প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে ২৬-এর লড়াইয়ের ডাক সেলিমের

মঙ্গলবার সিপিআই(এম)’র ২৭তম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্মেলনের প্রতিনিধি অধিবেশনের সমাপ্তির পর ডানকুনি ফুটবল ময়দানে প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য রাখতে দেখা গেল বাম নেতা মহম্মদ সেলিমকে। এদিনের মঞ্চ থেকে তিনি জানান, ‘এই সমাবেশ প্রমাণ করছে সিপিআইএম ছিল আছে থাকবে। কিছু এনজিও, মিডিয়া ভেবেছিল আমাদের মুছে দেওয়া যাবে, কিন্তু না। শহিদের কলজের রক্ত দিয়ে লাল ঝান্ডা তৈরি হয়েছে। কৃষক, সংখ্যালঘু, সবার জন্য লড়াই করে সিপিআই এম তৈরি হয়েছে। ৫৫০’র বেশি প্রতিনিধি সম্মেলনে ছিলেন। সমাজের সব অংশের মানুষ ছিলেন। পাহাড় থেকে এসেছিলেন অনেকে। যারা ভেবেছিল সিপিআইএম শেষ তারা লিখছে কি খাওয়া হয়েছে সম্মেলনে। আর যখন ফাইভ স্টার হোটেলে হয়, দিল্লি নবান্ন থেকে উপহার আসে তখন কিছু হয় না। তার বন্দনা করা হয়। আমরা মানুষকে নিয়ে লড়াই করি, তাদের থেকে রসদ জোগাড় করি। আমরা ইলেক্টোরাল বন্ড নিই না। মানুষের টাকায় পার্টি চালাই। ওরা বিভিন্ন সংস্থার থেকে টাকা নিয়েছে ভোটের সময় আর আমাদের তার ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। আমরা মামলা করেছিলাম। তারপর যখন নাম প্রকাশের কথা এলো তখন বলা হল নাম দেবে না। মোদি সরকারও আড়াল করতে চেয়েছিল। অন্যদিকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চেয়েছিলেন রাজ্যের মানুষের মেধা দিয়ে রাজ্য গড়তে। বামফ্রন্টের সময় স্কুল হয়েছে, তৃণমূল স্কুল তুলে দিচ্ছে। বিজেপি বলছে বিকাশ, মোদি বলছে উন্নয়ন, একই কথা কিন্তু সাইন বোর্ড আলাদা।’

এরপরই সিপিএমের রাজ্য কমিটির সম্পাদক তোলেন আরজি কর প্রসঙ্গও। বলেন, ‘আরজি কর কাণ্ড দেখিয়ে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ আর সিবিআইয়ের আসল চেহারা। দিল্লি থেকে কলকাতা প্রকৃত সত্য প্রকাশ করতে চায় না। আমরা বলছি সব প্রকাশ করতে হবে। চন্দননগরে একজন নারীর মৃত্যু হয়েছে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোাপধ্যায় কিছু বলছে না।’ এরই রেশ টেনে মহম্মদ সেলিম এও জানান, সভা শেষে তিনি এবং মীনাক্ষী চন্দন নগরে ওই মেয়েটির বাড়ি যাবেন।

বাম সংগঠনের কথা প্রসঙ্গেও এদিন সেলিম বলেন, ‘গত তিন বছর মানুষকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেছি। ওরা মানুষকে ভাগ করতে চাইছে। দাঙ্গা হাঙ্গামা করছে। যে দাঙ্গা করলো তাকে মোদি পদ্মশ্রী দিল। আমাদের এর বিরুদ্ধেই লড়াই করতে হবে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, দাঙ্গাবাজদের মাথা গুড়িয়ে দিতে হবে। আমরা বলছি গুন্ডা দাঙ্গাবাজের কোন স্থান হবে না এই রাজ্যে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দাঙ্গা হয়েছে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কোন দাঙ্গা করতে দেওয়া হবে না। ধর্ম আর রাজনীতিকে আলাদা রাখতে হবে।’ এখানেই শেষ নয়, সেলিমের বক্ব্য উঠে আসে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও। এই প্রসঙ্গে সেলিম জানান, ‘ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘু, বিরোধী দলের লোকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন। আমার আমাদের দেশেও এই ঘটনা দেখেছি। বাংলাদেশে যারা সংখালঘুদের হয়ে লড়ছে আমরা তার পাশে। এই রাজ্যে আমাদের সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আমাদের দেশ বহুত্ববাদী। আরএসএস গোটা দেশে জাত নিয়ে বিভাজন করছে। আর মমতা বলেছিল আমাদের বিরুদ্ধে বিজেপিকে নিয়ে লড়াই করবে। আজ ওরা জোট করে চেপে বসেছে। বিজেপিকে দিয়ে তৃণমূলকে হটানো যাবে না তা আরজি কর প্রমাণ করেছে। মোহন ভগবৎ বললন, তাঁরা রাজ্যকে সমর্থন করবে। এরপর থেকে এক রিপোর্ট, একে এক করে সবাই ছাড় পাচ্ছে।’

এর পাশাপাশি সেলিম তুলে ধরেন মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গও। বলেন, ‘জিনিসের দাম বেড়েছে। কৃষকেরা দাম পাচ্ছে না। ‘আচ্ছে দিন’ না সর্বনাশ ডেকে এনেছে মোদি মমতা।’ এরই পাশাপাশি এদিনের এই সমাবেশ থেকে সিপিআইএম রাজ্য কমিটির সম্পাদক জানান, আগামী ২০ এপ্রিল ব্রিগেড সমাবেশ, গরিব মানুষের সমাবেশ হবে। সঙ্গে এ বার্তাও দেন, ‘আগামী ২০ এপ্রিল ব্রিগেড ভরানোর আগে নিজের পাড়ায় মহল্লায় লড়াই হবে প্রতিদিন লড়াই হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বলেছিলাম চোর ধরো জেল ভরো, সেই নির্বাচনে প্রতিরোধের স্পৃহা জেগেছিল। বাইনারি ভেঙে গিয়েছিল। সিপিআই(এম)কে শক্তিশালী করতে হবে, বামপন্থী ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। মানুষকে সাথে নিয়ে আমাদের চলতে হবে। মানুষ আমাদের পাশে এসেছে। ২৬ থেকে ২৬ এর লড়াই শুরু করবো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten + sixteen =