টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি দিতে পার্থর সঙ্গে আঁতাত করেছিলেন সুজয়কৃষ্ণ

টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি নিশ্চিত করতে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও আঁতাত করেছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু, আদালতে এমনটাই জানানো হয়েছে ইডি-র তরফ থেকে। শুক্রবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে সুজয়কৃষ্ণর বিরুদ্ধে যে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করা হয়েছে তাতে ইডি দাবি করেছে, ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের যে নামের তালিকা কাকুর কাছে পাঠানো হয়েছিল তা নিয়ে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয় তাঁর। শুধু পার্থই নন, ১২৬ পাতার এই চার্জশিটে সুজয়কৃষ্ণ এবং মানিক ভট্টাচার্যের নামও উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের নামের তালিকা পাঠানো হয় পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের কাছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, সেটা হয়েছিল পার্থর অনুমতিতেই। ওই প্রার্থীদের মধ্যে ৩২৫ জনের কাছ থেকে ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন সুজয়। আর এই বিপুল পরিমাণ টাকা এসেছিল বিএড কলেজের মালিক তাপস মণ্ডল এবং হুগলির দুই বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকেই। চার্জশিটে ইডি এও উল্লেখ করেছে, অযোগ্যদের থেকে টাকা আত্মসাৎ করার পরে কী ভাবে তা সরানো হবে, সেই ফন্দিও আঁটেন কালীঘাটের কাকু। এবং টাকা সরাতে গিয়েই নিজের পার্টনারশিপ ফার্মের পাশাপাশি পরিচিতদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকেও ব্যবহার করেন সুজয়কৃষ্ণ। এক্ষেত্রে  সুজয়কৃষ্ণ কখনও ভুয়ো বিল বানিয়ে ব্যবসায়িক লেনদেন দেখিয়েছেন, আবার কখনও ঋণ দেখিয়ে এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানিতে টাকা ট্রান্সফার করিয়েছেন তিনি। যেমন, মেসার্স মার্লিন বেঙ্গল লিমিটেডের থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা ট্রান্সফার হয়েছিল কাকুর পার্টনারশিপ ফার্ম এস ডি কনসালট্যান্সিতে। এই বিজনেস ট্রানজেকশন হয়েছিল শুধু মাত্র কাগজে-কলমে। যার সঙ্গে ব্যবসার কোনও সম্পর্ক পাননি তদন্তকারীরা।

ইডি-র বক্তব্য, এরপর এস ডি কনসালট্যান্সি থেকে ওই ১ কোটি টাকা চলে যায় লিপস অ্যান্ড বাউন্স প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির অ্যাকাউন্টে। এসডি কোম্পানিকে কনসালটেশন সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ওই টাকা ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত তিন দফায় পাঠানো হয় লিপস অ্যান্ড বাউন্সের অ্যাকাউন্টে। ঘটনাচক্রে, লিপস অ্যান্ড বাউন্স কোম্পানিতেই আবার সিইও পদে কাজ করতেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। এ রকম আরও কয়েকটি কোম্পানিতে টাকা ট্রান্সফার হয়েছে বলে চার্জশিটে জানিয়েছে ইডি। ইডি-র এক আধিকারিক জানিয়েছেন, তদন্তের পরবর্তী ধাপে অন্য কোম্পানিগুলির সঙ্গে কাকুর সংস্থার লেনদেনের বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখার পাশাপাশি সুজয়কৃষ্ণের সঙ্গে আর কারা যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − two =