বিএসএফ-কে অসহযোগিতা করছে রাজ্য পুলিশঃ শুভেন্দু

অনুপ্রবেশ নিয়ে রবিবার সাংবাদিক বৈঠক থেকে বিএসএফের কোর্টে বল ঠেলেছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। তার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই পরিসংখ্যান তুলে ধরে রাজ্যের বিরুদ্ধে বিএসএফকে অসহযোগিতার অভিযোগ আনলেন শুভেন্দু অধিকারী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর গোটা প্রশাসন বিএসএফের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না বলে সোমবার অভিযোগ জানাতে দেখা গেল বিরোধী দলনেতাকে এদিন। সল্টলেকে বিজেপির কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দুর অভিযোগ, সীমান্ত চৌকি করার জন্য জমি এখনও বিএসএফকে হস্তান্তর করেনি রাজ্য। জমি অধিগ্রহণ পুরোপুরি রাজ্যের হাতে। ভারত সরকার সরাসরি জমি অধিগ্রহণ করতে পারে না। ডিএমদের ছাড়া জমি নেওয়া সম্ভব না। ১৭টি জায়গায় জমি দেননি মমতা। শুধুমাত্র বিএসএফকে শত্রু বানাতে মুখ্যমন্ত্রী ও প্রশাসনের লোকেরা লাগাতার বিএসএফকে আক্রমণ করে চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ইগোর লড়াইয়ে বিএসএফের বিরোধিতা করছে তৃণমূল, এমনই দাবি শুভেন্দুর। এরই পাশাপাশি শুভেন্দু এও জানা্ন, রাজ্যে ভোট জিহাদ চলছে। সঙ্গে এও বলেন, ‘কাশ্মীর থেকে এসে জঙ্গি ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা আতঙ্কিত।’ সঙ্গে এ অভিযোগও তুলেছেন, বিএসএফের সঙ্গে পুলিশও অসহযোগিতা করছে। বিএসএফের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কেউ আসেন না। কেউ এলেও তা নিম্ন পদাধিকারী পুলিশ আধিকারিক।

শুভেন্দু এদিন এও দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমানার ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে ৮৩টি গরুর হাট। অথচ তা আইনে নিষিদ্ধ। চোরাচালানের উৎস এই গরুর হাটগুলি। শুভেন্দু বলেন, যে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বিএসএফের মধ্যে প্রস্তাব আনেন, তিনি বিএসএফকে কাঁটাতার দিতে কখনই জমি দিতে পারেন না। সীমান্তে বারবার কাঁটাতার দিতে বাধা দিচ্ছেন মমতা। রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি কেন্দ্রের সঙ্গে পূর্ণ অসহযোগিতা করছে বলে দাবি শুভেন্দুর। এই প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা এদিন এও দাবি করেন, জঙ্গিরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকছে। কারণ,পশ্চিমবঙ্গে শতচ্ছিদ্র সীমান্ত। আজ সেই সীমান্ত দিয়ে প্রত্যেকদিন এরা ঢুকেছে, ঢুকছে।ভবিষ্যতেও ঢুকবে। গোটা ভারতে জঙ্গি, জেহাদি, মৌলবাদী, রোহিঙ্গা মুসলমান সাপ্লাই করার জন্য করিডর হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। সাপ্লাই করার এজেন্সি নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার, তার মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর লোকেরা রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট দিচ্ছেন, আধার কার্ড বানিয়ে দিচ্ছেন। বাংলাদেশের জঙ্গি দু’বার তৃণমূলকে দুবার ভোটও দিয়ে গিয়েছেন। তার ভোটার কার্ডও তৈরি হয়ে গেছে।’

রাজ্যে স্থায়ী ডিজি নেই বলেও এদিনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে জানান শুভেন্দু। বলেন, ‘ভারতে কোথাও এরকম পাবেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদ ডিজিপি। অথচ এখানে অ্যাডিশনাল চার্জে ডিজিপি রাখা হয়েছে। আর মালিককে সন্তুষ্ট করতে ডিজিপি বিএসএফের বিরুদ্ধে এসব কথা বলছেন।’ একইসঙ্গে এদিন নিশানা করেন রাজীব কুমারকেও। শুভেন্দু রাজীবকে বিদ্ধ করে বলেন, ‘ডিজিপিও বিএসএফের দিকে আঙুল তুলছেন। অ্যাডিশনাল চার্জে থাকা ডিজিপি বড় বড় কথা বলেছেন। রাইট উইংদের কথা বলছেন। কে রাইট উইং, আমি জানতে চাই।’ এদিন সন্দেশখালিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা নিয়েও আক্রমণ শানাতে ছাড়েননি শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কথায়, ‘সন্দেশখালির দ্বীপের লোকেরা আজকের সভায় যাননি। বাড়ির টাকা না দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বাকি লোকেদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশ ও বিডিও পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে পুলিশের লঞ্চে করে ৭-৮ হাজার লোক নিয়ে গিয়েছে। শুভেন্দুর আরও দাবি, ৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে মমতার সন্দেশখালির সভায়। রাজকোষের টাকা থেকে তা খরচ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এরপরই তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর তো গাড়িতে করে সন্দেশখালিতে যাওয়া উচিত ছিল। অধিকাংশই তো আপনার ভোটব্যাঙ্কের এলাকা। কালো পতাকা কেউ দেখাতো না। পুষ্পবৃষ্টিই হত।’ এর পাশাপাশি সুজয় মণ্ডলের তৃণমূলে যাওয়া নিয়েও এদিন বিস্ফোরক দাবি করেন শুভেন্দু অধিকারী। বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘সুজয় মণ্ডল বিজেপির লোক নয়। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আগে মেসেজ করেছিলেন। ওঁর গোপনীয়তা রক্ষায় তা সামনে আনছি না। আমাকে জানিয়েছেন কেন যোগদান করেছে। লোকসভার ভোট থেকেই তৃণমূল করেছেন। সুজয় মণ্ডল তৃণমূলের পার্শ্বশিক্ষকদের সংগঠনের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পদাধিকারী।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − fifteen =