রাজ্য রাজ্যপাল সংঘাতের মাঝে পড়ে সমস্যায় পড়ুয়ারা। এদিকে তৈরি হয়েছে একের পর এক আইনি জটও। ফলে বাংলার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ কবে হবে তা নিয়ে সমাধানসূত্র অধরা। কারণ এখনও পর্যন্ত কোনও সার্চ কমিটি তৈরি হয়নি। ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৩১টি সার্চ কমিটি তৈরি করাটাও সময় সাপেক্ষ। শিক্ষা দফতরের দাবি, রাজ্যপাল প্রতিনিধি দিচ্ছেন না সার্চ কমিটিতে। আইনি জটে সার্চ কমিটির অর্ডিন্যান্স। আর এখানেই প্রশ্ন ততদিন কে চালাবেন বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রসঙ্গত, সার্চ কমিটি তৈরি করার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার দু’মাস আগে থেকেই সার্চ কমিটি তৈরি করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাতে অচলাবস্থা তৈরি না হয়, তার জন্যই এই পদ্ধতি। কিন্তু বর্তমান যা পরিস্থিতি, তাতে ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও সার্চ কমিটি তৈরিই হয়নি। আচার্য তথা রাজ্যপাল যে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন, তাঁরাই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, সার্চ কমিটি তৈরি করার জন্য রাজ্যপালের তরফে যে প্রতিনিধি আসার কথা, তিনি আসেননি।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ প্রসঙ্গে জানান, ‘আমরা ফাইল পাঠাচ্ছি, রাজ্যপাল গ্রাহ্য করছেন না। স্থায়ী উপাচার্য গঠনের ক্ষেত্রে, সার্চ কমিটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিনিধি পাঠানো হোক। তিনি সেটাও তোয়াক্কা করছেন না। নিজের পেটোয়া উপাচার্যদেরই দায়িত্বে রাখতে চাইছেন।’
অন্যদিকে, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ করা নিয়ে রাজ্য সরকার একটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল। তাতে তিন জন প্রতিনিধির বদলে পাঁচজনের কমিটি গঠন করতে চেয়েছে নবান্ন। রাজ্যের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, নতুন কমিটিতে থাকবেন রাজ্যপালের মনোনীত প্রতিনিধি, উচ্চশিক্ষা সংসদের মনোনীত প্রতিনিধি, রাজ্যের মনোনীত প্রতিনিধি এবং মুখ্যমন্ত্রী মনোনীত প্রতিনিধি। কিন্তু সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত প্রতিনিধিদের কোনও স্থান নেই। এরপরই রাজ্যের এই অর্ডিন্যান্সকে চ্যালেঞ্জ করেই কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা হয়। সেই মামলা বিচারাধীন।
এই প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক নন্দিনী মুখোপাধ্যায় জানান, ‘রাজ্যপাল না রাজ্য, কারও বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর ব্যাপারে কোনও সদিচ্ছা নেই। রাজ্য ও রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আধিপত্যবাদ চাপিয়ে দিতে চাইছেন। ধীরে ধীরে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি মৃত্যুর মুখে এগিয়ে যাবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্যকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন অধ্যাপকদের একাংশ। অধ্যাপক বিমল শঙ্কর নন্দ জানান, ‘এটা ডেড লক সিচুয়েশন দাঁড়িয়ে গিয়েছে। তার জন্য রাজ্য সরকারের সিচুয়েশনটাকে ঠিকঠাক হ্যান্ডেল করতে না পারা, প্রায় জবরদস্তি নিজেদের ভাবনাচিন্তা চাপিয়ে দেওয়া। ডিন নেই, রেজিস্ট্রার নেই। এর জন্য রাজ্য সরকারকে অহংয়ের জায়গা থেকে সরে আসতে হবে।’