মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষতিপূরণের ঘোষণায় প্রশ্ন তুলে দিলেন শুভেন্দু

গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে প্রাণহানির ঘটনায় সোমবার সকালেই এক্স হ্যান্ডলে শোকপ্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর কিছুক্ষণ পর তিনি নিজেই পৌঁছে যান দুর্ঘটনাস্থলে। দিন কয়েক আগেই বাড়িতে পড়ে মাথায় চোট পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়েই তিনি সোমবার যান গার্ডেনরিচে। সে সময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন কলকাতা পুরনিগমের মেয়র ফিরহাদ হাকিম, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায়-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও জানান। একইসঙ্গে ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনকে। এরপর যান গার্ডেনরিচ থেকে হাসপাতালে। সেখানে দুর্ঘটনায় আহতদের সঙ্গে দেখাও করেন তিনি।

গার্ডেনরিচ বহুতল ভাঙার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘ঘটনা ঘটার পর কলকাতার পুলিশ কমিশনার স্পটে এসেছেন। তিনি আমাকে আপডেট দিয়েছেন। মেয়রও ছিলেন স্পটে। তিনিও আমাকে মেসেজ করেছেন। দমকলমন্ত্রীও ছিলেন। এটা খুব ঘিঞ্জি এলাকা। আজকে তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরেই এলাকা এ রকম।’ এ দিন বহুতল নির্মাণ নিয়ে প্রোমোটারদেরও কড়া বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘প্রোমোটাররা বাড়ি তৈরির আগে নিশ্চয় ভাববেন, আশপাশে যে সব গরিব মানুষগুলো আছেন, তাঁদের যেন কোনও ক্ষতি না হয়। শুধু ৬ তলা বাড়ি তৈরি করে দিলাম, সেটা বড় কথা নয়। বাড়ি যাতে মজবুত হয় এবং তা আইনি স্বীকৃতি কি না, তাও দেখা দরকার।’

এরপরই মৃত এবং আহতদের পরিবারের প্রতি শোকজ্ঞাপন করে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে এও বলেন, ‘রমজান মাসে এ রকম একট দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আমরা সকলেই মর্মাহত। ২ মারা গিয়েছে। ৪-৫ জন আটকে রয়েছে। উদ্ধার কাজ যত তাড়াতাড়ি হবে, তত ভালো। এখানে স্বাস্থ্য, দমকল, পুর দফতরের সবাই আছে। আমি শোকাহত পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। বেআইনি কাজ যদি কেউ করে থাকে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি প্রশাসনকে বলব। যাঁদের বেআইনি কাজের জন্য এই ঘটনা ঘটেছে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে সরকার রয়েছে।’

এরপর দুর্ঘটনায় বাড়ি-ঘর যাঁদের নষ্ট হয়েছে, তাঁদেরকে সাহায্যের জন্যও প্রশাসনকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিকে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এক্স হ্যান্ডেলে ছবি-সহ পোস্ট করে বেশ কিছু অভিযোগও তোলেন তিনি। অভিযোগ করেন, ২০১০ র পরে ৫০০০ জলাশয় ভরাট হয়েছে। তাঁর দাবি, ওই এলাকায় ৮০০ অবৈধ নির্মাণ রয়েছে। পাশাপাশি ভোটের দিন ঘোষণার পরে কী করে মুখ্যমন্ত্রী এবং মেয়র ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করলেন তা নিয়েও।

অবৈধ নির্মাণের বিষয়টি কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে পুরপ্রশাসনও। পুরসভার নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পুর আধিকারিকদের কাঠগড়ায় তোলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ মানছেন মেয়রও। তবে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে এখনও বেআইনি নির্মাণের জন্য বাম আমলকেই দোষারোপ করতে শোনা যায়।

ইতিমধ্যেই গার্ডেনরিচে বহুতল বিপর্যয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। ভিত দোতলার। অথচ, সেখানেই তৈরি হচ্ছিল পাঁচতলা বিল্ডিং। তাতেই বিপত্তি। সম্পূর্ন বেআইনিভাবে চার-পাঁচতলা তৈরি হচ্ছিল। ভিত দোতলার বেশি না থাকায় চার তলার ভার বহন করতে পারেনি। তাতেই বিপর্যয়। ইতিমধ্যেই প্রোমোটারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মোহম্মদ ওয়াসিম নামে ওই প্রোমোটারের বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

যদিও এর প্রেক্ষিতে তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘যাঁরা বিরোধীরা আঙুল তুলছেন, আমি বলব ৪৮ ঘণ্টা পরে তুলুন। মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান। সবার উপরে মানুষ ধর্ম। দিল্লি থেকে বসে টুইট না করে বা বড় বড় ভাষণ না দিয়ে, উদ্ধার কার্য প্রশাসনের মদত করুন। তারপর মানুষ প্রাণে বাঁচলে রাজনীতি হবে।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 9 =