২০২৩ সালে রাজ্যে মোট ১৭ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন কালাজ্বরে। তবে আক্রান্তদের একজনও মারা যাননি। কিন্তু এ বছর প্রথম ছ’মাসেই আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের আক্রান্তের সংখ্যাকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে। এদিকে ২০২৪ -এ জুন মাস পর্যন্ত রাজ্যে ১৬ জনের রিপোর্ট পজিটিভ, কালাজ্বরে মৃতের সংখ্যা দুই। প্রশাসন সূত্রে জানা দিয়েছে, মৃত দু’জনের একজন বীরভূম জেলার মুরারই এবং অন্য জন পুরুলিয়া জেলার। রাজ্যে তিন বছর পর ফের কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যু স্বভাবতই উদ্বেগ বাড়িয়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। তবেবিশেষজ্ঞদের কাছে এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি স্পষ্ট নয় যে, রোগের প্রকোপ এ বার কেন বেশি। আর সেই কারণেই এই কারণ খুঁজে বের করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যেমন কমিটি তৈরি হওয়ার পাশাপাশি রোগের মোকাবিলায় একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর।
এদিকে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, যে জেলাগুলোয় কালাজ্বরের প্রকোপ এখনও রয়েছে, সেগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে হটস্পট হিসেবে। ওই জেলাগুলো হল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, দার্জিলিং, কালিম্পং, মালদা, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান ও পশ্চিম বর্ধমান। স্বাস্থ্য ভবনের টার্গেট, ওই জেলাগুলোয় প্রতি ১০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে একজনে নিয়ে আসা। এর পাশাপাশি আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে এবং রোগীদের চিহ্নিত করার জন্য যা যা করণীয় তাও মেনে চলতে বলা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, সচেতনতা বাড়াতে তৈরি করা হচ্ছে তথ্যচিত্র। চিকিৎসকদের বক্তব্য, রক্তের বিশেষ ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে কালাজ্বর হয়েছে কি না তা জানা যায়। তবে সময় মতো চিকিৎসা শুরু না-হলে মুত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সে জন্য কালাজ্বরে আক্রান্তকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে।
সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে যে, কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল এবং স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনকে নোডাল সেন্টার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কালাজ্বর নির্মূল করতে রোগের বাহক বেলেমাছি বা স্যান্ড ফ্লাই নিধন করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মশার এক-চতুর্থাংশ সাইজে়র এই পতঙ্গ লেসম্যানিয়া পরজীবীর সংক্রমণ ঘটালে কালাজ্বর হয়।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, মূলত মাটির বা পাকা বাড়ির বিভিন্ন ফাটলে বেলেমাছির বসবাস। বেলেমাছির বংশবিস্তার ঠেকাতে রাজ্যে কালাজ্বর প্রবণ ১২০টি ব্লকে কীটনাশক ছড়ানো হচ্ছে নিয়মিত। পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘মশার মতো স্যান্ড ফ্লাই উড়তে পারে না। সেদিক থেকে মানুষই এই রোগের প্রধান বাহক। সুতরাং, রোগের প্রকোপ রুখতে আক্রান্ত এলাকার মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি র্যাপিড টেস্ট-ও জরুরি।’ সংক্রামক রোগ-বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় মনে করেন, ‘ভারতে মূলত মানুষেরই কালাজ্বর হয়। তবে পড়শি কিছু দেশে পশুদের মধ্যেও এই রোগ দেখা যায়। ফলে, এটা নিয়ে আরও গবেষণা জরুরি। তা না-হলে রোগটাকে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়।’
একইসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগ জানান, ‘আক্রান্তদের সবাইকে আমরা চিকিৎসার আওতায় আনতে চাইছি। সে জন্য যা যা করণীয়, সবই করা হচ্ছে। সবার কাছে অনুরোধ, কালাজ্বরের উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।’