তৃণমূলের প্রতি একরাশ অভিমান-ক্ষোভ উগরে দিয়ে দল ছাড়লেন তাপস রায়। তাপসবাবুর বক্তব্য, তৃণমূল কংগ্রেস তাঁর জন্য নয়। তাঁর কথায়, এখন তিনি মুক্ত বিহঙ্গ।এদিকে তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক গতিবিধি কী হতে চলেছে, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। বরানগরের বর্ষীয়ান এই তৃণমূল বিধায়ক বিধানসভায় স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে পৌঁছে দেন তাঁর ইস্তফা পত্রও। এদিকে সূত্রে খবর, সোমবার বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতেও দেখা যায় তাঁকে। একই সঙ্গে বলেন, ইডি অভিযানের পর শেখ শাহজাহানের কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় উল্লেখ করলেও তাঁর নাম টুকুও বলেননি। তিনি আহত।
তবে এটা ভুললে চলবে না তৃণমূলের পুরনো সৈনিক তাপস রায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘদিনের সঙ্গী। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল যোগদান। এরপর থেকে কোনওদিন দল বদল করেননি। তবে বিবিধ বিষয় নিয়ে ইদানিং তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল তাপস রায়ের। উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতি পদ থেকে তাপসকে সরিয়ে দিতেই হতাশা বাড়ে তাঁর অনুগামী শিবিরে। শুধু তাই নয়, বাড়িতে ইডি হানার ঘটনায় একরাশ ক্ষোভ উগরে দিতেও দেখা যায় সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। সেই সময় প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘আমার বাড়িতে ইডি আসার পিছনে হাত সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।’ এরপর থেকে খানিকটা চুপচাপ থাকতেই দেখা যায় তাঁকে।
এদিকে সূত্রে এ খবর মিলছে, সোমবার সকালে আচমকাই তাপস রায়ের বাড়িতে কুণাল ঘোষ, ব্রাত্য বসুর উপস্থিতি ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়। তখনই কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে দল ছাড়তে পারেন তিনি। তবে এ ব্য়াপারে মুখ খোলা হয়নি তৃণমূলের তরফ থেকে। এরপর এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করেই দলের বিরুদ্ধেই উষ্মা প্রকাশ করেন তাপস।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে তাপস রায় জানান, ‘এত দুর্নীতি, সন্দেশখালি আমাকে তাড়না দিচ্ছে। এই প্রথম বাজেট অধিবেশন ঠিক করে করলাম না। ২৩ -২ ৪ বছর তৃণমূলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। আমায় যখন যা বলেছে তা করেছি। কিন্তু আমার বাড়িতে একটি ঘটনা ঘটে যায় গত ১২ জানুয়ারি। যদিও মুখ্য বিষয় দুর্নীতি এবং সন্দেশখালি। তারপরের ঘটনা আমার বাড়িতে ইডি অভিযান। আজ ৫২ দিন দল আমার পাশে দাঁড়ায়নি। কেউ ফোন করে আমার পরিরবারের কাউকে সমবেদনা জানায়নি। অনেকে আমায় বলেছে, এর পেছনে দলেরই কেউ কেউ আছে। যখন আমার বাড়িতে ইডি রেড চলছে, তখন তাদের মধ্যে উল্লাস দেখা যায়। ব্রাত্য – কুণাল এসেছিল। শুনলাম আমায় কুণাল বোঝাতে এসেছিল, তখনই ওর কাছে সুব্রত বক্সির শোকজ নোটিশ এসেছে। এই হচ্ছে দল। আমি আহত, অঘাতপ্রাপ্ত।’
প্রসঙ্গত, বিগত কিছুদিন ধরেই দলের কর্মসূচিতে বিশেষ দেখা যাচ্ছিল না তাঁকে। এমনকী নিজের বিধানসভা এলাকা বরানগরেও যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এদিম বরানগর এাকার কাউন্সিলররা সকালে তাঁর বাড়িতে যান। একপ্রকার দল না ছাড়ার জন্য় অনুরোধ উপরোধও করতে দেখা যায় তাঁদের। যদিও তাঁদের অনুরোধেও নিজের অবস্থান থেকে সরেননি তাপস রায়। এমনকী তাপস রায়কে বোঝাতে এদিন তাঁর বাড়িতে যান ব্রাত্য বসু ও কুণাল ঘোষ। তাঁরাও তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। প্রায় ২ ঘণ্টা বৈঠক হয় তাঁদের মধ্যে। কিন্তু তাতেও নিজের অবস্থান বদলাননি তাপস। পরে কুণাল ঘোষকে এই প্রসঙ্গে প্রশ্নব করা হলে তিনি, ‘বলেন আমি দলের কর্মী, তাপসদা দলের নেতা, দাদা থাকুন, ভাই হিসেবে সেটাই চাইব।’
এদিকে বিধায়ক পদ ছাড়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্ষীয়ান রাজনীতিকের এই পদক্ষেপকে ভাল দৃষ্টান্ত বলেই মনে করছেন স্পিকার। তবে তাপসবাবু এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায়, তাঁর যে খারাপ লেগেছে, সে কথাও গোপন করেননি স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে তাপস রায়ের পদত্যাগপত্র জমা নেওয়ার ঘটনায় স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘তাপস রায় পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে গিয়েছেন। এরপর পরীক্ষা করা হবে পদত্যাগ পত্র। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় তাপস রায়ের পদত্যাগ পত্র গ্রহণ নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন স্পিকার।’