২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাওয়ের ডাক দিতে শোনা যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই এই বার্তা তাও এদিন জানান অভিষেক। এই বার্তা শোনার পরই শুভেন্দু সমগ্র ঘটনাকে ‘অসভ্যতা’ বলে চিহ্নিত করেন। পাশাপাশি পাল্টা হিসাবে বিজেপি কী করবেন তা জানান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবারে পঞ্চায়েত ভোটে হিংসায় ক্ষতিগ্রস্ত বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই এক পথসভা থেকে তৃণমূলের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচির পাল্টা দিতে গিয়ে হুঁশিয়ারির সুরে জানান, ‘আজ ডিম-ভাতের উৎসবে অহঙ্কার দেখুন। ৫ অগাস্ট বিজেপির ছোট থেকে বড় নেতাদের বাড়ি নাকি ঘিরবে। নেতাদের বাড়ি বন্ধ থাকবে। বয়স্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেবে না। অভিষেক শুনে রাখুন আপনার বিরুদ্ধে এফআইএর-এর কপি নিয়ে কোর্টে যাচ্ছি। এক জনের বাড়িতে কে ঢুকবে, কে বেরবে, সংবিধানের মৌলিক অধিকার বাবা সাহেব অম্বেদকর দিয়ে গিয়েছেন। একটা বিজেপি কর্মীর কাছে ঘেরাও করে দেখুন, দিল্লিতে সংসদে আপনাদের সাংসদদের ঢুকতে দেব না।’
২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চে প্রথমে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘শান্তিপূর্ণ’ ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা করেন। রাজ্যের সমস্ত প্রান্তে থাকা সব ধরনের বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করতে বলেছিলেন তিনি। তার পর বক্তব্য রাখতে উঠে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কর্মসূচির বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দেন, ‘ঘেরাও বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে করবে। ইলেকশনে যেমন ১০০ মিটার দূরে ক্যাম্প হয়। যাতে কেউ বলতে পারবে না অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এটা একটা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ।’ এই বিষয়েও শাসকদলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি শুভেন্দু। বলেন, ‘পরে সংশোধন করেছেন, একটু ভুল বলে ফেলেছে। আমরা গ্রামে গ্রামে করব না। ব্লকে করব। ১০০ মিটার দূরে করব। যদিও এটাও বলতে পারেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।’
বাংলার রাজনীতির অবনমন নিয়েও দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায় এই বিজেপি নেতাকে। বলেন, ‘এই অসভ্যের রাজনীতি আমরা দেখিনি। ব্যক্তিগত আক্রমণ, বাড়িতে আক্রমণ, গাড়িতে আক্রমণ। এত সরকার এসেছে কিন্তু এ রকম করেনি। সিপিএম ৩৪ বছর মিছিলে হামলা করেছে, বোম মেরেছে। এই কোম্পানি বাড়িতে হামলা করতে বলে। কী সাহস।’
এরই পাশাপাশি মহানগরীর বুকে যখন তৃণমূলের শহিদ সমাবেশের জনজোয়ার এসেছে, তখন ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার হওয়া বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের পাশে থাকতে দেখা যায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী ক্ষেত্র ডায়মন্ড হারবারে আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের দেখতে যান নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। সেখানে গিয়ে তিনি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই আক্রমণ করে রাজ্যের শাসক দলকে বিদ্ধ করে পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার জন্য দায়ী করেন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের। এরই রেশ টেনে এও বলেন, ‘আজ ডায়মন্ড হারবারের বিভিন্ন এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটে পুলিশ ও তৃণমূল বাহিনীর হামলায় ক্ষতবিক্ষত বিজেপি কর্মীদের পরিদর্শনে এসেছি। অনেক এলাকায় ঘুরলাম। অবর্ণনীয় দুঃখ-যন্ত্রণা মানুষ তুলে ধরেছেন। আমি আপনাদের পাশে থাকার বার্তা বিজেপির তরফে দিতে এসেছি।’ এরই পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না নিয়েও আক্রমণ শানান তিনি। পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা নিয়ে তৃণমূলকে দায়ী করে শুভেন্দু বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।’