বেআইনি ভাবে জলাশয় ভরাটের অভিযোগ কলকাতা পুরসভা এলাকায় নতুন নয় ৷ এমন ঘটনা আকছার ঘটেই চলে। এই জলাশয় ভরাটের ঘটনা এমন কিছু জায়গায় এতো বেশি সংখ্যায় হয়েছে যে কিছু এলাকাকে রেড জোন হিসেবেও চিহ্নিত করেছে কলকাতার পুর–প্রশাসন৷ এদিকে এখন প্রোমোটারদের নজরে মালিকানাহীন বহু জলাশয়। এই। জলাশয় ভরাটের অভিযোগ উঠলেই মালিক বা প্রমোটারকে নোটিশ দেয় পুরনিগম ৷ কিন্তু মালিকানাহীন জলাশয়ের ক্ষেত্রে কী করা হবে তা নিয়েও তৈরি হয়েছে এক বড় প্রশ্নচিহ্ন।
তবে এই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ করতে দেখা গেল কলকাতা পুরসভাকে। শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা দাবিহীন জলাশয়গুলো অর্থাৎ যে জলাশয়ে মালিকের কোনও খোঁজ নেই, তেমন জলাশয়গুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। সম্প্রতি মেয়র পারিষদ বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে খবর কলকাতা পুরসভা সূত্রে। আর এখানেই কলকাতা পুরসভার আশা, এর ফলে জমি হাঙর হাত থেকে বাঁচানো যাবে শহরের জলাশয়গুলি।
উল্লেখ্য, এই জলাশয় ভরাটের ঘটনা শুরু হয়েছে সেই বাম জমানা থেকে। যা তৃণমূল জমানাতেও অব্যাহত। প্রোমোটারদের থাবায় কলকাতা শহর থেকে ধীরে ধীরে উধাও হয়েছে একের পর এক জলাশয়। সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। কমতে কমতে জলাশয়ের সংখ্যা নিতান্তই কম। আর খুব স্বাভাবিক ভাবেই এর প্রভাব পড়েছে শহরের পরিবেশে। যা এই মুহূর্তে হাড়ে–হাড়ে টের পাচ্ছেন শহরের বাসিন্দা। ।
এই প্রসঙ্গেই কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক জানান, ‘পুকুর ভরাটের অভিযোগ এলেই আমরা মালিক বা প্রোমোটারকে নোটিশ দিয়ে থাকি। পরিস্থিতি অনুসারে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।’ এমনকীমেয়র ফিরহাদ হাকিম নিজে রাস্তায় রাবিশ ভর্তি লরি আটকেছেন। আর তা নিয়ে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনও কম করেননি।
এদিকে শহরে একাধিক বড় বড় জলাশয়ের হাল ফেরানো চলছে । কেন্দ্রীয় বা রাজ্যের প্রকল্পের টাকায় চলছে সংস্কার, পলি ও পানা পরিষ্কার করে সৌন্দর্যায়ন কাজ । এই জলাশয়গুলির দরপত্র ডেকে পরবর্তী সময় মাছ চাষে জন্য সমবায় সমিতিগুলো বা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোকে দেওয়া হবে। কারণ, জলাশয় রক্ষা পেলে এলাকার দূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ থাকে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে। জমা জলের সমস্যা অনেকটা কম হবে। জলজ বাস্তুতন্ত্র রক্ষা পাবে । গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা থাকায় বাড়বে সবুজ ।
এবার কলকাতা পুরনিগমের বাড়তি নজর দাবিহীন জলাশয়ের দিকে । পুর কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে দাবিহীন জলাশয়গুলো বেশি করে লক্ষ্যবস্তু করে তুলছে শহরের জমি লুটেরারা । ধীরে ধীরে ভরাট করে ফেলছে জলাশয় । তাই কলকাতা পুরসভার পরিবেশ বিভাগ সেই সমস্ত জলাশয়গুলো রক্ষা করতে তৎপর হচ্ছে। সম্প্রতি মেয়র পারিষদ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, শহরে দাবিহীন জলাশয় চিহ্নিত করবে বরো আধিকারিকরা। সেগুলো সংস্কার, সংরক্ষণ করা হবে । মাছ চাষ করা হবে। যাতে ভরাট না হয় । কর্পোরেশন ইতিমধ্যেই জোকা, টালিগঞ্জ, কসবা, বেহালা, যাদবপুর, ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস রেড জোন চিহ্নিত করেছে জলাশয় ভরাটকে ভিত্তি করে । সেখানেই প্রথম বাড়তি নজর দেবে পুর কর্তৃপক্ষ ।
কর্পোরেশনের ওই আধিকারিক বলেন, ‘অনেক জলা আছে যার মালিকের খোঁজ নেই । সেই সব ক্ষেত্রে একটু অসুবিধা হয়।তাই এগুলো কর্পোরেশন নিজের হাতে নিয়ন্ত্রণ নিলে আর সমস্যা হবে না ।’