বসিরহাট জেলা পুলিশের হাতে আবারও গ্রেফতার বিকাশ সিং ও উত্তম সর্দার। সন্দেশখালিকাণ্ডে বিকাশকে গ্রেফতার করা হয় শনিবার রাতে এবং সোমবারই সন্ধ্যায় জামিন পান তিনি। এদিকে তাঁর জামিনের পর পরই বসিরহাট আদালতে সৃষ্টি হয় নাটকীয় পরিবেশ। বসিরহাট আদালতের বাইরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। অভিযোগ ওঠে, সেখানে জমায়েত করা বিজেপি কর্মীরা পুলিশকে ধাক্কাধাক্কি করে। গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করা হয়। এমনকী পুলিশের গায়ে হাতও তোলা হয়। এরপরই দেখা যায় আবারও পুলিশের গাড়িতে তোলা হয় বিকাশ সিংকে। অন্যদিকে জামিনের পরই গ্রেফতার করা হয় উত্তম সর্দারকেও। এই ঘটনাকে ঘিরে কোর্টচত্বরে উত্তেজনা ছড়ায়। রাস্তা অবরোধ করেন বিকাশ সিংয়ের আত্মীয়রা। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যদিও পুলিশের বিশাল টিম এসে আবারও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে রাস্তায় ধরনায় বসে পড়েন বিজেপি কর্মীরা।
প্রসঙ্গত, সোমবার প্রথমে তৃণমূল থেকে সাসপেন্ডেড নেতা উত্তম সর্দার, বিজেপি নেতা বিকাশ সিং জামিন পান। তবে জামিন মেলেনি সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের। তিনদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিল বসিরহাট আদালত। সোমবার ধৃতদের বসিরহাট আদালতে তোলা হয়। উত্তম ও বিকাশকে ২ হাজার টাকার বন্ডে জামিন দেয় আদালত। সন্দেশখালি থানার স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় গ্রেফতার করা হয় বিকাশ সিং ও উত্তম সর্দারকে। অন্যদিকে শিবু হাজরার অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হন নিরাপদ সর্দার। পাশাপাশি এদিন আদালতে জামিন পান তিনজন গ্রামবাসীও। শিবু হাজরার অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদেরও গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এদিন জামিন পান তিন গ্রামবাসী সুজয় মণ্ডল, সৈকত দাস ও প্রদীপ মণ্ডল। আধালত সূত্রে খবর, রেজিস্ট্রার সিকিউরিটি বন্ডে ২ হাজার টাকায় জামিন দেওয়া হয় তিনজনকে। যেদিন অশান্তি হয় সন্দেশখালিতে, সেইদিনই গ্রেফতার করা হয়েছিল এই তিনজনকে। সেদিন শিবু হাজরা মোট ১১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পুলিশ সোমবার জেল হেফাজতে চায় তিনজনকে। তবে আদালত সমস্ত দিক বিচার করে জামিন দেয় তিন গ্রামবাসীকে।
সন্দেশখালির বাসিন্দারা উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে একের পর এক সাংঘাতিক অভিযোগ তোলে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তৃণমূলের তরফে জেলা পরিষদের সদস্য উত্তমকে দল থেকে ৬ বছরের জন্য সাসপেন্ডও করা হয়। সেদিনই সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। একইসঙ্গে সেদিন গ্রেফতার হন বিজেপি নেতা বিকাশ সিং। কিন্তু এই গ্রেফতারির মেয়াদ ছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টা। শনিবার রাতে গ্রেফতার, রবিবার আদালতে পেশ। কিন্তু পুলিশ এই গ্রেফতারি সংক্রান্ত নথি আদালতে জমা না দেওয়ায় সোমবার শুনানির দিন ধার্য হয়। আজও সেই একই ঘটনা ঘটে আদালতে। যার জেরে পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনার মুখেও পড়তে হয়। পরে এই মামলারই শুনানি হয় এবং দু’জন জামিন পেলেও নিরাপদ জামিন পেলেন না।
এদিন জামিন পেয়ে কোর্টের বাইরে বেরিয়ে এসেই বিকাশ সিং বলেন, ‘পুলিশ কৌশল করে আমাকে গ্রেফতার করেছে। সন্দেশখালির মা বোনেদের পাশে আমরা আছি। সন্দেশখালিতে পুলিশ নিষ্ক্রিয়। শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের সাজা না হলে সেখানে শান্তিও ফিরবে না। আমিই তো এই মুহূর্তে সন্দেশখালিতে যেতে পারব না। নিরাপত্তা নেই ওখানে। আমার দলের সঙ্গে আলোচনা করে দেখি কী করা যায়।’ এদিকে এর পর পরই কোর্ট চত্বরের ছবিটা একেবারে বদলে যায়।