বুধবারেও শেষ হল না ডিএ মামলার শুনানি শেষ। আবারও বৃহস্পতিবার মামলা শুনবে বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ। এ দিনের শুনানিপর্বে মামলাকারীদের তরফেই সওয়াল করা হয়। আর এদিন ডিএ মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টে তিরস্কারের মুখে পড়ে রাজ্য। ডিএ মামলার শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টে। বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি শুরু হয় বুধবার। প্রথমে সওয়াল করেন মামলাকারীদের আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যম। এদিন মামলাকারীদের আইনজীবী শুনানির শুরুতেই আদালতে জানান, ২০০৬–২০০৮ সাল ও ২০১৯–২০২১ সাল রাজ্য সরকার এই সময়ের মধ্যে কোনও ডিএ দেয়নি। এর পাশাপাশি সুব্রহ্মণ্যম দাবি করেন, ‘দিল্লির বঙ্গভবন ও চেন্নাইয়ের ইউথ হস্টেলে রাজ্য সরকারের কর্মীদের ডিএ দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় হারে। অথচ বাংলায় কাজ করলে রোপা রুলে ডিএ দেওয়া হচ্ছে।’ তার সমর্থনে একাধিক উদাহরণও তুলে ধরেন তিনি। এর পরেই রাজ্য সরকারের তরফে ডিএ না দেওয়া নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রর বেঞ্চের। আদালতের পর্যবেক্ষণ, আগেকার দিনের মহাজনদের মতো আচরণ করছে রাজ্য সরকার। টাকা জমিয়ে রাখা হচ্ছে অন্য জায়গায় খাটাচ্ছে।
মামলাকারীদের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে বিচারপতি মিশ্রের পর্যবেক্ষণ, ‘মেথড একই। এরা পুরোনো দিনের সুদের কারবারিদের মতো টাকা বাঁচিয়ে অন্য কাজে লাগাচ্ছে।’
এদিন সুব্রহ্মণ্যমের বক্তব্য শুনে বিচারপতি পিকে মিশ্র প্রশ্ন করেন, ‘আপনি আমাকে কি রাজ্য সরকারের এমন কোনও কর্মীর উদাহরণ দিতে পারেন, যিনি দিল্লির বঙ্গভবন বা চেন্নাইয়ের ইউথ হস্টেলে কাজ করেন এবং কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাচ্ছেন। একই কর্মী কলকাতায় কাজ করলে কম ডিএ পাচ্ছেন?’
উত্তরে গোপাল সুব্রহ্মণ্যম বলেন, ‘নিশ্চয়ই। বঙ্গভবনে কাজ করলে যে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ মিলছে, সেই তথ্য দেওয়া হয়েছে সরকারি নথিতেই। অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স মেনে ২০০৮ সাল থেকে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার বলছে, তারা জানে না কী ভাবে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে হবে। কিন্তু তা ঠিক নয়। কারণ রাজ্য দিল্লি এবং চেন্নাইয়ে কর্মরত সরকারি কর্মীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিচ্ছে। আর এখানেই গোপাল সুব্রহ্মণ্যম প্রশ্ন তোলেন, এটাকে ইনসিডেন্টাল ডিসক্রিমিনেশন বলা হবে কি না তা নিয়ে। সঙ্গে তিনি এও মনে করিয়ে দেন, ‘ডিএ হলো ভ্যারিয়েবল অ্যালাউন্স।’ প্রসঙ্গত, এর আগেও কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ডিএ মামলার শুনানির সময়ে দিল্লির বঙ্গভবনের কর্মীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মামলাকারীদের আইনজীবীরা।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পিকে মিশ্র এর পরেই জানতে চান, বঙ্গভবনের কর্মীদের আলাদা ডিএ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার আলাদা আদেশনামা জারি করেছিল কি না। আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যম বলেন, ‘২০১৯ সালের রোপা রুলের পরে এই নির্দেশ জারি করা হয়েছিল, যেখানে ১ জানুয়ারি ২০২০ থেকে দিল্লির বঙ্গভবনের সরকারি কর্মীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ, এইচআরএ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এর পরে দু’বছর তাঁদের ডিএ দেওয়া হয়নি। তার পরে সামান্য কিছু দেওয়া হয়।’
এদিন আদালতে মামলাকারীদের আইনজীবী জানান, ২০১৬ সালে এই মামলা শুরু হয়েছিল। ২০১৮ সালের ৩১ অগাস্ট কলকাতা হাইকোর্ট প্রথম রায় দিয়েছিল। কেন্দ্র সরকার প্রতি বছর দু’বার করে ডিএ দেয়। আইন মেনেই করা হয় এই পদক্ষেপ। আইন বলছে, ডিএ কর্মীর ন্যায্য প্রাপ্য। সরকারকে তা দিতেই হবে। বেতন কমিশনের সুপারিশ সরকার মানতে পারে, নাও পারে। আর রোপা রুলেই বলা হয়েছে ‘রাজ্য সরকারের কর্মীরা সময়ে সময়ে ডিএ পাওয়ার জন্য যোগ্য, তাঁরা এনটাইটেলড। এটা কোনও গ্রেস নয়, বেতনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।’