নির্মীয়মাণ রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। সেই শঙ্করাচার্যই এবার সমর্থন জানালেন রাহুল গান্ধিকে। বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে সংসদে হিন্দু বিদ্বেষী মন্তব্য করার যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল কেন্দ্রের তরফ থেকে সেই ইস্যুতে উত্তরাখণ্ডের শঙ্করাচার্য অবিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী জানান, ‘লোকসভায় রাহুল যে বক্তৃতা দিয়েছেন তাতে হিন্দু ধর্মের প্রতি কোনও অশ্রদ্ধা নেই। বরং রাহুল যা বলেছেন তা সম্পূর্ণ সঠিক।’ শঙ্করাচার্যের সংযোজন, ‘ধর্মের অর্থ আসলে ধারণ করা। সেখানে ঘৃণার জায়গা নেই। স্রেফ হিন্দু নয়, যে কোনও ধর্মের ক্ষেত্রেই এ কথা সত্যি।’
লোকসভায় বিরোধী দলনেতা হিসেবে প্রথমবার ভাষণে তীক্ষ্ণ বক্তব্য রাখেন রাহুল গান্ধি। সঙ্গে সংসদে দাঁড়িয়ে মহাদেবের ছবি দেখান রাহুল। একইসঙ্গে অভয়মুদ্রা দেখিয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন কংগ্রেসের রায়বরেলির সাংসদ। এই অভয়মুদ্রা প্রতীকের সঙ্গে সব ধর্মের কী যোগসূত্র, তা এক এক করে বর্ণনা করেছিলেন রাহুল। তা নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের শাসকদলকে আক্রমণ করতে গিয়ে রাহুলের মুখে শোনা যায় ‘হিন্দুত্ববাদ’ প্রসঙ্গ। বিজেপিকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘হিন্দুরা কখনওই হিংসা ছড়ায় না। ধর্মের নামে গোটা দেশে হিংসা এবং ঘৃণা ছড়িয়ে চলেছে বিজেপি।’ তাঁর এই মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। রাহুলের ভাষণের মাঝেই খোদ প্রধানমন্ত্রী উঠে দাঁড়িয়ে বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘গোটা হিন্দু সমাজকে উদ্দেশ্য করে যে মন্তব্য করা হচ্ছে তা অত্যন্ত গুরুতর।’ বিজেপি সমর্থকদের অভিযোগ ছিল, হিন্দু বিদ্বেষী মন্তব্য ছড়াচ্ছেন কংগ্রেস সাংসদ। এদিকে এক মৌলবি দাবি করেন, ইসলামের সঙ্গে অভয়মুদ্রার কোনও যোগ নেই। যা নিয়ে আপত্তি তোলেন স্পিকার।
এই ঘটনা নিয়ে শঙ্করাচার্যরাও জানান, তবে কংগ্রেস নেতার মন্তব্যে হিন্দু ধর্মের কোনও অবমাননা নেই বলেই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন শঙ্করাচার্য। বরং রাহুলের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলেই তাঁর দাবি। শঙ্করাচার্যের অভিযোগ, ‘রাহুলের বক্তব্যের নামে অর্ধসত্য প্রচার করা হচ্ছে।’ এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, হিন্দু ধর্মের যে কোনও বিষয়ে তাঁদের মন্তব্য সর্বাধিক প্রাধান্য পায়। রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার সময়ও দেশের চার শঙ্করাচার্যের আপত্তি নিয়ে তুমুল চর্চা হয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, সংসদের অন্দরে বিরোধী দলনেতার বক্তব্যের মাঝেই আসরে নামতে হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের। প্রধানমন্ত্রী দু’বার, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ছ’বার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দু’থেকে তিনবার, কৃষি মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহ্বান একবার এবং ভূপেন্দ্র বাঘেল একাধিকবার উঠে দাঁড়িয়ে বিরোধিতা করেন। এভাবে কোনও দলকে দোষারোপ করা যায় না বলে উল্লেখ করে সোচ্চার হন অমিত শাহ। একইভাবে রাজনাথ সিং সহ অন্যান্য বিজেপি নেতারাও রাহুলের বিরোধিতা করেন সংসদে বসেই। সেই আবহ ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। বিজেপি সমর্থকদের অধিকাংশই রাহুলের মন্তব্যের বিরুদ্ধে সরব হন।