ছাব্বিশের নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোট অর্থাত্ মুসলিম ভোটের জন্য আহ্বান জানালেন বিজেপির নবনির্বাচিত রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। বিধানসভা নির্বাচনের আগে নতুন দায়িত্ব পেয়েই শমীক বুধবার মুসলিমদের উদ্দেশে দিলেন বিশেষ এক বার্তা। বৃহস্পতিবার তিনি মুসলিমদের উদ্দেশ্যে জানান, ‘বিজেপি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নয়, মুসলমানদের বিরুদ্ধে নয়।‘ পাশাপাশি এও মনে করিয়ে দেন, ‘মরছে মুসলমান, মারছে মুসলমান’। সঙ্গে প্রশ্নও ছুড়ে দেন, কাদের জন্য এই পরিস্থিতি বাংলার সে ব্যাপারেও। ২০২৬–এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে শমীকের এই বার্তা য়ে বিশেষ অর্থবহ তা মনে করছেন রাজনৈতিক কারবারিরা।
বৃহস্পতিবার কলকাতার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে বিজেপির রাজ্য সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রথমেই তুলে ধরেন মুসলিম ভোট প্রসঙ্গ। আর এই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘বিজেপির লড়াই সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে নয়, মুসলমানের বিরুদ্ধে নয়।‘ এখানেই শেষ নয়, শমীক এদিন এও বলেন, ‘যাঁরা আমাদের ভোট দিচ্ছেন না, যাঁরা আমাদের থেকে দূরে থাকছেন, যদি মনে করেন বিজেপি অস্পৃশ্য, অচ্ছ্যুত, আমাদের ভোট দেবেন না। কিন্তু তাঁরা আয়নায় নিজেদের দিকে দেখুন। গত ৩ বছরে যত খুন হয়েছে মুসলমানের সংখ্যা কত! ৯০ শতাংশ মুসলমান খুন, মরছে মুসলমান, মারছে মুসলমান। আর তাঁদের পরিবার বলছে সিবিআই তদন্ত চায়। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চায়।‘
এরপরই তুলে ধরেন ভারতবাসীর একাত্মতার কথা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা। যেখানে ধর্মের ভিত্তিতে নেই কোনও দ্বন্দ্ব। এই প্রসঙ্গেই শমীক এদিন এও বলেন, ‘এমন বাংলা চাই, যেখানে দুর্গাপুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রা ও মহরমের মিছিল একই সঙ্গে যাবে।’
সম্প্রতি নদিয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের গণনার দিন তৃণমূলের বিজোয়াল্লাসে বোমাবাজির অভিযোগে বালিকা তামান্না খাতুনের মৃত্যুর ঘটনার পর শমীকের এদিনের এই মন্তব্য এক আলাদা তাৎপর্য পাচ্ছে তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অন্যদিকে, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে বেছে বেছে হিন্দুদের খুন করার ঘটনাও শমীকের এই ধরনের বক্তব্য এক পৃথক মাত্রা দেয়। কারণ, ভোটবাক্সে বরাবরই সাধারণত মুসলিম ভোট ব্রাত্য থাকে বিজেপির। বারবার হিন্দু ভোট চেয়েই সরব হতে দেখাও গেছে শুভেন্দু অধিকারী–সহ বিজেপির নেতাদের। ‘হিন্দুদের দল‘ বলেও বিজেপি একবারে স্পষ্টভাবেই পরিচিতি পেয়ে আসছে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে রাজ্যের মুসলিমদের উদ্দেশে যে বার্তা দিলেন শমীক, তা গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, রাজ্য সভাপতি হয়েই বিজেপির মধ্যে আদি–নব্য বিবাদ নিয়ে মুখ খুলতে দেখা গেল শমীক ভট্টাচার্যকে। তাঁর এদিনের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, গান্ধি নীতি, আদি–নব্যকে নিয়ে একসঙ্গে চলা ও সংখ্যালঘুদের মন জয় করাই তাঁর পাখির চোখ। প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিয়েছিলেন ‘দাবাং নীতি’। সুকান্ত মজুমদার সে পথে চলেননি ঠিকই তবে কোথাও একটা দিলীপ ঘোষের প্রভাব ছিলই। কিন্তু উত্তরসূরিদের বাঁধা ধরা পথে হাঁটতে নারাজ শমীক। প্রথম থেকেই শব্দ বাছাইয়ে তিনি বেশ বিস্তর হিসেবি। সঙ্গে এও জানান, ‘মার কা বদলা মার’ নয়, বরং তাঁর ভরসা গান্ধিগিরিতেই। আর এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, ‘বিজেপির লড়াই কোনও সংখ্যালঘু বা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নয়। সংখ্যালঘুদের ঘরে যে ছেলেরা হাতে পাথর নিয়ে ঘুরছেন, তাঁদের হাতে বই ধরাতে চাই। যারা তলোয়ার নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন, তাঁদের তলোয়ার কেড়ে নিয়ে কলম ধরাতে চাই। এটা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি করে দেখাক।’
এরই পাশাপাশি এদিন তিনি জোর দিলেন আদি–নব্য দ্বন্দ্ব বন্ধ করার ব্যাপারে। দিলীপ জমানার শেষ দিকে এবং সুকান্ত জমানায় বঙ্গ বিজেপির অন্যতম ‘মাথাব্যথা’-র কারণ ছিল এটাই যা ‘আড়ালে স্বীকার করেন দলের প্রবীণ নেতারাই। তবে এদিন ব্যাটন হাতে নিয়েই এই সমস্যাকে সমূলে উৎখাত করতে বিশেষ বার্তা দিযে শমীক স্পষ্ট ভাবে জানান, ‘নতুন মানুষ দলে না এলে, দল বাড়বে না। কুমোরটুলি থেকে অর্ডার দিয়ে আমরা মানুষ তৈরি করতে পারব না। তেমনই জমানত জব্দ হবে জেনেও যাঁরা পতাকা হাতে ধরে এগিয়েছেন , তাদের জন্য বিজেপি ১ শতাংংশ থেকে এখন এই জায়গায়‘।
শমীক এদিন এও বলেন, ‘ছাব্বিশের নির্বাচনে তৃণমূলের বিসর্জন হবে। বাংলার মানুষ স্থির করেছেন। বাংলার মানুষ জানে, বিজেপিই একমাত্র তৃণমূলকে হারাতে পারবে। একটা দল সমাজকে বাজারে পরিণত করেছে।‘ দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলকে কটাক্ষের সুরে বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি বলেছেন, ‘জগন্নাথও বিদায় দেখতে চান, বাংলার মানুষের মুক্তি চান। বঙ্গোপসাগরেই তৃণমূলের বিসর্জন হবে। তৃণমূল হারতে চলেছে।‘