তিনি কিছুই করেননি, তাঁর শাস্তি হবে না, এমনটাই দাবি ছিল সৌরভের

তিনি কিছু করেননি। তাঁর শাস্তি হবে না। গ্রেফতারের আগে এমনই প্রত্য়য়ের সুর শুনেছিলেন সৌরভের মা প্রণতি চৌধুরী শুনেছিলেন তাঁর ছেলের গলায়। সঙ্গে এও জানিয়েছিলেন, তাঁর ভুল একটাই, মৃত স্বপ্নদীপের বাবাকে বলেছিলেন, তাঁর ছেলের খেয়াল রাখবেন।

সৌরভের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায়। তিনি গ্রেফতার হতেই সেই খবর পৌঁছে যায় বাড়িতে। এরপর থেকেই তাঁর পরিবারের কপালে চিন্তার ভাঁজ। ছেলের গ্রেফতারির খবর পেয়ে ভেঙে পড়েছেন সৌরভের বাবা নিরূপ চৌধুরী। একনাগাড়ে কেঁদে চলেছেন মা প্রণতি চৌধুরী। পুরো পরিবারের একটাই দাবি, সৌরভ নির্দোষ। তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। সৌরভের মা প্রণতি দেবী বারবার একই কথা বলছেন, ‘স্বপ্নদীপের মৃত্যুতে আমার ছেলে দায়ী নয়। আমার ছেলে ও রকম ছেলেই না। এটা যাদবপুরের ছেলেরাও বলবে যে, সৌরভ এ কাজ করতে পারে না।’ সঙ্গে এও জানান, ‘সন্ধেবেলা জানতে পারি যে সৌরভকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমার সঙ্গে বিকেলেও ওর কথা হয়। ও বলে, আমি কোনও ভুল করিনি মা। আমার শাস্তি হবে না। আমি কাউকে র‌্যাগিং করিনি। কোনও দিন করিনি। আমার একটাই ভুল যে,  স্বপ্নদীপের বাবাকে বলেছিলাম আমি লক্ষ রাখব।’  ঘটনাচক্রে, হস্টেলে যে ‘গেস্ট’ হিসাবে থাকা যায়, সে কথা স্বপ্নদীপ এবং তাঁর বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডু জানতে পারেন সৌরভের মাধ্যমেই। এমনটাই দাবি করেছেন স্বপ্নদীপের বাবা। স্বপ্নদীপের বাবা পুলিশকে জানান, গত ৩ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একটি চায়ের দোকানে তাঁর সঙ্গে সৌরভের আলাপ। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ জানান, ২০২২ সালে তিনি এমএসসি পাশ করেছেন। সৌরভের কথায় ভরসা পেয়েছিলেন রামপ্রসাদ। সৌরভের হাত ধরে বলেছিলেন, ছোট ভাইয়ের মতো স্বপ্নদীপকে দেখতে। সেই সৌরভকেই ‘ঠান্ডা মাথার খুনি’ বলে শুক্রবার এমন মন্তব্যও করতে দেখা যায় স্বপ্নদীপের বাবাক। তাঁর অভিযোগ, কয়েক জন দল বেঁধে স্বপ্নদীপকে খুন করেছেন। তিনি এর বিচার চান। তিনি স্পষ্টতই জানান, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সৌরভের নেতৃত্বে আমার বড় ছেলের উপর অত্যাচার করা হয়েছে। ওঁরাই আমার ছেলেকে নীচে ফেলে মেরে দিয়েছে।’ আর এই কারণেই  ছেলের গ্রেফতারির জন্য মৃত স্বপ্নদীপের বাবাকেই দায়ী করছেন সৌরভের মা। তাঁর দাবি, ‘আমার ছেলে নির্দোষ। ওকে ফাঁসানো হয়েছে। স্বপ্নদীপের বাবা-মা ফাঁসিয়েছে। আমার ছেলের নাম বার বার নেওয়া হচ্ছে।’ এই অভিযোগ প্রসঙ্গে সৌরভের মা এও জানান, ‘আমার ছেলে ৬ বছর যাদবপুরে রয়েছে। কেউ কোনও দিন ওর নামে একটাও খারাপ কথা বলেনি। আমাদের বাইরে রাখার সামর্থ্য নেই। হস্টেলের ছেলেরাও ওকে ভালবাসে। তাই হস্টেলে ছিল। বলেছিল, একটা চাকরি পেলেই হস্টেল ছেড়ে দেবে। চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছিল। হস্টেলে তো এ রকম অনেকেই রয়েছে। সেই হিসাবে ও ছিল। এক বার ঘর ভাড়াও নিয়েছিল। কিন্তু থাকতে পারেনি একা। তাই আবার হস্টেলের ছেলেদের সঙ্গে কথা বলে হস্টেলে ঢোকে।’ ছেলের গ্রেপ্তারির খবর পেয়ে শনিবার ভোরে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন সৌরভের বাবা। তিনি জানান, ‘ছেলে অন্যের উপকারে সবসময় ঝাঁপিয়ে পড়ত। স্বপ্নদীপেরও পাশে দাঁড়ায় সে। কাউকে খুন করতে পারে ও ভাবতেই পারি না। ও নির্দোষ। সত্যি যদি কোনও দোষ থাকে তবে শাস্তি হোক।’

এদিকে সৌরভ যাদবপুরের প্রাক্তনী হওয়া সত্ত্বেও দিনের পর দিন যাদবপুরের মেন হস্টেলে থাকার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এ-২ ব্লকের নীচ থেকে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপকে উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। র‌্যাগিংয়ের কারণে মৃত্যু বলে অভিযোগ করে তাঁর পরিবার। এর পর স্বপ্নদীপের রহস্যমৃত্যুর তদন্তে নেমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তনী সৌরভকে গ্রেফতার করে পুলিশ। স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডুর অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। সম্মিলিত অপরাধের ধারাতেও মামলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × four =