‘দার্জিলিংয়ের তাজ চিয়া কুটির রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’ ও ‘গোরমেই’ হাত মিলিয়ে নিয়ে এল তাদের সাম্প্রতিকতম সম্ভার ‘দ্য মাউন্টেন টেবিল’ – যা পূর্ব হিমালয়ের বৈচিত্র্যময় এবং প্রায় অনাবিষ্কৃত থেকে যাওয়া খাদ্যসম্ভারের এক প্রাণবন্ত প্রদর্শনী।
‘দ্য মাউন্টেন টেবিল’ হল পূর্ব হিমালয়ের প্রাণবন্ত অথচ স্বল্প পরিচিত খাবারগুলিকে খাদ্যপ্রেমীদের সামনে তুলে ধরার একটি প্রয়াস। মূলত এর মধ্যে রয়েছে কালিম্পং, সিকিম, দার্জিলিং, নেপালের কিছু অংশ, চিন এবং ভুটানের বৈচিত্র্যময় খাদ্য়সম্ভার। যেখানে শেফ ঈশিতা রাই দেওয়ান ও শেফ ক্যাথেরিন লিম স্থানীয় উপাদান, আদিবাসীদের ব্যবহার করা জারণ কৌশল, পরম্পরাগত শস্য, বন্য সবুজ শাকসব্জি এবং ঐতিহ্যবাহী রেসিপিগুলির আকর্ষণীয় সমাহার একত্রিত করে রসনার মাধ্যমে পাহাড়ের গল্প সকলের সামনে তুলে ধরতে চান। তাজ চিয়া কুটিরের এই মাউন্টেন টেবিল উদ্যোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নেপালি, তিব্বতি, লেপচা, ভুটিয়া এবং চিনা সম্প্রদায়ের সঙ্গমস্থল কালিম্পং-দার্জিলিং-কার্সিয়াং অঞ্চল।
শেফ ঈশিতার মেনুতে মিলবে ‘ধিনডো’ (মসলাদার দেশী মুরগি), ‘কাঞ্চেম্বা’ (বাজরা ভাজা), স্মোকড মাটন বা শুয়োরের মাংস ‘খুরিকু’ (বাকউইট প্যানকেক), ডাম্পলিং-সহ ‘সিসনু’ (স্টিংগিং নেটেল), ‘গুন্ড্রুক’ (ফার্মেন্টেড সরষে পাতা) এবং সমসাময়িক স্বাদের মিশ্রণে গাঁজানো মুগ ডালের সালাদের মতো পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের ঐতিহ্যবাহী খাবার, যা এখানকার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক মিশ্রণকেই প্রতিফলিত করবে।
এই উপলক্ষে শেফ ঈশিতা রাই দেওয়ান জানান,’আমি শৈশব থেকে আমাদের পাহাড় কালিম্পং এবং দার্জিলিংয়ের যে সব খাবার খেয়ে বড় হয়েছি, সেই সব খাবারই এখানে উপস্থাপন করেছি আর সেই সঙ্গে পূর্ব হিমালয় অঞ্চল জুড়ে খুঁজে বের করেছি তার রন্ধনপ্রণালীর শিকড়। এগুলো সবই সাধারণ রান্নাঘরে জন্ম নেওয়া খাবার- যা পাহাড়ের স্থানীয় উপাদান, সুপ্রাচীন কৌশল এবং বংশানুক্রমে চলে এসেছে। নেপাল, সিকিম, ভুটান এবং তিব্বতের মধ্যে খাদ্য সম্পর্কিত এই সংযোগগুলির সেতুবন্ধনের মাধ্যমে নিছক রান্না করা নয়, রন্ধনসম্পর্কীয় এক জীবন্ত ঐতিহ্যকে সম্মান দেখানোর চেষ্টা করেছি- যা চোখে দেখা, চেখে দেখা ও মনে রাখার যোগ্য।’
এর পাশাপাশি শেফ ক্যাথরিন কর্ডিসেপস মাশরুম, ওসমান্থাস ফুল, ফার্মেন্টেড সরিষার কন্দ (ঝাই)-এর মতো উপাদানের মাধ্যমে এই অঞ্চলের খাদ্যপদ্ধতির উপরে চিনা খাবার এবং উপাদানের সূক্ষ্ম প্রভাব তুলে ধরেন- যা থেকে বোঝা যায় অভিবাসন এবং ইতিহাস কী ভাবে এই অঞ্চলের রন্ধন প্রণালীতে এক অনন্য ঐতিহ্য ও স্বতন্ত্র রূপ দিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে শেফ ক্যাথেরিন লিম বলেন,’আমি আনন্দিত যে পূর্ব হিমালয়ের রন্ধনশৈলীর সঙ্গে মিশে থাকা চৈনিক সূত্র এখানে সকলের সামনে তুলে ধরতে পেরেছি। ‘এইট ট্রেজার স্যুপ উইথ কর্ডিসেপস মাশরুম’, ‘ইয়াং টাউ ফু’ (স্টাফড টোফু), ‘হাক্কা ইয়াম মিয়েন’ (মাংস বা সবজি দিয়ে নুডলস) এবং হিমালয়ান পেরিলা বীজ দিয়ে তৈরি ‘চাইনিজ কনজি’র মতো খাবার এই উৎসবে উপস্থাপন করতে পেরে আমি উচ্ছ্বসিত।’
এই অনন্য আয়োজন কালিম্পংয়ের শেফ ঈশিতা রাই দেওয়ান এবং কলকাতার শেফ ক্যাথেরিন লিমের ব্যতিক্রমী প্রতিভাকে একত্রিত করে, যাঁরা এখানে স্থানীয় উপাদান, কালজয়ী জারণ কৌশল, পরম্পরাগত শস্য, বুনো সবুজ শাকসব্জি এবং ঐতিহ্যবাহী রেসিপির একটি আকর্ষণীয় সমাহার শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করবেন। তাঁদের প্রতিটি খাবারই পাহাড়ের গল্প বলে,যা এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে।
এই উপলক্ষে দার্জিলিং-এর তাজ চিয়া কুটির রিসর্ট অ্যান্ড স্পা-এর জেনারেল ম্যানেজার জিতেন্দ্র সিং লোটে জানান, ‘দুই প্রতিভাবান রন্ধনশিল্পী হাতে তৈরি পূর্ব হিমালয়ের কিছু অনন্য রান্না অতিথিদের সামনে তুলে ধরতে ‘দ্য মাউন্টেন টেবিল’ আমাদের এক বিনীত প্রচেষ্টা। ঐতিহাসিক মকাইবাড়ি চা বাগানের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এবং শান্ত পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে – এ এক অবিস্মরণীয় রন্ধনসম্পর্কীয় অভিজ্ঞতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়।’
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, মাউন্টেন টেবিল ২২শে মে থেকে ২৮শে মে ২০২৫ পর্যন্ত বিখ্যাত রেস্তোঁর ‘চিয়া বারান্দা’য় পাওয়া যাবে এবং এটি দিনভর উপলব্ধ। মধ্যাহ্নভোজে ও নৈশাহার উভয় সময়েই উপলব্ধ এই সেট মেনুগুলির দাম পড়বে নিরামিষভোজীদের জন্য ৩০০০ টাকা ও প্রদেয় কর এবং আমিষ মেনুর জন্য ৩৫০০ টাকা এবং প্রদেয় কর।