সজয়কৃষ্ণ ভদ্রের অর্থাৎ ‘কালীঘাটের কাকু’-র প্যারোলের মেয়াদ বাড়ালেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। মেয়াদ বাড়িয়ে তা ১৬ জুলাই পর্যন্ত করা হয়েছে বলেই আদালত সূত্রে খবর। তবে পাশাপাশি বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ এও জানিয়েছেন, এই প্যারোলে থাকাকালীন বেশ কিছু শর্ত মানতে হবে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে। এদিকে এদিন মামলার শুনানিতে সুজয়কৃষ্ণর জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন ইডির আইনজীবী। প্রত্যুত্তরে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানান, মামলাটি জামিন না বলে প্যারোলের আবেদন হিসেবে গ্রহণ করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকুর স্ত্রী বাণী ভদ্রর। প্রয়াত স্ত্রীয়ের শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সুজয়কৃষ্ণ। প্যারোলে মুক্তি আবেদনও জানানো হয় উচ্চআদালতে। এরই প্রেক্ষিতে আদালতের তরফ থেকে জানানো হয়, জেল কর্তৃপক্ষের অসুবিধা না থাকলে সুজয়কৃষ্ণকে প্যরোলে মুক্তি দিতে কোনও অসুবিধা নেই। এরপরই স্ত্রীয়ের অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দেওয়ার জন্য প্যারোলে মুক্তি পান তিনি। জেলের তরফে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রে খবর মেলে। তবে প্যারোলের মেয়াদ বাড়লেও আদালতের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু শর্ত। যেমন, শুক্রবার বেলা ৩টের পর থেকে ইডি তাঁর জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর একজন জওয়ান রাখতে পারে। অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর পদমর্যাদার একজন অফিসার তাঁর বাড়িতে উপস্থিত থাকবেন ১৬ জুলাই পর্যন্ত। একটা রেজিস্টার মেন্টেন করতে হবে। তাঁর স্ত্রীর কাজের জন্য বাড়ির কাছাকাছি কোনও মন্দিরে যেতে চাইলে যেতে পারবেন, পরিবারের পাঁচজন সদস্যকে নিয়ে। তবে তা ৪৮ ঘণ্টা আগে জানাতে হবে।
এদিকে সুজয়কৃষ্ণর জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করা হয় ইডির তরফে। আদালতে ইডির আইনজীবী বলেন, ‘অভিযুক্তকে এসকর্ট ছাড়া প্যারোল দেওয়া উচিত হবে না। এসকর্ট ছাড়া প্যারোল দেওয়া হলে তথ্য প্রমাণ বিকৃত করা হতে পারে।’ এর উত্তরে আদালত জানায়, ‘জামিনের বিষয়টি পরে বিবেচনা করা যাবে। কিন্তু জেল যদি প্যারোলে মুক্তি দেয় আদালতের কোনও আপত্তি নেই। কোর্ট কোনও প্যারোল দিচ্ছে না। জেলের তরফে প্যারোল দেওয়া হলে তখনই আদালত এসকর্টের নির্দেশ দেবে।’
এই মামলারই শুনানি ছিল শুক্রবার। এরপরই সুজয়কৃষ্ণের প্যারোলের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘সুজয়কৃষ্ণের সঙ্গে মানিক ভট্টাচার্যের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। মোবাইলের সফটওয়্যারে বিকৃতি ঘটানো হয়েছে।’ তখন বিচারপতি বলেন, ‘আমি ওনাকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত প্যারোল দিতে চাই। কিন্তু আমি জামিনের আবেদনের ভিতরে ঢুকছি না।’ প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গোপাল দলপতির মুখে প্রথমবার শোনা গিয়েছিল এই সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র তথা ‘কালীঘাটের কাকু’র নাম। বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই কালীঘাটের কাকুর নাম আরও বেশি করে সামনে আসতে থাকে। যদিও তাঁকে চেনেন না বলেই দাবি করেন কুন্তল।