অস্বস্তি বাড়ল সুজয়কৃ্ষ্ণের, ডিভিশন বেঞ্চেও ধাক্কা কালীঘাটের কাকুর

সিঙ্গল বেঞ্চের পর ডিভিশন বেঞ্চেও ধাক্কা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের। তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ নিয়ে বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশের উপরে হস্তক্ষেপ করল না বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ। কণ্ঠস্বরের নমুনার পরবর্তী প্রক্রিয়ার উপরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ, বুধবার এমনটাই জানিয়ে দিল ডিভিশন বেঞ্চ। প্রসঙ্গত, বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানিয়েছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। সেই মামলা প্রেক্ষিতেই এদিন এই নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ফলে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েও সুজয়কৃষ্ণর কোনও সুরাহা হল না বলেই মনে করছে ওয়াকিবহালমহলের একাংশ।

প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক মাস ধরে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ‘কালীঘাটের কাকু’ সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসএসকেএম-এ পৌঁছেছিল জোকা ইএসআই হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স। কিন্তু সেই দিন এসএসকেএম-এর চিকিৎসকরা জানান, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়, তাই তাঁকে হাসপাতাল থেকে বের করা যাবে না৷ পরবর্তীতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট৷ সেখানে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে মামলার রূদ্ধদ্বার শুনানি হয়৷ শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ইডি-র কর্তা এবং জোকা ইএসআই-এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা৷ এই শুনানির পরেই সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে বের করার তৎপরতা শুরু হয়৷

এরপর গত বুধবার রাতে জোকা ইএসআই হাসপাতালে ‘কালীঘাটের কাকু’ সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোর ৩টে ২০ নাগাদ তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন সুজয়কৃষ্ণর আইনজীবী। সুজয়কৃষ্ণর কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি ডিভিশন বেঞ্চে বলেন, ‘সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে মামলায় যুক্ত না করেই কণ্ঠস্বর পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমন নির্দেশ দেওয়া যায় না।’ সেই মামলার শুনানিতেই এদিন এই নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।

এদিন মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি সৌমেন সেন জানান, আইন অনুযায়ী প্রত্যেক অভিযুক্তের কিছু অধিকার থাকে। আইন অনুযায়ী তিনি এই নমুনা দিতে অস্বীকার করতে পারেন। এরপরই ইডির তরফ থেকে প্রশ্ন হয়, তদন্ত তাহলে শেষ করব কীভাবে? সঙ্গে এও জানানো হয়, ‘গোটা রাজ্য আমাদের বিরুদ্ধে। প্রতি পদে তদন্তে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের তদন্তকারী আধিকারিকদের মারধর করা হচ্ছে। এফআইআর করা হচ্ছে। বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশে কী ভুল রয়েছে? তিনি তো নির্দেশে লিখেছেন যে, কণ্ঠস্বরের নমুনা বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশ ছাড়া বিচারপ্রক্রিয়ায় প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না।’

এরপরেই বিচারপতি সৌমেন সেন গোটা বিষয়টি নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেন৷ বলেন, ‘সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি অমৃতা সিনহা সঠিক কাজ করেননি। বিচারপতির তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে যখন এই একই বিষয়বস্তু নিয়ে মামলা বিচারাধীন তখন বিচারপতি অমৃতা সিনহার এই নির্দেশ সঠিক নয়।এটা বিচারবিভাগীয় পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে এবং বিচার বিভাগীয় আচরণ বিধির ক্ষেত্রে সঠিক উদাহরণ না। এটা মারাত্মক প্রবণতা।ইডি যদি বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশ সম্পর্কে বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে অবগত না করে তাহলে তারা ভুল কাজ করেছে। একটি বেঞ্চে যখন মামলা বিচারাধীন আছে তখন সেই নির্দেশ বাস্তবায়িত করার নির্দেশ কেন অন্য বেঞ্চ দেবে? ইডি-র উচিত ছিল বিচারপতির তীর্থঙ্কর ঘোষের দ্বারস্থ হওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − two =