সন্দেশখালির মানুষের অভিযোগ কোটি কোটি টাকা আয়ের জন্য শাসকদলের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে কৃষকের জমি দখল করেছেন শাহজাহান-শিবু। এছাড়াও উঠেছে একের পর এক অভিযোগ। সঙ্গে দেখিয়েছেন নারকীয় অত্যাচারের বর্ণনা। এই সব ঘটনা নিয়ে এতদিন শুধু চেঁচিয়ে গলাই ফাটিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তবে এবার সেই অভিযোগের মান্যতা দিল উপগ্রহের চিত্র। স্যাটেলাইট ইমেজে ধরা পড়ল শাহজাহান-শিবুর লুঠ-মডেলের জ্বলন্ত দলিল । শুধু তাই নয়, এই স্যাটেলাইট ইমেজে ধরা পড়েছে চাপের মুখে জমি দিয়েও মেলেনি বিঘা পিছু ৭ থেকে ১০ হাজার টাকার ঘটনাও। এদিকে স্যাটেলাইট ছবিতে এও ধরা পড়েছে, দু বছর আগে যে জায়গায় ছিল সবুজ জমি আর দিগন্ত বিস্তৃত ভেড়ি সেই ফসলি জমিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল নোনা জল। এই ঘটনায় যাঁরা পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের কপালে জুটেছে মার। পেটের কথা ভেবে মুখ খুললে জুটেছে মার। সব মিলিয়ে বছর দুই আগের ইমেজের সঙ্গে এখনকার ইমেজের আকাশ পাতাল ফারাক।
ছবিতে ধরা পড়েছে ২০১১ সালে এই জমি ছিল শস্য শ্যামলা। গোটা নির্যাতনের ছবি ধরা পড়েছে উপগ্রহতেই। এবার সেই উপগ্রহের চিত্র এসেছে সংবাদমাধ্যমের হাতে। সেটাই বলে দিচ্ছে, আজ এতদিন পর কেন সন্দেশখালির মানুষ রাস্তায় বাঁশ-লাঠি নিয়ে নেমেছেন। কেন জমি ফেরতের দাবিতে আজও চলছে আন্দোলন। ৮ নম্বর মাঝেরপাড়াতেই স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গিয়েছে, পুরো এলাকাই ছিল শস্য-শ্যামলা। কিন্তু ২০২৪ সালের ছবিতে ধরা পড়েছে, শেষ ২ বছরে তা পুরোটাই জলাশয়। ২ বছরের ছবিতে আকাশপাতাল ফারাক।
এই প্রসঙ্গে সন্দেশখালির এক বাসিন্দার গলাতেও ধরা পড়েছে এই একই ঘটনার ছবি। জানিয়েছেন জমিতে নোনা জল ঢোকানোর প্রতিবাদ করেছিলাম। তখন আমার বউকে বাড়ি থেকে নিয়ে চলে গেছে। তখন আমি আর কী করি। আমি কী আর ওদের সঙ্গে মারামারি করতে পারি। প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৬ মাস বাড়িতে বসেছিলাম।’
গ্রামের এক চাষি এই প্রসঙ্গে জানান, ‘এঁরা মনে করলেন, মাছ চাষে অনেক বেশি লাভ। আর ভাবল এটা তো আদিবাসীদের জমি। ভয় দেখিয়ে সহজেই নিয়ে নেওয়া যাবে। জোর করে দখল করে টাকা দিল না। কেউ জমি না দিলে, জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে দিত। মাছের ভেড়িতে তো বাঁধ দিচ্ছে জেসিবি। এখন কাজ খুঁজতে যেতে হচ্ছে কলকাতায়।’ আর সেই কারণেই সন্দেশখালির বাসিন্দাদের অনেকেই এখন বাধ্য হয়ে ভিন রাজ্যের শ্রমিক।
এ সব কিছুরই প্রতিফলন পড়েছে শাহজাহান বেপাত্তা হয়ে যাওয়া পরই। সেই প্রথম দিন থেকে, যেদিন বাঁশ-লাঠি নিয়ে সন্দেশখালির সরবেড়িয়া বাজারে রাস্তায় নেমেছিলেন হাজার হাজার নির্যাতিতারা, সেদিন থেকে তাঁরা গলা ফাটিয়েছিলেন। অভিযোগ করেছিলেন, কীভাবে তাঁদের ওপর জুলুম হয়েছে। কীভাবে তাঁদের ওপর অত্যাচার চালিয়ে জমি লুঠ হয়েছে, কীভাবে কথা না মানলে তাঁদের ওপর চলেছে শারীরিক নির্যাতন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছে পুলিশ। তারই জেরে শাহজাহান শিবুরা আজ গারদের পিছনে। কিছু মানুষ তাঁদের জমি ফেরতও পেয়েছেন।