প্রাথমিকের নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলায় পর্ষদকে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করতে দেখা গেল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। কারণ, এক টেট প্রার্থীর ইন্টারভিউ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও, কেন পর্ষদের তরফ থেকে তা নেওযা হয়নি, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এরপরই তিনি সরাসরি প্রাথমিক পর্ষদ সভাপতির বেতন বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। বেতন বন্ধের এই নির্দেশ শুনে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একথা বলার পরেই আদালত চত্বরে ভেঙে পড়েন প্রাথমিক পর্ষদ সভাপতি৷ প্রসঙ্গত, সোমবার একটি মামলার শুনানি চলাকালীন প্রাথমিক পর্ষদ সভাপতি ডঃ গৌতম পালকে আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল৷ তিনি হাজির হতেই ক্ষুব্ধ বিচারপতি জানান, যতদিন পর্যন্ত না আদালতের পূর্বতন নির্দেশ কার্যকর করা হচ্ছে, ততদিন তাঁর বেতন বন্ধ রাখা হবে৷ এরপরই প্রায় জোড় হাত করে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সামনে বোর্ড সভাপতি ড. গৌতম পাল বলেন, ‘বোর্ড থেকে কোনও বেতন পাইনা। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেতন পাই। মা অসুস্থ। অন্য কোনও আয়ের উৎস নেই আমার। প্লিজ বেতন বন্ধ করবেন না। একক বেঞ্চের নির্দেশ ৭ দিনেই কার্যকর করব। আমার কোনও ভুল হলে মাফ করে দেবেন।’
এক মামলার ভিত্তিতে গত ৭ জুন এক টেট প্রার্থীর ইন্টারভিউ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই ইন্টারভিউ এখনও পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। আদালতের নির্দেশ না মানায় পর্ষদকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দেন বিচারপতি। কিন্তু পর্ষদ দাবি করেছিল, ডিভিশন বেঞ্চে মামলা হয়েছে। তাই ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে না। এদিকে সোমবার বিচারপতি জানতে পারেন, এদিনই বিকেলে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছে পর্ষদ। তাহলে আগে কেন ডিভিশন বেঞ্চের কথা বলা হল তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, সোমবারই পর্ষদ সভাপতি গৌতম পালকে হাজিরা দিতেও বলা হয়েছিল। আপিলের নথি নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল তাঁকে। তিনি হাজিরা দিলে, তাঁর বেতন বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এরপরেই সোমবার সকালে সিঙ্গেল বেঞ্চের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করার অনুমতি নেয় প্রাথমিক বোর্ড। আর তাতেই ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়৷পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে উপস্থিত হওয়া মাত্র পর্ষদ সভাপতির বেতন বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দেন বিচারপতি। তখনই পর্ষদ সভাপতি জানান, বোর্ডের ভুল হয়ে গেছে। এরপরই বোর্ডকে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য ৫ মিনিট সময় বেঁধে দেন বিচারপতি৷ পাঁচ মিনিট পরে এজলাসে এসে পর্ষদ সভাপতি আশ্বাস দেন, ডিভিশন বেঞ্চ থেকে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে৷ সেই শর্তে বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েও প্রত্যাহার করে নেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।