বিজেপির প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন বর্তমান বেশ কয়েকজন সাংসদ

লোকসভা নির্বাচন প্রায় দোরগোড়ায়। চলতি মাসেই নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশ করার কথা কমিশনের। তবে নির্বাচনের প্রস্ততি অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। শাসক দল বিজেপিও কোমর বেঁধে নিচ্ছে নির্বাচনী প্রস্তুতি। এবারের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং ৩৭০ আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন। এনডিএ-এর তরফে মোট ৪০০ আসন জয়ের টার্গেট সেট হয়েছে। বিজেপি একাই ঘরে তুলতে চাইছে ৩৭০ আসন। এই আবহে লোকসভা নির্বাচন বিজেপি কাদের প্রার্থী করবে তা নিয়ে একাধিক আলোচনা চলছে পদ্মশিবিরের অন্দরে। বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থী চূড়ান্ত করার ব্যাপারে বৈঠক হয় বিজেপির সদর দফতরে। শোনা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই প্রথম প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারে বিজেপি।

সূত্রের খবর, প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য বিজেপির এবার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জোর দিচ্ছে। যেমন কাকে প্রার্থী করা যেতে পারে তা স্থির করতে সাধারণ মানুষের থেকে প্রতিক্রিয়া সংগ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রার্থীদের নিয়ে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন ও উচ্চ স্তরে কৌশলগত আলোচনা হয়েছে দলের অন্দরে। এইসব পর্যালোচনা করেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর। এই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার ব্যাপারে বৃহস্পতিবার বিজেপির সদর দফতরের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দলের সভাপতি জেপি নাড্ডা। এছাড়াও বৃহস্পতিবারের ওই বৈঠকে যোগ দেন উত্তর প্রদেশ, গোয়া, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ডের বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীরা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মধ্য প্রদেশের বিজেপির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানও। এরপরই জল্পনা শুরু হয় এবার নির্বাচনে কাদের কাদের নাম বাদ পড়ার সম্ভাবনা তা নিয়েই।

বিজেপি সূত্রে খবর, উত্তর প্রদেশে ৩০ থেকে ৪০টি আসনের মধ্যে ৮ থেকে ১০জন সাংসদের নাম এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে। ৮০টি লোকসভা আসনে ১৫-২০টি আসনে প্রার্থী বদল হতে পারে। মধ্যপ্রদেশের সার্ভে রিপোর্ট দেখে যা পর্যালোচনা হয়েছে সেই অনুসারে বিদিশা, বালাঘাট, নর্মদাপূরম, ইন্দোর আসনে বর্তমান যাঁরা সাংসদ রয়েছেন তাঁরা এবার টিকিট নাও পেতে পারেন। শোনা যাচ্ছে ভোপাল থেকে এবার টিকিট নাও পেতে পারেন প্রজ্ঞা ঠাকুর। বদলে এই আসন বিজেপি ভরসা করতে পারে নয়া কোনও মুখে। বিদিশা থেকে টিকিট পেতে পারেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। অন্যদিকে সাতনায় বর্তমান সাংসদ গণেশ সিং। তবে তিনি বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। এর প্রভাব পড়তে পারে লোকসভা নির্বাচনে তাঁর টিকিট পাওয়া উপর। সূত্রের খবর, বিজেপির অন্দরে এক পক্ষ চাইছে তিনি পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন। অন্যদিকে জবলপুরের বর্তমান সাংসদ রাকেশ সিং। তিনি এবার টিকিট পেতে পারেন। তবে সকলেই যে এ ব্যাপারে একমত পোষণ করছেন তা কিন্তু নয়। সার্ভে রিপোর্টে আরও দুই থেকে তিন জনের নাম উঠে আসছে। মধ্যপ্রদেশের পাঁচ লোকসভা সিটে আগেরবার যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবার তাঁরা টিকিট নাও পেতে পারে। ছয় সাংসদ বিধানসভা নির্বাচন লড়েছেন। তাঁদের জায়গায় স্থান পেতে পারেন নতুনরা। উত্তরাখণ্ডের দুইটি আসনে আগেরবারের প্রার্থী বদলের সম্ভাবনা। হরিদ্বার ও পৌরিতে নয়া মুখে ভরসা করতে পারে গেরুয়া শিবির। ছত্তিশগড়ে এক থেকে দুইটি আসনে বদল আনা হতে প্রার্থীতে। তেলঙ্গানায় তিন সাংসদ জি কিষাণ রেড্ডি, অরবিন্দ ধরমপুরী, সঞ্জয় ভান্ডি এই তিনজনের ফের একবার ভরসা রাখতে পারে দল। তবে তেলেঙ্গনার রাজনৈতিক সমীকরণ মাথায় রেখে কয়েক জন নতুন মুখকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাতে পারে বিজেপি। অন্যদিকে দিল্লিতে ৩-৪টি আসনে পুরনো সাংসদদের উপর আর ভরসা করতে চাইছে না দল। এই সব আসনগুলিতে নতুন নাম ঘোষণার সম্ভাবনা। বীরেন্দ্র সাসদেভা, হর্ষ মালহোত্রার নাম থাকতে পারে। থাকতে পারে সতীশ উপাধ্যায় নামও। চাঁদনিচক থেকে লড়তে পারেন বিষ্ণু মিত্তল। উঠে আসছে কপিল মিশ্রর নামও।

তারকা প্রার্তীদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্ভবত তাঁর পুরনো ঘাঁটি বারাণসী থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। লখনউ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। অন্যদিকে গান্ধিনগর থেকে লড়তে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বাংলার আসানসোলে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহার বিপরীতে ভোজপুরী তারকা পবন সিংকে প্রার্থী করতে পারে।

তামিলনাড়ুর প্রার্থীদের মধ্যে তামিলনাড়ু বিজেপির প্রধান আন্নামালাইয়ের নামও থাকতে পারে।

কেরলে কেন্দ্রীয় বিদেশ ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ভি মুরালিধরন কেরালার তিরুবনন্তপুরম থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।

দিল্লি থেকেবিজেপি নেতা মনোজ তিওয়ারি উত্তর পূর্ব দিল্লি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন এবং তাঁর নাম প্রার্থীদের প্রথম তালিকায় থাকতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।

তেলেঙ্গানার ১৭টি আসনের মধ্যে চার থেকে পাঁচটি আসনের প্রার্থী নিয়ে বিজেপির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। প্রথম তালিকায় এসব আসনের জন্য প্রার্থীদের ঠাঁই হতে পারে। তিন বর্তমান সাংসদ, জি কিষাণ রেড্ডি, বান্দি সঞ্জয় কুমার, এবং অরবিন্দ ধর্মপুরীও আবার টিকিট পেতে পারেন।

অসমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ডিব্রুগড় থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। অসমের আসনগুলি বিজেপির জোট এজিপি এবং ইউপিপিএল- এর জন্যও বরাদ্দ করা হয়েছে । এজিপি বারপেটা এবং ধুবরি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, যখন ইউপিপিএল কোকরাঝাড় আসন থেকে প্রার্থী দেবে। তবে এই সব নামগুলো উঠে এসেছে প্রাথমিক ভাবে। চূড়ান্ত এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়নি দলের তরফে। খুব তাড়াতাড়ি বিজেপির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে তা প্রকাশ করা হবে খবর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − three =