‘আইন-শৃঙ্খলা সামলাতেই পারেনি রাজ্য। নাগরিকদের সুরক্ষা দিতেও ব্যর্থ হয়েছে।‘ পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যে মামলা করেছিলেন সেই মামলার শুনানিতে এমনই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করতে দেখা গেল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমকে। ভোটে হিংসার ঘটনার অভিযোগ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মামলা করেন আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালও। গণনার দিন রাতে যে ভাঙড়ে যে ঘটনা ঘটেছে, পুলিশ যেভাবে আক্রান্ত হয়েছে, তা নিয়েও এদিন প্রশ্নও ওঠে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের বেঞ্চে । এদিনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি জানতে চান, মনোনয়ন পর্বে অশান্তি, ভোটে অশান্তি, গণনাতেও অশান্তি। কেন সামলাতে পারল না রাজ্য তা নিয়েও। এই প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এতে আদালত অবাক হয়েছে।‘ রাজ্যের ভূমিকা প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, রাজ্য যদি নিজের নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে না পারে, তাহলে সেই বিষয়টা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’ এরই রেশ ধরে বুধবার শুনানির শুরুতেই সেই পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। বলেন, ‘জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছেন পুলিশ, কেন হচ্ছে এসব? কেন মানুষ মার খাচ্ছেন?’
প্রসঙ্গত, আদালত নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও কেন সঠিকভাবে বাহিনী মোতায়েন করা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেই আদালত অবমাননার মামলা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই মামলায় বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘লার্জ স্কেল ভায়োলেন্স হয়েছে, এটা মানতেই হবে।’ এদিকে প্রথমে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়াই ভোট করার কথা বলেছিল নির্বাচন কমিশন। পরে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দেয়। অভিযোগ ওঠে, ভোটের সময় অনেক জায়গাতেই মোতায়েন ছিল না কেন্দ্রীয় বাহিনী। এই প্রসঙ্গেই প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘শুরুতেই তো দেরি হয়েছে।’ নির্দেশ দেওয়ার পরও কাজ না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে বাহিনীকে ব্যবহার না করে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগও উঠেছে কমিশনের বিরুদ্ধে। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, কেন্দ্র ও রাজ্যকে এক ছাতার তলায় কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই ছাতা ভাগ করতে চায়নি কমিশন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে আইনজীবী যিষ্ণু সাহা জানান, নোডাল অফিসারের উপর দায়িত্ব ছিল। এরপরই প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন, নির্দেশ না মেনে শীর্ষ আদালতে চলে গিয়েছিল কমিশন। আগে নির্দেশ মানা উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি। কমিশনকে প্রধান বিচারপতি বলেন, সিআরপিএফ রিপোর্টে সিরিয়াস অভিযোগ এসেছে। প্রতিটা লাইন পড়ুন। বেশ কিছু লাইন আপনাদের জন্য খুব খারাপ। আর এখানেই প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ইচ্ছাকৃত অসহযোগিতার অভিযোগ যে স্পষ্ট।
এদিকে আরও ১০ দিন রাজ্যে বাহিনী মোতায়েন থাকার কথা। সে ক্ষেত্রে কী পরিকল্পনা হবে, তা আইজি বিএসএফ-কে ঠিক করতে বলেন বিচারপতি। এই প্রসঙ্গে তিনি এও জানান, ‘ডিজি, কমিশনার সবাই সহযোগিতা না করে রাস্তা চিনবেন কীভাবে? তাই সহযোগিতার কথা বলা হচ্ছে। বড়মাপের হিংসার ঘটনা যে ঘটেছে, তা মানতে হবে।’ একইসঙ্গে বিচারপতি এও বলেন, ‘আমরা আশা করব কমিশনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে তা নিয়ে সঠিক জবাব দেওয়া হবে।‘