গ্রেফতার শেখ শাহজাহান। মিনাখাঁর বামনপুকুর বাজার এলাকায় খ্রিস্টান পাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে, এমনটাই খবর পুলিশ সূত্রে।সঙ্গে এও জানা যাচ্ছে বৃহস্পতিবারই তাঁকে পেশ করা হবে বসিরহাট আদালতে। রাজ্য পুলিশের ডিজি-র সন্দেশখালিতে রাত্রিযাপনের পরই শাহজাহানের গ্রেফতারি নিয়ে একটা জল্পনা চলছিল। অনেকেই ধারনাও করছিলেন এবার হয়তো শেখ শাহজাহান গ্রেফতার হবেন। কিন্তু শাহজাহানের গ্রেফতারিতে কোথাও একটা আইনি জটিলতা থেকেই যাচ্ছিল। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছিলেন, পুলিশ ও শাসকদলের ছত্রছায়াতেই রয়েছেন শাহজাহান। গত রবিবার প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘কোথাও কোনও সংশয় রাখবেন না, যে শাহজাহানকে আড়াল করা হচ্ছ। শাহজাহানকে যদি কেউ আড়াল করে, তাহলে সেটা জুডিশিয়ারি ডিপার্টমেন্ট।’ এরপর তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, আগামী সাত দিনের মধ্যেই গ্রেফতার হবেন তৃণমূল নেতা শাহজাহান। দলের সাত দিনের ডেডলাইনের ৩দিনের মাথায় গ্রেফতার হলেন তিনি।
গত ৫৫ দিন ধরে বঙ্গ রাজনীতিতে একটাই নাম ঘুরপাক খেয়েছে। তা হল শেখ শাহজাহান। আর তাঁকে ঘিরে গত দেড় মাস ধরে রাজ্য রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই সন্দেশখালি। সরবেড়িয়া গ্রাম যে অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল, তা ছড়িয়ে পড়ে জাতীয় রাজনীতিতেও। ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন, জাতীয় মহিলা কমিশনকেও। রেশন দুর্নীতিতে জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা। সেদিন বাংলা এক বেনজির ঘটনার সাক্ষী থাকে। অভিযোগ ওঠে. শেখ শাহজাহানের বাড়ির দরজার তালা ভাঙার চেষ্টা করতেই হাজার হাজার মহিলা পুরুষ ইডি-র দিকে তেড়ে এসেছিলেন লাঠি, বাঁশ, লোহার রড হাতে। তাঁদের কাছে শেখ শাহজাহান ভগবান, তিনি কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকতেই পারেন না। সেদিন ইডি আধিকারিকদের মার খেতে হয়েছিল। সিআরপিএফ জওয়ানদের ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালাতে হয়েছিল। মাথা ফেটেছিল ২ ইডি আধিকারিকের। তখন থেকেই শেখ শাহাজাহান বেপাত্তা।
এরপর বেশ কিছুদিন ধরে কেবল সেখানকার মানুষ, যাঁরা সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছেন, তাঁরা কেবল মুখ খুলেছেন শাহজাহানের পক্ষেই। এরপর আস্তে আস্তে হঠাৎ-ই মোড় ঘুরতে শুরু করে। উঠে আসতে থাকে একের পর এক অভিযোগ। গ্রামের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, জমি দখলের। প্রথম প্রথম অভিযোগ করছিলেন, তেভাগা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা আন্দোলনকারীদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের জমি দখলেরও অভিযোগ ওঠে। এরপর গ্রামের মহিলারা সংগঠিত হন। ধীরে ধীরে উঠে আসে শিবু হাজরা, উত্তম সর্দাররা। শিবু-উত্তমদের বিরুদ্ধে সামনে আসে নারী নির্যাতনের অভিযোগও। লাঠি-বাঁশ হাতে রাস্তায় নামে গ্রামের আদিবাসী মহিলারা। সে বিক্ষোভ থেকে উঠে আসতে থাকে নারী নির্যাতনের একের পর এক ভয়ঙ্কর অভিযোগ। দলীয় কার্যালয়ে রাতে ডেকে নিগ্রহেরও অভিযোগ ওঠে। এরপর গ্রাম জ্বলতে থাকে। বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা আগুন ধরিয়ে দেন শিবু-উত্তমের বাগানবাড়ি, মাছের ভেড়িতে। সর্বপ্রথম গ্রেফতার হন উত্তম সর্দার। তখনও শিবু অধরা। গ্রামে তখনও জ্বলছে বিক্ষোভের আগুন। এরপরই সন্দেশখালি জুড়ে জারি হয় ১৪৪ ধারা। গ্রামে পৌঁছয় জাতীয় মহিলা কমিশন, রাজ্য মহিলা কমিশন, জাতীয় এসসি-এসটি কমিশন। যান রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসও। নির্যাতিতাদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।