রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের গতিবিধির উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে, এবার এমনই অভিযোগ সামনে এল রাজভবন সূত্রে। আর তাতেই যোগ হল রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতে এক নয়া মাত্রা। যদিও কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে, তাদের কাছে এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে এমনই এক ঘটনাকে ঘিরে আপাতত বঙ্গ রাজনীতিতে উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বমুখী।
এদিকে রাজভবন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীর গতিবিধির ওপর সন্দেহ করা হচ্ছে। আর সেই কারণেই আপাতত তাঁদের রাজভবনে যেতে বারণ করা হয়েছে। এরই পাশাপাশি রাজভবন সূত্রে এও জানা যাচ্ছে, এই বিষয়টি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরেরও নজরে আনা হয়েছে। এদিকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে খবর। শুধু তাই নয়, প্রাথমিকভাবে রাজভবন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজ্যপালের অফিস এবং রেসিডেন্সিয়াল অংশের দায়িত্ব কলকাতা পুলিশ যেন সিআরপিএফ র হাতে হস্তান্তর করে। ইতিমধ্যেই বিষয়টি জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে চিঠি করেছে রাজভবন।
রাজভবনের বক্তব্য, রাজভবন চত্বর এবং একেবার নিচের তলা কলকাতা পুলিশের অধীনেই থাকবে। রাজভবনের ভিতরে অনেকগুলো ভাগ রয়েছে। এক তলায় লাইব্রেরি, দোতলায় অফিস, তিন তলায় রাজ্যপালের রেসিডেন্সিয়াল এলাকা। রাজভবনের বক্তব্য, রাজ্যপালের রেসিডেন্সিয়াল আর অফিসিয়াল এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দেওয়া হোক। রাজভবন চত্বর ও অন্যান্য এলাকা কলকাতা পুলিশের নজরেই থাকবে। এখানে বলে রাখা শ্রেয়, এতদিন পর্যন্ত রাজভবনের নিরাপত্তা ও নজরদারির দায়িত্বে ছিলেন কলকাতা পুলিশের কর্মী ও সিআরপিএফ। কিন্তু যে দু’জন পুলিশ কর্মীর গতিবিধি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে, তাঁদের বিষয়েও লালবাজারে জানানো হয়েছে। কলকাতা পুলিশ কমিশনারের কাছে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে রাজভবনের তরফে। লালবাজারের তরফে এখনও পর্যন্ত এর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, জগদীপ ধনখড় পরবর্তী জমানায় সিভি আনন্দ বোস বাংলার সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার শুরুর দিকে রাজ্য-রাজভবন সম্পর্ক বেশ সুমধুর-ই ছিল। রাজ্যপালকে বাংলার সঙ্গে আরও আপন করে নিতে, তাঁর হাতখড়ি দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক ইস্যুতে রাজ্য-রাজভবনের মধ্যে তৈরি হচ্ছে সংঘাতের বাতাবরণ। রাজ্যের সঙ্গে রাজভবনের একের পর এক সংঘাতের মাঝে এবার এই চাঞ্চল্যকর দাবি যে সংঘাতের আবহে নতুন মাত্রা যোগ করল তাতে সন্দেহ নেই।
যে শিক্ষামন্ত্রী এককালে রাজ্যপালের পাশে বসে একসঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন, সেই ব্রাত্য বসুই এখন প্রায়ই বিদ্ধ করছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে। রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে সেই সংঘাতের বাতাবরণ আরও তীব্র হয়েছে। রাজ্যপাল যেভাবে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করেছেন, তা একেবারেই না-পসন্দ রাজ্য সরকারের। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তো বটেই, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতেও দ্বিধা বোধ করেননি। এরপরই ধূপগুড়ির বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের বিধায়ক পদে শপথ গ্রহণ নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা। যে কারণে এখনও শপথ গ্রহণ করা হয়নি বিধায়কের। রাজ্যের সঙ্গে রাজভবনের একের পর সংঘাতের মাঝে এবার এই চাঞ্চল্যকর দাবি যে সংঘাতের আবহে নতুন মাত্রা যোগ করল তাতে সন্দেহ নেই।