স্টুডেন্টদের ‘হাউসস্টাফশিপ’–এর মেয়াদকাল খেয়াল–খুশি মতো বাড়িয়ে দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগকে সামনে রেখে সন্দীপের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় চার্জশিট জমা দিতে চলেছে সিবিআই।আগামী সোমবার ২ ডিসেম্বর, গ্রেপ্তারের পরে ৯০ দিন পূর্ণ হবে। তার আগেই জমা পড়তে চলেছে এই চার্জশিট।
আগামী দু–একদিনের মধ্যে আলিপুরের বিশেষ আদালতে পেশ করা হবে এই চার্জশিট। সিবিআই সূত্রে খবর, তাতে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ-ই অগ্রাধিকার পেতে চলেছে। সেখানে উল্লেখ করা হবে কোটি কোটি টাকার টেন্ডার দুর্নীতির বিষয়। এটাই হবে এই মামলার প্রথম চার্জশিট। এই চার্জশিটে সন্দীপের পাশাপাশি তাঁর তিন সাগরেদ বিপ্লব সিংহ, সুমন হাজরা ও আফসার আলি খানেরও নাম থাকতে চলেছে বলে সূত্রের খবর। ১২০ জন সাক্ষীর উল্লেখ থাকবে সেখানে। সঙ্গে থাকবে ৪৬০টি গুরুত্বপূর্ণ নথিও।
তদন্তকারীদের অভিযোগ, আরজি করের অধ্যক্ষ থাকাকালীন ‘তুঘলকি’ শাসন চালাতেন সন্দীপ। সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এ ভাবে হাউসস্টাফশিপের সময়ও তিনি বাড়িয়েছেন বলে তদন্তকারীদের দাবি। সাধারণত হাউসস্টাফশিপের মেয়াদ থাকে এক বছর। তার জন্য প্রতি মাসে পাওয়া যায় ৫০ হাজার টাকা। তদন্তকারীদের দাবি, সেই মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা আরও কয়েক মাস প্রতি মাসে ওই ৫০ হাজার টাকা করে পেতেন। অভিযোগ, যা গুনতে হতো সরকারকে। এর বদলে ওই ঘনিষ্ঠদের দিয়ে দিনের পর দিন সন্দীপ নিজের বেআইনি কাজ করাতেন বলেও দাবি তদন্তকারীদের।
প্রসঙ্গত, আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের পরে সেখানকার মেডিক্যাল সরঞ্জাম কেনার নামে টেন্ডার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন সময়ে মেডিক্যাল সরঞ্জাম কেনার নামে ঘনিষ্ঠদের বেআইনি ভাবে টেন্ডার পাইয়ে দিয়েছিলেন সন্দীপ। সরকারি নিয়ম না–মেনে, বছরের পর বছর সেই টেন্ডার দুর্নীতি কী ভাবে চলেছে, তার বিস্তারিত তথ্য থাকতে পারে এই চার্জশিটে। এ ছাড়াও, হাসপাতালে বেআইনি পার্কিং বা ক্যাফের জন্য সন্দীপ তাঁর ঘনিষ্ঠ, অ্যাডিশানাল সিকিউরিটি কাম বাউন্সার আফসারকে টেন্ডার পাইয়ে দিয়েছিলেন বলেও চার্জশিটে উল্লেখ থাকতে পারে। সিবিআইয়ের অভিযোগ, ওই পার্কিং ও ক্যাফে থেকে আফসার কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছিলেন বলেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আফসার নাকি ৪০ লক্ষ টাকার গাড়ি চড়ে ঘুরতেন বলেও তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর।
তদন্তকারীদের দাবি, সন্দীপের শাগরেদ বিপ্লব ‘মা তারা ট্রের্ডাস’ নামে একটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নিয়ম ভেঙে বিপ্লবের মতো সাধারণ এক ভেন্ডারকে বেআইনি ভাবে মেডিক্যাল সরঞ্জাম সরবরাহের টেন্ডার পাইয়ে দিতেন সন্দীপ। সেই অভিযোগে গ্রেপ্তার হন বিপ্লব। সন্দীপ–ঘনিষ্ঠ অভিযুক্ত সুমনেরও হাওড়ায় মেডিক্যাল সরঞ্জামের দোকান রয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, সন্দীপ সেখান থেকেও বেআইনি ভাবে মেডিক্যাল সরঞ্জাম কিনতেন।
প্রসঙ্গত, ১৫ অগাস্ট নোটিস দিয়ে আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সন্দীপকে তলব করা হয়েছিল সিজিও কমপ্লেক্সে, সিবিআইয়ের স্পেশাল ক্রাইম ব্র্যাঞ্চে। কিন্তু সে দিন তিনি হাজিরা না–দিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। ১৬ অগষ্ট সিবিআই কার্যত রাস্তা থেকে সন্দীপকে পাকড়াও করে টানা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পরে আরজি কর হাসপাতালের দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার অফিসারেরা সন্দীপকে সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে গ্রেপ্তার করে।