শীর্ষ আদালতে সন্দীপের ভূমিকায় বিদ্ধ রাজ্য

আরজি কর মামলায় সুপ্রিম কোর্টে চরম চাপের মুখে রাজ্য সরকার। প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে আরজি কর মামলার শুনানি হয়। শুনানির শুরু থেকে মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে গোটা ঘটনার প্রেক্ষিতে আরজি কর কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের ভূমিকা।প্রধান বিচারপতি জানতে চান, অভিযোগ উঠেছে, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছে। অধ্যক্ষ এটিকে আত্মহত্যা বলে চালাতে চেয়েছিলেন। এমনকি পরিবারকে মৃতদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। তখন রাজ্যের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল জানান, এই অভিযোগগুলি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। সে কথা শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটি পরিষ্কার যে খুন করা হয়েছে। প্রথমে এফআইআরে কি তা উল্লেখ ছিল? অধ্যক্ষ কী করেছেন?’

এরই পাশাপাশি এদিনের শুনানিতে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষের পদত্যাগ, আর তারপরেই তাঁকে অন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুনর্বহাল নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান  বিচারপতি জানতে চান, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে সাসপেন্ড  করা হয়েছে কি না? জবাবে রাজ্য জানায়, তাঁকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।প্রধান বিচারপতি জানতে চান, অপরাধ প্রকাশ্যে এসেছে ভোরবেলা। অধ্যক্ষ সেটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেছিলেন এবং অভিভাবকরাও দেহ দেখার অনুমতি পাচ্ছিলেন না।শুধু তাই নয়, তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর পরিবারকে জানানো হয়েছিল আত্মহত্যা করেছেন তাঁদের সন্তান। আর ময়নাতদন্তের পর সেই মৃত্যুকেখুনবলে উল্লেখ করা হল রিপোর্টে।

রাজ্যের তরফে প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, ‘এটা ঠিক নয়।প্রধান বিচারপতি আবারও বলেন, অনেক রাত পর্যন্তও কোনও এফআইআর দায়ের হয়নি। আইনজীবী সিব্বল বলেন, ‘ঘটনার পরই একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু করা হয়। যেটা এফআইআর।এরই প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি জানতে চান, এফআইআর প্রথম কে দায়ের করেছিলেন? রাজ্যের তরফে জানানো হয়, মৃতার বাবা।সেক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে পড়ে।

এদিন আদালতে যে সব প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রাজ্যকে সেগুলি এইরকম,

প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়: বাবামাকে সন্তানের দেহ দেখতে দেওয়া হল না কেন?

কপিল সিবল: এটা ঠিক নয়।

প্রধান বিচারপতি: রাত পর্যন্ত কোনও এফআইআর হল না কেন?

কপিল সিবল: এটাও ঠিক নয়। ময়নাতদন্তের পর এফআইআর হয়।

প্রধান বিচারপতি: এফআইআরে কি মার্ডারের কথা লেখা হয়েছিল?

কপিল সিবল: না, অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা লেখা হয়।

এছাড়াও এদিন উঠে আসে বিভিন্ন মাধ্যমে আসা নির্যাতিতার নাম এবং ছবি ছড়িযে পড়ার ঘটনাও। এই প্রসঙ্গে এদিন কার্যত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নির্যাতিতার নাম ও ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকী ময়নাতদন্তের আগের ও পরের ভিডিয়ো ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেহ দেখা যাচ্ছে। একটা প্যারামিটার আছে, সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইনও আছে। তারপর কীভাবে এটা হল?’

প্রধান বিচারপতির প্রশ্নের মুখে আইনজীবী কপিল সিবল বলেন, ‘পুলিশ যাওয়ার আগেই ছবি তোলা হয়েছে। আমরা পুরো জায়গাটা ঘিরে রেখেছিলাম।উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইনই শুধু নয়, নির্যাতিতার নাম প্রকাশ্য়ে আনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আইনও আছে। ভারতীয় আইনে ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার ঘটনায় নির্যাতিতার নাম, পরিচয় বা ছবি প্রকাশ করা যায় না। এমন কোনও তথ্য যা প্রকাশ করলে নির্যাতিতার পরিচয় জানা যেতে পারে, তাও প্রকাশ করা যায় না।

এদিন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একজন তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে, তাঁকে এইটুকু মর্যাদা দেওয়া উচিত।এছাড়া আরজি করে যে ঘটনা ঘটেছে, তা ভয়ঙ্কর বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।প্রধান বিচারপতি আরও প্রশ্ন রাত পর্যন্ত কোনও এফআইরআর হল না, প্রিন্সিপাল কী করছিলেন?

এরপরই আসে ১৪ অগাস্ট রাতে পুলিশ থাকা সত্ত্বেও মব অ্যাটাক হল কীভাবে সে ঘটনাও। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, পুলিশ কী করছিল তা নিয়ে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ক্রাইম সিনপ্রোটেক্ট করা পুলিশের প্রধান কাজ, এখানে সেটাই করা গেল না।ঘটনায় হাসপাতালের প্রিন্সিপ্যাল, ভাইস প্রিন্সিপ্যালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সাত জনের জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠনেরও নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 5 =