টিউমার অপসারণে মস্তিষ্কে ১২ ঘণ্টার মারাথন অপারেশন ফোর্টিস আনন্দপুরের সার্জনদের

ফোর্টিস হাসপাতাল আনন্দাপুরে একটি বিরল ও অত্যন্ত জটিল ১২ ঘণ্টার মস্তিষ্কের এক জটিল অপারেশন  করে ইয়াঙ্গোনের ৪০ বছর বয়সী এক নারী রোগীর থেকে লেবুর আকারের একটি বড় মস্তিষ্কের টিউমার সফলভাবে অপসারণ করা হয়েছে। এই শল্যকর্মের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ফোর্টিস আনন্দপুরের নিউরোসার্জারি ডিরেক্টর ডা. জি.আর. বিজয় কুমার। টিউমরের আকার, অবস্থান এবং মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোর কাছাকাছি জড়িয়ে থাকা অবস্থানের কারণে এই সার্জারি বেশ কঠিন ছিল।

হাসপাতালের তরফ থেকে জানা গেছে, রোগী গত চার মাস ধরে তীব্র মাথাব্যথা, ধীরে ধীরে ভারসাম্যহীনতা ও দৃষ্টি হ্রাসের সমস্যায় ভোগছিলেন। ভর্তি হওয়ার সময় তাঁর বাম চোখে সম্পূর্ণ দৃষ্টি হারিয়ে গিয়েছিল এবং দেহের ডান পাশে দুর্বলতা ছিল। রোগীর বিস্তারিত ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় অত্যন্ত বড় ক্লাইনয়ডাল মেনিনজিওমা (মস্তিষ্কের ভিত্তির কাছে হওয়া ক্যান্সারস টিউমরের একটি ধরন) ধরা পড়ে, যা তার অপটিক নার্ভ, অপটিক ক্যায়জমা (অপটিক নার্ভগুলি যেখানে ক্রস করে) এবং মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে রক্ত সরবরাহকারী প্রধান রক্তনালীগুলিকে চাপ দেয়। এমন টিউমারগুলো চিকিত্সায় অত্যন্ত জটিল হিসেবে পরিচিত, কারণ সামান্য শল্য ত্রুটিও স্থায়ী অন্ধত্ব বা প্যারালাইসিস সৃষ্টি করতে পারে।টিউমারের আকার ও সংকটজনক অবস্থানকে বিবেচনা করে অপারেটিং টিম জটিল ক্রেনিওটমি এবং মাইক্রোসার্জিক্যাল অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এরপর এই অপারেশনটি ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় চলে। টিউমারটি গুরুত্বপূর্ণ মস্তিষ্কের কাঠামোর চারপাশে শক্তভাবে জড়িয়ে ছিল, ফলে সার্জারিটি অত্যন্ত জটিল ও উচ্চঝুঁকিপূর্ণও ছিল। এইসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, সার্জিক্যাল টিম কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুবৈকল্য—যেমন চলার ক্ষমতা, দৃষ্টি বা ভাষা—নষ্ট না করেই সম্পূর্ণ টিউমারটি সফলভাবে অপসারণ করতে সক্ষম হয়। রোগী অপারেশনের পর উল্লেখযোগ্যভাবে সুস্থতার লক্ষণ দেখাচ্ছেন এবং ধীরে ধীরে শক্তি ফিরে পাচ্ছেন।এই অপারেশন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ডঃ জি. আর. বিজয় কুমার, পরিচালক, নিউরোসার্জারি, ফোর্টিস আনন্দপুর, জানান, “এটি আমাদের দেখা অন্যতম জটিল মস্তিষ্কের টিউমার কেস। কারণ, টিউমারটি অত্যন্ত বড় ছিল, প্রায় 7.7 × 4.3 × 5.8 সেমি (ঘনাকারে একটি বড় লেবুর মতো) এবং মস্তিষ্কের এমন এক অঞ্চলে ছিল যা দৃষ্টি এবং মোটর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। টিউমারটি প্রয়োজনীয় রক্তনালী ও স্নায়ুর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল, ফলে অস্ত্রোপচারের প্রতিটি ধাপই অত্যন্ত সংকটময় ছিল। এমন ধরনের অপারেশনে বিরাট নিখুঁততা, ধৈর্য ও দলগত কাজের প্রয়োজন পড়ে। আমরা টিউমারটি সম্পূর্ণভাবে সরাতে পেরেছি এবং রোগীকে সুস্থ হতে দেখায় আমরা অনেকটাই নিশ্চিন্ত।।”

হাসপাতালের দক্ষতা তুলে ধরে ফোর্টিস হাসপাতাল আনন্দপুরের ফ্যাসিলিটি ডিরেক্টর আশিস মুখোপাধ্যায় জানান, “এই সফল অপারেশন আমাদের হাসপাতালে উন্নত প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে অত্যন্ত জটিল নিউরোসার্জিক্যাল কেসগুলি সফলভাবে সামাল দেওয়ার এক জ্বাজ্ল্য প্রমাণ। এই কারণে প্রতিবেশী দেশসহ সার্বিক অঞ্চলের রোগীরা বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য ক্রমশ ফোর্টিস আনন্দাপুরকেই বেছে নিচ্ছেন কারণ এটি পূর্ব ভারতের বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে আমাদের গড়া বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 5 =