বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যেতে পারবেন সন্দেশখালিতে। এখনও পর্যন্ত যে চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৪৪ ধারা বলবৎ নেই সেই জায়গাগুলিতে যেতে পারবেন বিজেপি নেতা। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ বিচারপতি কৌশিক চন্দের।
এদিকে আদালত সূত্রে খবর, এদিনের এই মামলার শুনানিতে সন্দেশখালিতে যে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি নেই, সেই জায়গায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী গেলে কী অসুবিধা হবে বা তিনি নির্দিষ্ট কোন জায়গায় যেতে চান, তা নিয়ে জানতে চান বিচারপতি কৌশিক চন্দ। পাশাপাশি, বিএসএফের কাছেও জানতে চাওয়া হয় প্রয়োজন হলে তাঁরা বাড়তি নিরাপত্তা দিতে পারবে কিনা।
প্রসঙ্গত, সন্দেশখালি যেতে চেয়ে শুভেন্দু অধিকারীর দায়ের করা মামলা সোমবার বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে ওঠে। সেখানে বিচারপতির সামনে বিরোধী দলনেতার আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার সওয়াল করেন, ১৪৪ ধারা যে স্থানে ছিল তার আগেই বিরোধী দলনেতাকে আটকে দেওয়া হয়েছে। তার পাল্টা আবার রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়, শুভেন্দু সন্দেশখালির বাসিন্দা নন। সন্দেশখালিতে গেলে কী হতে পারে তার উল্লেখ আছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর রিপোর্টে।
আদালত সূত্রে খবর, এদিনের শুনানিতে শুভেন্দুর আইজীবী রাজদীপ মজুমদার এদিন আদালতে জানান, বিরোধী দলনেতা ১২ ফেব্রুয়ারি সন্দেশখালি যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সায়েন্সসিটির কাছে আটকে দেওয়া হয়। বিরোধী দলনেতা যে কোনও জায়গার বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে, সেখানে যেতে পারেন। যদি ১৪৪ বৎবত হয়ে থাকে সেটা ওই এলাকায় সীমাবদ্ধ হওয়া উচিৎ। কিন্তু ৩০ কিমি আগেই তাঁকে কেন আটকে দেওয়া হয়েছিল এমনই প্রশ্ন এদিন তোলেন তিনি।এরই পাশাপাশি তিনি এও মনে করিয়ে দেন, গত ১৩ ফ্রেব্রুয়ারি যেদিন আদালত নির্দেশ দেয় সেদিন রাতে ফের নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রশাসন। হাইকোর্টের নির্দেশের উপরে গিয়ে নতুন করে ১৪৪ ধারা যোগ করা হয়। সঙ্গে সন্দেশখালির ধর্ষণের ঘটনায় তাঁর আর্জি, আদালত স্বতঃপ্রণেদিত মামলা গ্রহণ করে জানুক কত মহিলা ধর্ষিত হয়ে হয়েছেন।
এদিকে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান, বিরোধী দলনেতা ওই এলাকার বাসিন্দা নন। ফলে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি নিয়ে তাঁর মামলা করার অধিকার নেই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর রিপোর্টে উল্লেখ আছে সন্দেশখালিতে গেলে কী হতে পারে। পাশাপাশি এও জানান, মহিলাদের বিষয়ে যে অভিযোগ করা হচ্ছে সেই অভিযোগ এলাকার বাসিন্দারা করেননি। দুটি আইবি রিপোর্ট বিবেচনা করা হোক। এরপরই শুভেন্দুর আইনজীবী আর্জি জানান, যে চারটি গ্রামপঞ্চায়েতে ১৪৪ ধারা জারি হয়নি সেখানে তাঁর মক্কেলকে যেতে দেওয়া হোক।
এই সওয়াল-জবাবের পর বিচারপতির বক্তব্য, সংবিধান অনুযায়ী যে কোনও সাধারণ নাগরিক ভারতের যে কোনও জায়গায় যেতে পারেন। এটা নিয়ে বাধা হওয়ার কথা নয়। তবে কোন কোন এলাকায় ১৪৪ ধারা নেই সেই সব জায়গাগুলি স্পষ্ট করে জানাতে হবে রাজ্যকে। এই সব এলাকায় যেতে কোনও বাধা নেই শুভেন্দু অধিকারীর।
প্রসঙ্গত, এর আগে দু’বার সন্দেশখালি এলাকায় যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পুলিশের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, ১৪৪ ধারা জারি থাকায় তিনি সেখানে গেলে শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে। ১৪৪ ধারা রদ করার ব্যাপারে হাইকোর্টে পালটা মামলা দায়ের করে সিপিএম। সেই আবেদনের ভিত্তিতে গোটা সন্দেশখালি থেকে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়ার কথা জানায় আদালত। এরপরেই সন্দেশখালির কিছু জায়গায় চিহ্নিত করে ফের ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ। অন্যদিকে,
প্রসঙ্গত, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা নিয়ম মেনেই সন্দেশখালি যান শুভেন্দু। সঙ্গে করে নিয়ে যান মাত্র তিন জন বিজেপি বিধায়ককে। কিন্তু, সেদিনও শুভেন্দুকে আটকে দেওয়া হয়েছিল। সন্দেশখালি যাওয়ার পথে সরবেরিয়ায় তাঁকে আটকে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের দাবি ছিল, সেখানে শুভেন্দু অধিকারী গেলে প্রচুর মানুষ বেরিয়ে আসতে পারে। নতুন করে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। এরপরেই সেখান থেকে ফিরে এসে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই সোমবার হাইকোর্টে জোর সওয়াল জবাব হয়। শুভেন্দুর আইনজীবী এদিন আদালতে জানান, ১৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত আদালতে সন্দেশখালি থেকে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়ার কথা বললেও সম্পূর্ণভাবে সেই নির্দেশ মানা হয়নি। ফের কিছু জায়গায় ১৪৪ ধারা নতুন করে জারি করা হয়েছে। বসিরহাট এসপি অফিস ঘেরাও করা হয়েছিল, পুলিশ কর্মীরা আহত হয়েছিল বলে ১৪৪ ধারা জারি হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ সঠিকভাবে কোনও কারণ দেখাতে পারছে না।