শহর থেকে গ্রাম, পুজোয় দুটি জিনিস এখন টানে মানুষকে। এক হল প্রতিমা আর অপরটি হল থিম। থিম নির্ভর পুজো হলে স্বাভাবিক ছন্দেই সেখানে মানুষের ভিড় হয় একটু বেশি। তাই থিমের পুজোর দিকেই এখন ঝুঁকেছেন বড়-মেজো-সেজো-ছোটো পুজোর কর্তারা। শুধু তাই নয়, এই বিভিন্ন সর্বজনীন দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তারা ঢাকে কাঠি পড়ার আগে যা নিয়ে সব চেয়ে বেশি গোপনীয়তা বজায় রাখেন, তা হলো, থিম। তবে মঙ্গলবার পুজো সংক্রান্ত বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কোন পুজোর কী থিম হচ্ছে, তা পুলিশকে প্রাথমিক ভাবে জানিয়ে রাখতে হবে, পুলিশ সেটা বাইরে আনবে না।
মুখ্যমন্ত্রীর ওই নির্দেশের দিনই সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের কর্মকতাদের কাছে পুলিশের একটি চিঠি পৌঁছেছে। সেখানে এ বছরের দুর্গাপুজোর থিম জানতে চাওয়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনা এড়াতে আরও বেশ কিছু গাইডলাইন অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে, এমনটাই আয়োজকদের দাবি। যা নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
ওই পুজোর অন্যতম কর্মকর্তা, বিজেপি কাউন্সিলার সজল ঘোষ বলেন, ‘পুলিশ যে সব শর্ত দিয়েছে, সেগুলোকে শর্ত না-বলে হুমকি বলা ভালো। সব সময়ে পুলিশের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছি। তবে হুমকি মেনে নেওয়াটা সম্ভব নয়।’ পুলিশের কাছে পুজোর থিম জানানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশকে শহরের বড় পুজো কমিটিরগুলোর কর্তাদের অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন, পুলিশের চিঠি না-পেলেও। তবে সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের কর্মকর্তারা এতে চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছেন।
গত বছর অযোধ্যার রামমন্দিরের আদলে মণ্ডপ হয়েছিল সন্তোষ মিত্র স্ক্যোয়ারের পুজোয়। যা দেখতে প্রচুর মানুষের ভিড় জমান। এবছরও তাঁদের যা থিম, তা ভিড়ের নিরিখে অন্যদের টেক্কা দেবে বলেই দাবি উদ্যোক্তাদের। এই পরিস্থিতিতে যে সব শর্ত পুলিশের তরফে দেওয়া হয়েছে, সে সব মানতে গেলে পুজো করাটা বেশ কঠিন বলে দাবি সজলের।
এই প্রসঙ্গে সজল ঘোষ বেশ ক্ষোভের সঙ্গে এও জানান, ‘শহরে বেশ কিছু বড় পুজো হয়। কিন্তু আমাদের মতো শর্ত আর কাউকে দেওয়া হয়নি। কেন, সেটা সবার কাছেই দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।’ সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের কর্মকর্তাদের দাবি, কমপক্ষে ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন এবং ৩৬টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে বলা হয়েছে। প্যান্ডেলের পাশের মাঠে নাগরদোলা এবং স্টলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এমনকী, মণ্ডপের সামনে নজরদারির জন্য জায়গা তৈরি করতে হবে। তবে টালা প্রত্যয় পুজো কমিটির তরফে তরুণ সাহার দাবি, ‘পুলিশ আগে থেকে সতর্কতা নিলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও মজবুত হবে।’ একই সুর চেতলা অগ্রণীর কর্ণধার ফিরহাদ হাকিম এবং দেশপ্রিয় পার্কের পুজো কমিটির সম্পাদক সুদীপ্ত কুমারের কথাতেও। দুজনেরই বক্তব্য,‘এখনও পুলিশের কোনও চিঠি পাইনি। তবে পুলিশকে আমরা সব রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
এদিকে কলকাতা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, ‘পুজোয় অতিরিক্ত ভিড়ে দুঃখজনক কিছু যাতে না-ঘটে, সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের টার্গেট। আগাম সতকর্তা হিসেবে এ বার বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’