ধর্ম নির্বিশেষে এককাট্টা হয়ে জীবিকার লড়াইয়ে নামার বার্তা সেলিমের

যখন আরএসএস’র পরামর্শে বিজেপি এবং তৃণমূল যৌথভাবে ধর্মের নামে বিভেদ ছড়াতে নেমেছে তখন যাদবপুর থেকে মেদিনীপুর, ধর্ম নির্বিশেষে এককাট্টা হয়ে জীবিকার লড়াইয়ে শামিল জনতা। এমনই এক অবস্থায় সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীদের পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষ সব অংশকে সজাগ থাকতে হবে। বৃহস্পতিবার কলকাতার মুজফ্‌ফর আহমদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে থেকে এমনই বার্তা দিতে শোনা গেল সিপিআই(এম)-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে। এদিন সম্প্রীতি বজায় রাখার বার্তা দেয় রাজ্য বামফ্রন্টও।

এদিকে শুক্রবার দোল আবার শুক্রবারের নমাজ রয়েছে রমজান মাসে। বিজেপি দেশজুড়ে বিবাদ তৈরিতে নেমেছে প্রকাশ্যে। এ সময়েই রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী একেবারে সরাসরি ধর্ম তুলে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করছেন। এই প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, তথাকথিত বিরোধী দলনেতা বলছেন বিধানসভা থেকে মুসলিমদের চ্যাংদোলা করে বের করে দেবেন। এই মন্তব্য সংবিধানের বিপক্ষে, আইনের বিপক্ষে। তা’হলে পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিল না। পুলিশ মন্ত্রী চুপ কেন। অন্যসময় তো এই পুলিশ যে কাউকে হেনস্তা করছে।

এরই রেশ টেনে সেলিম এও বলেন, তথাকথিত বিরোধী দলের নেতা, যিনি মাওবাদীদের নিয়ে লুটতরাজ বুথ দখলের কারবার করেছিল তৃণমূলে থাকার সময়, সে বিধানসভা থেকে মুসলিমানদের বার করে দেওয়ার কথা বলছে। বিরোধী দলের নেতা সাংবিধানিক পদ, তিনি একথা বলা সাংবিধানিক দিক দিয়ে আইনত অপরাধ, ঘৃণার ভাষণ। যে জেতে সে বিধানসভায় থাকে। সিএএ, এনআরসি, ওয়াকফ বিল, উৎসব পালন নিয়ে ঘৃণা সব আরএসএস’র হিন্দুত্ব প্রকল্পের অংশ।

এর পাশাপাশি সেলিম এদিন এও বলেন, এ রাজ্যে বিধানসভায় মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব কমছে ২০১১ থেকে। অন্যদিকে বিজেপি তোষণের কথা বলে প্রচার চালাচ্ছে। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সুযোগ করে দিচ্ছেন।

বর্তমানে আলু চাষিরা ফসলের দাম পাচ্ছেন না, হিমঘরে ফসল রাখার জায়গা পাচ্ছেন না, বেকাররা কাজ পাচ্ছেন না, রাজ্যের ঋণ বিপুল, তখন বিধানসভায় আলোচনা হচ্ছে কে কত বেশি মহান ধার্মিক, কে কত বেশি ধর্মের নামে দাঙ্গাবাজ! আর এখানেই সেলিমের প্রশ্ন, কেন বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিল না তা নিয়েই। অথচ, অন্য বিষয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। হোলির মুখে উত্তেজনা তৈরি করা সত্ত্বেও কেন পুলিশমন্ত্রী কেন নীরব এদিন সে প্রশ্নও তোলেন সেলিম। কেন যাঁরা ‘ছি ছি’ করেছিল তারা এখন কেন নীরব। কেন তাঁরা বলছেন না এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়। একইসঙ্গে এও বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে চ্যাংদোলা করে ফেলে দেওয়ার এক্তিয়ার কারও নেই।

সেলিম বলেন, সবটা হচ্ছে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে যখন মানুষ জীবিকার লড়াই করছে তখন বিজেপি-তৃণমূল মোহন ভাগবতের পরামর্শে রাজ্যের সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইছে, বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে। সিপিআই(এম) এবং বামফ্রন্ট কর্মীদের যেমন সতর্ক থাকতে হবে তেমনি প্রতিটি ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের দায় এবং দায়িত্ব দাঙ্গাবাজরা যাতে সমাজে স্থান না পায় তা নিশ্চিত করা।

এরই পাশাপাশি সেলিম আজ স্মরণ করেন পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের নির্যাতিতাকে। কারণ, তাঁর আজ মৃত্যুদিন। স্মরণ করছি এজন্য যে এরপরও অসংখ্যা নির্যাতিতা বিচার পাননি, তদন্ত করে বিচার চললেও শাস্তি হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী যদি প্রশ্রয়দাতা হন এমনই হয়।

মেদিনীপুরে অঞ্চল সভাপতি মহিলাকে দপ্তরে ধর্ষণ করলেন। অপরাধী ধরা পড়েনি। সরকারে যারা থাকে তাদের দায়িত্ব যদি হয় ভোগ করব, লুট করব, আইনের শাসন থাকে না। জমি, চাকরি থেকে মহিলাদের সম্মান সবকিছুই লুট করতে চায়।

তিনি বলেন, আবার লুটেরাদের আরেক দল বিজেপি দাঙ্গা বাঁধিয়ে দোকানপাট লুট করে।

তিনি বলেন, মহারাষ্ট্রের রত্নগিরিতে, গুজরাটে, উত্তর প্রদেশে, মধ্য প্রদেশে- উৎসবকে ঘিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে ধর্মবিশ্বাসকে অস্ত্র করে শানানো হয়। অন্য ধর্মের মানুষের ওপর চড়াও হয়, এই অপরায়ণ, এটা আমাদের রাজ্যে ছিল না। এখন পশ্চিমবঙ্গেও হচ্ছে।

এর পাশাপাশি তিনি এদিন এও বলেন, রবীন্দ্রভাবনা আরএসএস-বিজেপি’র সঙ্গে মেলে না। সে কারণে শান্তিনিকেতনে কয়েকবছর ধরে বসন্তোৎসব বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সমন্বয়ের ধারণা থেকে রবীন্দ্রনাথ এই রীতি চালু করেছিলেন বিশ্বভারতীতে।

এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, চিট ফান্ড ধরা পড়েছিল যেদিন, তারপর থেকে ৬ মাস জমি হস্তান্তরের স্ক্রুটিনি করা হোক। আগেও বলেছিলাম, এখনও বলছি। সব হস্তান্তর বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। সরকার করেনি। এদের এখন টাকা ফেরাতে হবে। সম্পদ উদ্ধার দেখা যাবে অর্ধেকও নয়। বেশিরভাগটা তৃণমূলের দখলে ঢুকেছে।

এদিনের বৈঠকে আসে ওষুধের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গও। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একদিকে ওষুধের দাম বাড়ছে, আরেকদিকে ভেজাল ওষুধ ছেয়ে যাচ্ছে। যে কারণে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যুক্ত সব অংশকে যৌথ প্রতিবাদ জানাতে হবে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ইলেকটোরাল বন্ড নিয়ে এমন সংস্থাকে চলতে দিচ্ছে। এখন তো সরকারি মজুতে ভেজাল ধরা পড়ছে। কথাবার্তা চলছে, সব অংশকে নিয়ে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ, রোগী, মানবাধিকার কর্মী, চিকিৎসক, ওষুধ দোকানদার যৌথ লড়াইয়ের জন্য।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 − ten =