গণধর্ষণ–কাণ্ডের ১১ দিন পর খুলল সাউথ ক্যালকাটা ল‘ কলেজ। সোমবার সকাল ৮টায় কলেজ খোলে। এদিন পুলিশে ছয়লাপ ছিল কলেজের প্রবেশপথ। প্রত্যেকের আইডি দেখে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। ২৫ জুন, ক্যাম্পাসে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কলেজ। গোটা কলেজ বন্ধ করে রাখা হবে কেন বা কেন বন্ধ থাকবে পড়াশোনা, কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে উঠেছিল এই প্রশ্ন। এই প্রেক্ষাপটেই জুলাইয়ে পরীক্ষা থাকায় কলেজ খুলতে চেয়ে বুধবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। এই একই আবেদন জানানো হয় কলকাতা পুলিশকেও। এরপর কলকাতা পুলিশের তরফে চিঠিতে জানানো হয়, কলেজে পঠনপাঠন চালানোর ব্যাপারে কোনও আপত্তি নেই।
কলেজ খুললেও বেশ কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ। আইডি কার্ড ছাড়া কোনও পড়ুয়া কলেজে ঢুকতে পারবে না। সমস্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সকাল আটটা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত কলেজে থাকতে পারবেন। নির্দিষ্ট সময়ের পরে কেউ কলেজে থাকতে পারবে না। কলেজের সামনে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কলেজের গার্ডরুম এবং ইউনিয়ন রুম আগের মতোই বন্ধ আছে। অনুমতি ছাড়া কোনও অফিসিয়াল নথিপত্র, এমপ্লয়িজ রেজিস্টার, অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টার নষ্ট করা যাবে না।
এদিন প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা কলেজে আসছেন অভিভাবকদের সঙ্গে । তাঁদের সবারই গলায় ধরা পড়েছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক। অভিভাবকদের মধ্যে থেকে একজন জানান, ‘আমরা এগুলো কিছু আশা করিনি। সব স্বাভাবিক ছিল। ভয় তো আছেই এই ঘটনার পর। কলেজ কর্তৃপক্ষকে বলব নিরাপত্তাকে আরও কঠোর করতে । কোর্ট থেকে নির্দেশ দিয়েছে, আপাতত ইউনিয়ন রুম বন্ধ থাকুক । সেই নির্দেশ খুব ভালো । মূল অভিযুক্ত কলেজের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে রয়েছে । ফর্ম ফিল–আপের জন্য দরকার হলে ও–ই উত্তর দিত কলেজের তরফে। কোনও সমস্যায় পড়লে ও–ই কথা বলত আমাদের সঙ্গে।’
এর পাশাাপশি বহু ছাত্র পরীক্ষার ফর্ম ফিল–আপের জন্য সোমবার কলেজে আসেন। তাঁদের মধ্যে থেকে একজন জানান, ‘আমার কলেজের যে বান্ধবীরা রয়েছে, তাদের সঙ্গে ফোনে একবার কথা হচ্ছিল ঘটনার পর।ওরা বলছিল, ওদের বাড়ি থেকে ছাড়তে ভয় পাচ্ছে। নিশ্চিন্ত হয়ে কলেজে আসতে পারছে না তারা।কিন্তু আসতে তো হবেই। কারণ সামনে পরীক্ষা।’ অপর এক ছাত্র জানান, ‘আমাদের পরীক্ষার জন্য রোস্টারে কিছু ক্লাস চলছিল।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগবে । পড়াশোনাতে ব্যাঘাত তো ঘটবেই।’ এর পাশাপাশি মঙ্গলবার থেকে ক্লাস শুরু হবে এলএলএমদের।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুন নোটিস দেওয়া হয় কলেজ বন্ধ করার। সাউথ ক্যালকাটা ল‘ কলেজের গভর্নিং বডির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৩০ জুন থেকে বন্ধ ছিল কসবার এই আইন কলেজ। কসবার এই আইন কলেজেই ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক প্রাক্তনী এবং দুই বর্তমান পড়ুয়ার বিরুদ্ধে। মূল অভিযুক্ত শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলেও জানা গিয়েছে ইতিমধ্যেই। পেশায় তিনি আইনজীবী। কসবার আইন কলেজের এই ঘটনার প্রতিবাদে দিকে দিকে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। তার মধ্যেই অনির্দিষ্টকালের জন্য সাউথ ক্যালকাটা ল‘ কলেজের পঠনপাঠন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় কলেজের গভর্নিং বডি।
এরপরই ২৯ তারিখ কলেজের তরফে নোটিস দেওয়া হয়। সেখানে জানানো হয় বিএ এলএলবি এবং এলএলএম – এইসব কোর্সের পঠনপাঠন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হচ্ছে। এছাড়াও পড়ুয়াদের কলেজ চত্বরে আসতে নিষেধ করা হয়। কলেজের গভর্নিং বডির তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয় সাউথ ক্যালকাটা ল‘ কলেজের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে।