মহাকাশে বন্দি সুনিতা উইলিয়ামস

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আটকে পড়েছেন সুনিতা উইলিয়ামস ও তাঁর সঙ্গী নভোশ্চর। দুজনকে ফেরানোর দিনক্ষণ ঠিক করে উঠতে পারছে না নাসা। যে মহাকাশযানে তাঁরা গিয়েছিলেন তাতে আর ২৬ দিনের জ্বালানি বাকি রয়েছে। মহাকাশযানে একের পর এক ত্রুটি ধরা পড়েছে। তাতেই মহাকাশে আটকে গিয়েছেন সুনিতারা। সময় কমে আসছে। তাঁদের পৃথিবীতে ফেরা নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। এদিকে প্রশ্ন উঠছে জেনেশুনেই কি ত্রুটিপূর্ণ মহাকাশযানে মহাকাশে পাঠানো হয় সুনিতা উইলিয়ামসদের?

গত ৫ জুন স্পেস স্টেশনে পৌঁছন সুনিতা ও তাঁর সঙ্গী বুচ উইলমোর। ১৪ জুন তাঁদের পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু মহাকাশযানে ক্রটি ধরা পড়ায় তাঁদের ফেরা হয়নি। এরপর ঠিক হয় ২৬ জুন রাতে পৃথিবীতে ফিরবেন সুনিতারা। সেটাও হচ্ছে না। নাসা জানিয়েছে আগামী ৫-৬ দিনে সুনিতাদের ফেরানো যাবে বলে মনে হয় না। ২ বা ৩ জুলাই ওঁরা ফিরতে পারেন। মহাকাশে মুহূর্তের ভুলে কী হতে পারে, তা নিশ্চই নাসার চেয়ে ভাল কেউ জানে না। ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি মহাকাশ অভিযান শেষ করে স্পেস শাটল কলম্বিয়ায় পৃথিবীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন কল্পনা চাওলা ও তাঁর সঙ্গীরা। ১লা ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর মাটি ছোঁয়ার ১৬ মিনিট আগে ভেঙে পড়ে কলম্বিয়া। মৃত্যু হয় কল্পনা-সহ বাকি নভোশ্চরদের। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, মহাকাশযান সবদিক থেকে ঠিকঠাক ছিল। খালি হাইড্রোলিক ট্যাঙ্কের তরল দ্রুত কমে আসছিল। এতেই মহাকাশযানের সেন্সর সিস্টেমে গড়বড় শুরু হয়। এই রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, মহাকাশ অভিযানে খুব ছোট ত্রুটিকেও উপেক্ষা করা উচিত নয়। সেই শিক্ষা কি ভুলে গেল নাসা?

এদিকে অভিযাত্রীদের সুরক্ষা, নিরাপত্তার কথা কি ভাবাই হয়নি? আঙুল উঠছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার দিকে। নাসার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন দুই হুইসলব্লোয়ার। তাঁদের অভিযোগ, সুনীতারা রওনা হওয়ার আগে মহাকাশযানে বিভিন্ন ক্রটি ধরা পড়ছিল। তাতে তিনবার অভিযানের দিনক্ষণ পিছিয়ে যায়। রওনা হওয়ার আগের দিনও দেখা যায় মহাকাশযানের হিলিয়াম গ্যাস ট্যাঙ্কার থেকে লিক হচ্ছে। রকেট ইঞ্জিনিয়ার নোট পাঠিয়ে অভিযান স্থগিত রাখতে বললেও নাসার কর্তারা রাজি হননি। আপনাদের মনে করিয়ে দিই বোয়িং স্টারলাইনার স্পেসশিপে মহাকাশে গিয়েছিলেন সুনিতারা। হুইসলব্লোয়ারদের প্রশ্ন, বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তির কারণেই কি সবদিক খতিয়ে দেখা হয়নি?

এমনিতেই আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র নিয়ে নানা জটিলতা চলছে। সেটা না হলে এখনই রুশ পরিকাঠামো ব্যবহার করার সুযোগ পেতেন সুনিতারা। এমনকি রাশিয়া হয়তো নতুন মহাকাশযান পাঠিয়ে তাঁদের পৃথিবীতে ফেরাতে উদ্যোগী হতো। এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের পর সেই আশা আর না করাই ভাল। আর কয়েক বছরের মধ্যে মহাকাশ কেন্দ্রটাই অকেজো হয়ে যাবে। ২০২১ সাল থেকে নতুন মহাকাশ কেন্দ্র নিয়ে কথাবার্তা চালাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। তবে ওই পর্যন্তই। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 5 =