযোগ। এদিকে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, এই ‘রুদ্রদা’র নাম রুদ্র চট্টোপাধ্যায়। যদিও রুদ্র চট্টোপাধ্যায় জানান, তিনি হুমকি দেওয়ার কেউ নন। সঙ্গে এও জানিয়েছেন, তিনি হস্টেলেই থাকেন না। সঙ্গে এও জানিয়েছেন,  তাঁর বাড়ি যাদবপুর ক্যাম্পাস থেকে  পাঁচ কিলোমিটার দূরে।

এদিকে গত ১০ তারিখ ১০টা নাগাদ ডিনের কাছে ফোন করেছিলেন এক পড়ুয়া। সেই পড়ুয়া ডিনকে যা বলেছিলেন, তার সঙ্গে হুবহু মিলে গিয়েছে ভাইরাল হওয়া চিঠির বিষয়। এখানেই আভাস মিলছে এক ষড়যন্ত্রের। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, ডিনকে ফোন করেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক পড়ুয়া। যিনি ফোন করে নিজেকে রুদ্র নামে পরিচয় দেন। প্রশ্ন উঠছে, নাম জানিয়ে পরিকল্পনা করেই এই চিঠি লেখা হয়েছে কি না তা নিয়েও। সত্যিই যদি তেমনটা হয় তাহলে তো প্রথমবর্ষের ছাত্রের নৃশংস পরিণতির পিছনে শুধু র‍্যাগিংতত্ত্ব আর থাকে না, যুক্ত হয় ষড়যন্ত্রও।

যদিও রুদ্র চট্টোপাধ্যায় স্পষ্টই জানাচ্ছেন, ‘আমি ওকে ছাদ থেকে ফেলার হুমকি দেওয়ার কেউ নই। আমি কোনও হস্টেলেই থাকি না। আমার বাড়ি ক্যাম্পাস থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে। হস্টেল পাওয়ার কথাই নয় আমার। আর ক্যাম্পাসের ভিতরের হস্টেলে র‍্যাগিংয়ের প্রবণতা খুব একটা নেই, ক্যাম্পাস থেকে আধ মাইল দূরে যাদবপুর থানার পাশের হস্টেলে র‍্যাগিং কালচার দীর্ঘদিনের। ২০২০ সালে যখন ভর্তি হই তখনই শুনেছি। এরপর আমরা অনলাইন ব্যাচ ছিলাম। ২০২০-২১ সালে শুনিনি কিছু। ২০২২ সালে যখন আবার নতুন ব্য়াচ আসে একই কথা শুনেছি। ২০২৩ সালেও একই কথা শুনছি।’

এরই রেশ ধরে রুদ্র এও জানান, তিনি সাবধান করেছিলেন নতুনদের। কারণ, কলকাতায় একজন নতুন ছেলে পড়তে এসেছে, বিভাগের সিনিয়র হিসাবে তাঁর কর্তব্য বর্তায় ওই ছেলেটিকে সাবধান করা। সঙ্গে এও বলেন, ‘এইটুকুই বলেছিলাম, মেন হস্টেলে এরকম হয়, সাবধানে থাকবি। যাদের চিনিস সকলকে নিয়ে থাকবি।’

সঙ্গে রুদ্র এও জানান, ৭ অগস্ট প্রথম ওই ছাত্র বিভাগে এসেছিল। সকাল সাড়ে ১১টা, ১২টা নাগাদ তাঁর সঙ্গে কথা হয় রুদ্রর। ৩-৪ মিনিট কথা হয়। এরপর বুধবার রাতে প্রথম বর্ষের ছাত্রের উপর থেকে পড়ে যাওয়া অবধি আর কোনও কথাই হয়নি। ৮ তারিখ বিভাগীয় ওরিয়েন্টেশন ছিল। রুদ্র জানান, সেদিন দেখা হয় ওই ছাত্রের সঙ্গে। তবে ব্যস্ততার কারণে কোনও কথা হয়নি। শুধু হাসি বিনিময় হয়েছিল। ফলে ভাইরাল চিঠি কার লেখা তা তদন্তকারীরাই বলতে পারবেন। ৯ তারিখ মৃতুর ঘটনা অথচ ১০ তারিখ চিঠি লেখা হল, এ নিয়ে প্রশ্ন রুদ্রর মনেও। সবশেষে রুদ্র এও জানান, ‘এই ঘটনায় যারা দোষী, তারা শাস্তি পাক। যদি আমি দোষী হই তাহলে আমাকেও যেন সেই শাস্তি না এড়িয়ে যায়।’ তবে রুদ্রর মুখে শোনা যায় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কথাও।

পাশাপাশি সৌরভ, মনোতোষ, দীপশেখর ধৃত তিনজনকেই চেনেন বলে জানান রুদ্র। বলেন, ‘যাঁরা গ্রেফতার হয়েছে, তাদের ক্যাম্পাসেই দেখেছি। সৌরভকে চিনতাম, আগে দাদা বলতাম, এখন দাদা বলতে লজ্জা করে। মনতোষ, দীপশেখর আমার জুনিয়র, আমার ব্যর্থতা আমি তাদের র‍্যাগিং নিয়ে কোনও শিক্ষা দিতে পারিনি।’

এদিকে এই চিঠির ঘটনা পুরোটাই পূর্বপরিকল্পিত বলছে জুটা। জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় জানান, ‘ডায়েরির পাতাটা দেখে আমি সত্যি অবাক হয়ে গেলাম। ৯ তারিখ রাতে একজন পড়ুয়া ডিন অব স্টুডেন্টসকে ফোন করে যে কথাগুলি বলেছিল, সেগুলিই প্রায় হুবহু এই ডায়েরির পাতায় উল্লেখ আছে। এটা কি একেবারে পুরোটাই পরিকল্পনা মাফিক, সে প্রশ্ন তো আসবেই। আমি ভাবছিলাম সেদিন সাড়ে ১২টার পর হস্টেলে জিবি হয়েছে। সেখানে কিছু ভার্সান দেওয়ার জন্য আলোচনা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সেটা ১০ তারিখ হয়ে গিয়েছে। ডায়েরির পাতাতেও দেখলাম ১০ তারিখই লেখা। সবই কাকতালীয় কি না জানি না।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − five =