তদন্তে সহযোগিতা করছেন না সায়নী, অভিযোগ ইডি-র আধিকারিকদের

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি-র তলবে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির সায়নী ঘোষ। সকাল ১১টা ২২ মিনিটে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হন সায়নী ঘোষ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার রাতেই ইডি-র তরফ থেকে একটি ৪ পাতার প্রশ্নমালা তৈরি করা হয় বলে সূত্রের খবর। এদিকে সায়নী ঘোষকে তাঁর ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টের কপি, আইটি রিটার্নের কপি এবং সম্পত্তির হিসেব আনতে বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা জানতে চান, সায়নীর সঙ্গে কুন্তলের কী যোগ বা তাঁর সম্পত্তির উৎসই বা কী।

এদিকে শুক্রবার ৯ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সায়নী ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে থাকে ইডির তরফ থেকে।এদিকে ইডি সূত্রে খবর, ইডি-র তরফ থেকে বারবার জানতে চাওয়া হচ্ছে কুন্তলের সঙ্গে সায়নীর কোনও আর্থিক লেনদেন আছে কি না সে ব্যাপারে। পাশাপাশি এও জানতে চাওয়া হয় যে, তঁর পেশাগত জগত অর্থাৎ রুপোলি পর্দার জগতের থেকে কত আয় করেছেন সায়নী এবং বর্তমান তাঁর আর্থিক পরিস্থিতি কী সে ব্যাপারেও। সঙ্গে এও জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, তিনি যে সম্পত্তি কিনেছেন তার আয়ের উৎস কী সে ব্যাপারেও।সায়নীর  বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎস খুঁজে বের করতে মরিয়া ইডি-র আধিকারিকেরা। কারণ, ইডির কাছে তথ্য রয়েছে কুন্তলের থেকে টাকা নিয়ে তিনি একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন সায়নী। আর এখানেই ইডি-র আধিকারিকদের প্রশ্ন, কত টাকা কুন্তলের কাছ থেকে তিনি নিয়েছেন। আর ঠিক কোন খাতে নেওয়া হয়েছে এই টাকা সে ব্যাপারেও। তবে ইডি সূত্রে খবর, সায়নী ঘোষের জবাব সন্তোষজনক নয়। এদিকে শুক্রবার যখন ইডি দপ্তরে যান সায়নী তখন তিনি স্পষ্টই জানিয়েছিলেন যে এই নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যে তদন্ত চলছে তাতে তিনি সর্বতোভাবে সাহায্য করবেন ইডি আধিকারিকদের। তবে বাস্তবে সেটা শুক্রবার সন্ধে পর্যন্ত হয়নি বলেই জানাচ্ছেন ইডি আধিকারিকেরা।

এদিকে  বুধবার থেকে সবার নজর ছিল সায়নী ঘোষের দিকেই। কারণ, টলিউড অভিনেত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী সায়নী ঘোষকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তলব করেছে ইডি। এরপর থেকে খোঁজ মিলছিল না সায়নীর।

তবে এদিন সায়নীকে নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। যেমন, বছর দুয়েক আগেই কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনেছেন সায়নী ঘোষ। এদিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার অন্যতম অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষের সঙ্গে সায়নী ঘোষের যোগ নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

একুশের বিধানসভা নির্বাচনে আসানসোল দক্ষিণ থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। সে সময়ে রাজনীতিতে নবাগতা হয়েও ভোটে লড়ার টিকিট পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেসময়ে হলফনামায় দাখিল করা অভিনেত্রীর সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ‍্যে যা মিলছে তাতে দেখা যাচ্ছে, মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় মাত্র ৩২ হাজার ৭৭৫ টাকা ক‍্যাশ ছিল তাঁর কাছে। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে অভিনেত্রীর মোট আয় ছিল ৮৯ লক্ষ ২ হাজার ৫৬৮ টাকা। পাঁচটি ব‍্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সঞ্চিত মোট অর্থের পরিমাণ ১০ লক্ষ ৩৩ হাজার ৮২৫ টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে ৮ লক্ষ ৫২ হাজার ৩৭৬ টাকা জমা রয়েছে সায়নীর। ৬ লক্ষ ৭৭ হাজার ৩৬৯ টাকা মূল‍্যের একটি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে অভিনেত্রীর। এদিকে মাত্র ৪ গ্রাম সোনা রয়েছে তাঁর। এছাড়াও যাদবপুর বিশ্ববিদ‍্যালয়ের কাছে একটি ফ্ল‍্যাটের মালকিন। যাদবপুরে তার৬৭০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটটি সায়নী ২০১৫ সালে কিনেছিলেন ২৪ লক্ষ ১ হাজার টাকায়। বর্তমানে বাজার মূল‍্য প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা। খাতায় কলমে সায়নীর নামে কোনরকম জমিজমা অথবা বাড়ি ঘর নেই। তবে সম্পত্তির পাশাপাশি মাথায় ঋণের বোঝাও নেহাত কম নেই সায়নীর। ব‍্যক্তিগত ও গাড়ি ঋণ নিয়ে ৬৮ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকার ঋণ রয়েছে তাঁর। সায়নী কোনও টাকা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেননি বলে জানা যায়। জীবনবীমা ক্ষেত্রে তিনি বিনিয়োগ করেছেন মোট ৮ লক্ষ ৫২ হাজার ৩৭৬ টাকা।

২০২১-এই তিনি জানিয়েছিলেন, মায়ের কাছ থেকেও ১৯ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা সায়নী ধার নিয়েছেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten + fourteen =