সহপাঠিনীকে প্রেম নিবেদন করতে না পারায় সমকামী তকমা স্বপ্নদীপকে, জানালেন প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারাই

স্বপ্নদীপের মৃত্যু ঘিরে সামনে আসেছে একের পর এক তথ্য। বাংলার প্রথম বর্ষের পাঁচ ছাত্রছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে র‌্যাগিং চলাকালীন এক সহপাঠিনীকে ‘প্রেম নিবেদন’ করতে না পারায় তাঁকে সমকামীর তকমা দেন সিনিয়ররা, যা স্বপ্নদীপ মেনে নিতে পারেননি। পাশাপাশি এও জানা গেছে, সেদিন বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের আরও কয়েকজন ছাত্র এই ঘটনার  প্রত‌্যক্ষদর্শী ছিলেন।

তদন্তকারী আধিকারিকেরা বাংলা বিভাগের পড়ুয়াদের জিজ্ঞাসা করে জানতে পেরেছেন, স্বপ্নদীপ হস্টেলের ‘সিনিয়র’ আবাসিকদের র‌্যাগিংয়ের শিকার। হস্টেলের আবাসিকদের অভিযোগ, গত মঙ্গলবার থেকেই আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন স্বপ্নদীপ। জিজ্ঞাসা করা হলে আবাসিকদের ছাত্রটি জানান, বাংলা বিভাগে ক্লাসেই কয়েকজন ‘সিনিয়র’ তাঁকে র‌্যাগিং শুরু করেন। প্রথম বর্ষেরই এক ছাত্রীকে বলেন প্রেম নিবেদন করতে। এই ঘটনায় ওই ছাত্রীও সংকোচে পড়ে যান। ওই অবস্থায় কিছুতেই সহপাঠিনীকে প্রেম নিবেদন করতে পারছিলেন না স্বপ্নদীপ। তখনই তাঁকে ঘিরে শুরু হয় সিনিয়রদের মশকরা। কয়েকজন স্বপ্নদীপকে ‘সমকামী’ বলতে থাকেন। কয়েকজন বলেন, হস্টেলে গেলে সমকামীদেরই শিকার হতে হবে তাঁকে।

এদিকে এই ঘটনায় ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায় জানান, তাঁকে ফোন করে এক ছাত্র জানান, স্বপ্নদীপকে কেউ বলেছেন, হস্টেলে থাকলে ছাদ থেকে ঝাঁপাতে হয়। হস্টেলে ফিরে আসার পর আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বলতে থাকেন, তিনি সমকামী নন। প্রথমে চারতলার একটি ঘরে গিয়ে অন‌্য সিনিয়র আবাসিকদের এই কথা বলেন। এর পর প্রথমে নিজের ঘরে গিয়ে ফের দুই রুমমেটকে বলেন একই কথা। এর পর ৬৫ নম্বর রুমে গিয়ে দরজা লক করার চেষ্টা করেন। তাঁকে বাধা দিতে গেলে অন‌্যদের সঙ্গে তাঁর ধাক্কাধাক্কি হয়। ফের নিজের ঘর ৬৮ নম্বর রুমে ফিরে আসেন স্বপ্নদীপ। অস্বাভাবিক আচরণ করতে করতে খুলে ফেলেন জামাকাপড়। একটি গামছা পরে বারান্দা দিয়ে দৌড়তে থাকেন। ঘন ঘন বাথরুমে যান। আবার কখনও বা বিবস্ত্র হয়ে সিনিয়রদের বলতে থাকেন, তিনি সমকামী নন। বুধবার রাতে এই ঘটনার সময়ে ওই হস্টেলে আরও কয়েকজন অন‌্যান‌্য বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। অন্যান্য বিভাগের ছাত্রদের অভিযোগ, হস্টেলের ছাত্ররা তাঁকে বিবস্ত্র করে র‌্যাগিং করেন। তাঁকে ওই অবস্থায় বারান্দায় দৌড়তে বলে হয়। তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল কি না, তা নিয়েও তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen + two =