নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হলেও নিজেকে বরাবর নির্দোষ বলে দাবি করে এসেছেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগও বারবার তুলেছেন তিনি। এদিকে ইডি-র হাতে রয়েছে দুটি মোবাল নম্বরের কল রেকর্ড। যে দুটি মোবাইল নম্বরের একটি শুরু ৯১ দিয় এবং শেষে রয়েছে ৪২। দ্বিতীয় নম্বরটির শুরু ৯৮৩১ দিয়ে এবং শেষ ১৩ তে। এই দুটি নম্বরের কল রেকর্ড এবং হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট এই তদন্তে মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে মনে করছে ইডি। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফ থেকে এও দাবি করা হচ্ছে যে, এর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট নম্বরের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন বেহালার বাসিন্দা সুজয়কৃষ্ণ।
ফোনে তিনি মানিককে প্রাথমিকের টেট পরীক্ষার্থীদের রেজাল্ট থেকে অ্যাডমিট কার্ড পাঠিয়ে চাকরির জন্য নিয়মিত সুপারিশ করতেন। পাশাপাশি অন্য একটি মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে নথি লোপাট করার নির্দেশ দিতেন এই সুজয়কৃষ্ণ-ই। আর এখানেই পুলিশ থেকে আইনজ্ঞ মহলের একাংশের ধারনা, এই মামলায় ওই ২টি মোবাইল ভবিষ্যতে সুজয়কৃষ্ণের গলার কাঁটা হয়ে উঠতে পারে।
আদালতে নথি পেশ করে ইডি এর আগে দাবি করেছিল, বিভিন্ন সূত্রে চাকরিপ্রার্থীদের সুপারিশ আসত মানিক ভট্টাচার্যের কাছে। যা জানা গেছে, কল রেকর্ড এবং হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের সূত্রে। শুধু তাই নয়, ইডি-র তরফ থেকে এও দাবি করা হয়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত মানিকের সঙ্গে সুজয়ের ভালোই যোগাযোগ ছিল। ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতিকে চাকরির সুপারিশ করেছিলেন সুজয়কৃষ্ণ। এ বিষয়ে যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। শুধু তাই নয়, তদন্তকেও ভুল পথে চালনার করার চেষ্টা করেন বলে দাবি ইডি-র।
তবে গত বছরের জুলাই মাস থেকে যখন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শিক্ষা দপ্তরের প্রাক্তন কর্তা-ব্যক্তিদের সিবিআই এবং ইডি গ্রেপ্তার করতে থাকে, তখন থেকেই সতর্ক হয়ে যান সুজয়কৃষ্ণ। তবে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে সে সময়েও যোগাযোগ রাখতেন তিনি। তাঁদের মধ্যে অনেকে পরে গ্রেপ্তার হন। এদিকে আভার চার্জশিটে নাম থাকা গোপাল দলপতি প্রথমে দাবি করেন, ধৃত কুন্তল ঘোষ কালীঘাটের কাকুর কাছে টাকা দিয়ে আসতেন।
এর পর ধৃত তাপস মণ্ডল কালীঘাটের কাকু আদতে কে সেই রহস্যর পর্দাও উন্মোচন করেন। এরপরই এই মামলার তদন্তে নেমে ইডি-র হাতে আসে সুজয়কৃষ্ণের আরও একটি মোবাইল নম্বর। এরই সূত্র ধরে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার তরফ থেকে দাবি করা হয়, চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টা ৪৬ মিনিটে একজনকে ফোন করে নথিপত্র এবং অ্যাডমিট কার্ড লোপাট করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সুজয়কৃষ্ণ। ওই দু’টি মোবাইলের কল রেকর্ড সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বলে দাবি করা হলেও সে বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করে সেন্ট্রাল ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে চান গোয়েন্দারা।