স্কুলশিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভরসা রাজ্যেরই বরাদ্দ

সমগ্র শিক্ষা মিশনে (এসএসএম) কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ বন্ধ। ফলে খুদে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল তো বটেই, সেই সঙ্গে স্কুলশিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখন ভরসা বলতে রাজ্যের বরাদ্দ অর্থ। গত ৮ মাসে রাজ্যের দেওয়া ৪৬৮ কোটি টাকা দিয়েই সমগ্র শিক্ষা মিশন প্রকল্প চলছে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, দেশের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো এবং জম্মু-কাশ্মীর ছাড়া অন্য সব রাজ্যেই সমগ্র শিক্ষা অভিযান প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্যের বরাদ্দ অর্থের অনুপাত ৬০:৪০। কিন্তু গত ৮ মাস ধরে কেন্দ্র নিজের ভাগের ৬০ শতাংশ টাকা না-দেওয়ায় রাজ্যের বুনিয়াদি স্তরের শিক্ষা পরিকাঠামোয় সঙ্কট তৈরি হয়েছে। গত বছর অক্টোবর মাস থেকে প্রাইম মিনিস্টার্স স্কুল্‌স ফর রাইজিং ইন্ডিয়া (পিএমশ্রী) প্রকল্পে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য মউ সই না-করায় দিল্লি বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে। সমগ্র শিক্ষা মিশন প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছ থেকে রাজ্য পায় ২ হাজার কোটি টাকা। যা নিয়ে চিঠিও দিয়েছে নবান্ন। কিন্তু এসএসএম-এর টাকায় স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়ন অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষ তৈরি থেকে শুরু করে অতিরিক্ত ক্লাসঘরের বন্দোবস্ত, স্কুল মেরামত, পাঁচিল দেওয়া, শৌচাগার নির্মাণ, পানীয় জল সরবরাহ-এর মতো নানা ধরনের কাজ হয়। এছাড়াও, রাজ্য জুড়ে স্কুল, শিশু ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে কর্মরত পার্শ্বশিক্ষক, শিক্ষাবন্ধু, শিক্ষা সহায়ক ও সম্প্রসারক, স্পেশাল এডুকেটর-সহ চুক্তি-ভিত্তিক লক্ষাধিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন বা ভাতাও মেটানো হয় এসএসএম প্রকল্পের টাকায়।

ফলে সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ সমস্যা তৈরি হয়েছে। এমনকী লোকসভা ভোট ঘোষণা হওয়ার আগে, রাজ্য প্রশাসন ১ মার্চ সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মরত চুক্তি-ভিত্তিক গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মীদের বেতন বাড়ানোর ঘোষণা করেছিল। অন্যান্য সরকারি দফতর ও সরকারের অধীন স্বশাসিত সংস্থায় ওই ঘোষণা মতো কাজ হলেও স্কুলশিক্ষা দফতর ও তার অধীন বিভিন্ন স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্টেট কাউন্সিল ফর এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এসসিইআরটি), বিকাশ ভবন, বিভিন্ন জেলা স্কুল পরিদর্শক অফিসে কর্মরতদের চুক্তি-ভিত্তিক কর্মীদের বেতন বা ভাতা বাড়ানোর ব্যাপারটা থমকে আছে। এরই জেরে কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক অনিশ্চয়তার বাতাবরণ। এসএসএম প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ থাকায় সব চেয়ে উদ্বেগে বিকাশ ভবনের সংশ্লিষ্ট কর্মী ও আধিকারিকরা। তাঁরা দফায় দফায় সমগ্র শিক্ষা মিশন দপ্তরে বেতন সংক্রান্ত দাবিসনদও জমা দিয়েছেন। ফলে, এক্ষেত্রে মিড-ডে মিলের মতোই লক্ষাধিক কর্মীর বেতন ও ভাতা খাতে ভরসা বলতে রাজ্যের ৪০ ভাগ অর্থই। রাজ্যের শাসক দলের অভিযোগ, কেন্দ্র বার বার পিএমশ্রী প্রকল্পের সঙ্গে স্কুলশিক্ষার অন্যান্য প্রকল্পকে জুড়ে দিয়েছে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সম্প্রতি বলেন, ‘এসএসএম প্রকল্পে কেন্দ্রের যে বরাদ্দ বকেয়া, সেটা অর্থ মন্ত্রক ছাড়লেও শিক্ষা মন্ত্রক আটকে রেখে দিয়েছে।’
পিএমশ্রী প্রকল্পের স্কুলগুলো কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে চলবে। যদিও প্রকল্পের ৪০ শতাংশ ব্যয় রাজ্যকেই বহন করতে হবে। সে জন্য বিভিন্ন রাজ্য বেঁকে বসেছে। কেরালার কয়েকশো কোটি টাকাও কেন্দ্র আটকে রেখেছে। কেরালা সম্প্রতি পিএমশ্রী প্রকল্প মেনে নিলেও বকেয়া টাকা এখনও পায়নি বলেই সূত্রের খবর।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − six =