ব্রিগেড থেকে সেলিমের বার্তা নতুন লড়াই শুরুর

রবিবারের ব্রিগেড থেকে বার্তা ছড়িয়ে পড়ল নতুন লড়াই শুরুর। বিধানসভা নির্বাচনে জাতের লড়াইকে ভাতের লড়াইয়ে পরিণত করার বার্তাও দিল ব্রিগেড। বামেদের রবিবারের ব্রিগেডের সমাবেশের যাঁরা বক্তবয রাখেন তাঁদের মধ্যে নিঃসন্দে হেভিওয়েট বক্তা ছিলেন সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনিই শেষ বক্তা। মঞ্চে উঠতেই হাততালিতে ফেটে পড়ে গোটা ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড। সেই আওয়াজ আরও জোরালো হল তাঁর বক্তব্যের সূচনা পর্বে। সেলিম শুরুতেই বলেন, ‘যাঁরা দূরবীন দিয়ে লাল ঝান্ডা দেখতে পাচ্ছিল না, আজকের এই ব্রিগেড তাদের বুকে কাঁপন ধরাবে। কাজের জায়গার বৃত্ত ছোট হয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্র,রাজ্যে কোথাও নতুন করে নিয়োগ হচ্ছে না। যেখানেই নিয়োগ হচ্ছে,সেখানেই পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি। ২৬ হাজার মানুষের চাকরি গিয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাকে ঝামা ঘষে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।’
তবে বৈশাখের দুপুরে ব্রিগেডে কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি নিয়ে একটা প্রচ্ছন্ন চিন্তা ছিলই শীর্ষ নেতৃত্বের। তবে এদিন প্রকৃতি যেন কোথাও একটু সহাই ছিলেন বামেদের। আর তা প্রকাশ পেল সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্যে। এদিন তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের প্রতি প্রকৃতিও সহায়। তপ্ত রোদ ওঠেনি। উঠলেও এই ভিড় বুঝিয়ে দিচ্ছে লাল ঝান্ডার প্রতি জনতার আবেগ।’ সঙ্গে সেলিম এও মনে করিয়ে দেন, ‘লাল ঝান্ডা শুধু একটা কাপড়ের টুকরো না। এই পতাকা চিটফান্ডের টাকা দিয়ে কেনা হয়নি।’ এরপরই রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বলতে শুরু করেন তিনি। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে পরামর্শ দিয়ে বলেন,’সাম্প্রদায়িক হিংসা যে ছড়াবে, পুলিশকে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। না হলে আমরা রাজ্যের সব থানায় এফআইআর করব।’
দাঙ্গা নিয়ে কথা বলা শুরু করতেই বোঝা গিয়েছিল মুর্শিদাবাদ প্রসঙ্গ আসবেই। হলও তাই। সেলিম জানান,’আমি মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে গিয়েছিলাম, সুতিতে গিয়েছিলাম। কোথাও পুলিশের গুলিতে কোথাও হামলাকারীদের আক্রমণে মানুষ মারা গিয়েছেন।’ এরই রেশ টেনে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঠেকানো সম্পর্কে তাঁর পরামর্শ,’হিংসা দেখলে ডান্ডাগুলোকে মোটা করতে হবে। দেশ বাঁচাতে হলে আবার লাল ঝান্ডাকে মজবুত করতে হবে।’
এরই পাশাপাশি সিপিআইএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এদিন ও বলেন,’গরিবের লড়াই গরিব লড়বে। আমরা জাত-পাত, মন্দির-মসজিদে যদি ভাগ না হই, তাহলে লড়তে পারব। দেশ স্বাধীন করার লড়াই এভাবেই হয়েছিল। জমির লড়াই এভাবেই হয়েছিল। শরীরে যতক্ষণ এক বিন্দু রক্ত থাকবে এই দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে লড়াই লড়ে যেতে হবে। আমাদের লড়াই শিক্ষার জন্য, কাজের জন্য। মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির জন্য। লালঝাণ্ডার বাইরেও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে একজোট করতে হবে।’সেলিমের কথায় গরিব মানুষ যখন নিজেদের হক বুঝে নিতে এক হচ্ছে তখন ঐক্য ভাঙতে ধর্মের নামে ভাগ করছে বিজেপি ও তৃণমূল। আর এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন,’লড়াই আসলে হিন্দু মুসলমানের লড়াই না। গরিবের হয়ে লড়াই করতে হবে। শিক্ষার দাবিতে লড়াই করতে হবে। ২৬ এর লড়াই এখন থেকে শুরু হোক। গ্রামে গ্রামে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। ‘
এদিনের মঞ্চ থেকে উঠে আসে আরজি কর ধর্ষণ-খুন কাণ্ডও। যেখানে বিচার চাইলেন রাজ্যবাসী বলে দাবি সেলিমের। সেখানে  কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার বিচার পিছিয়ে দিচ্ছে বলেও জানান তিনি। আর এই প্রসঙ্গেই এদিন তিনি বলেন,’কেউ ভেবেছিল বিচারের দাবিতে মধ্যরাতে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নামবেন? আসলে মানুষ জাগ্রত হচ্ছেন।দিন পালটাচ্ছে। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ লালঝাণ্ডার ওপর হাত তুলতে ভাবতে হচ্ছে। গরিব মানুষ এককাট্টা হলে তাকে কেউ আঘাত করতে সাহস করে না। সে কারণে একতায় ফাটল ধরাতে চাইছে দুই দল। প্রতিদিন লড়াইয়ের নাটক হচ্ছে। আসলে আরএসএস’র স্ক্রিপ্টে দু’দলই নাটক করছে। কলকাতা পুলিশ বা রাজ্য পুলিশ ঘৃণাভাষণের বিরুদ্ধে একটিও মামলা করেনি।’ এদিন একইসঙ্গে কোথাও এক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও দেখা গেল সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদককে। বললেন, ‘আমাদের এই কর্মী বাহিনী, তাদের জন্য ছাউনি করতে হয়নি। প্রচণ্ড রোদে দুপুরবেলা কিভাবে বসবেন এই মানুষ মিডিয়া গবেষণা করছিল।’এই কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যেই ব্রিগেড থেকে তাঁর বার্তা,’আজ থেকে লড়াই শুরু।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 + three =